পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের আন্ডারগ্রাউন্ডের গোডাউনে রাখা বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল সরানো এখনও শেষ হয়নি। গতকাল ভোর থেকে ২৩টি ট্রাকে করে কেমিক্যাল সরানোর কাজ করে ৪০ জন শ্রমিক। ট্রাকে করে এসব কেমিক্যাল কেরানীগঞ্জে নেয়া হলেও পুরান ঢাকার অন্য কোনো গোডাউন থেকে গতকাল পর্যন্ত কেমিক্যাল সরানোর তথ্য পাওয়া যায়নি। অগ্নিকান্ডের চারদিন পর গতকাল রোববার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াহেদ ম্যানশন ও আশপাশের ভবন ছেয়ে গেছে শোকের ব্যানার আর পোস্টারে।
অন্যদিকে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যাল বিস্ফোরণ থেকে। আগুনের তীব্রতার কারণে মুহূর্তেই আগুন ৩-৪টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গাড়িগুলোর সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াহেদ ম্যানশন ও চুড়িহাট্টায় শাহী মসজিদ সংলগ্ন প্রবেশের চার মুখেই উৎসুক জনতার ভিড় সারাদিনই লেগে ছিল। পুুলিশের ব্যারিকেড থাকার পরেও মানুষের ঢল নেমেছে এই পথে। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন পোড়া ভবনগুলোর দিকে। ভবনটি অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা সাধারণ মানুষকে বার বার সরিয়ে দিলেও কোনো না কোনোভাবে তারা ভেতরে ঢুকে পড়ছেন।
ফায়ার সার্ভিসসহ দু’টি তদন্ত কমিটি ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে কয়লা হওয়া ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় তিন কোটি টাকার পারফিউম কেমিক্যাল ছিল। বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা পারফিউম এখানে বিভিন্ন মাপের বোতল ও ক্যানে রিফিল করা হতো। অগ্নিকান্ডের মাত্র দু’দিন আগেই আনা হয়েছিল ওই বিপুল পরিমাণের পারফিউম কেমিক্যাল।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পুরান ঢাকার কোনো এলাকায় দাহ্য কেমিক্যাল নেই। যদি কেউ রেখে থাকেন, সেটা তিনি গোপনে রেখেছেন। সরকার যদি আমাদের অল্প সময়ের মধ্যে গোডাউন স্থানান্তরের জন্য কোনো জায়গা দেয় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে চলে যাব।
২৩ ট্রাক সরানো হচ্ছে কেমিক্যাল
গতকাল বিকেলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মী শাহেদ আলী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গত শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত ২৩টি ট্রাকে ভরে কেমিক্যাল অপসারণের জন্য নেয়া হয়েছে। আরো রয়েছে সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হবে। সিটি কর্পোরেশনে ট্রাকের চালক আমির হোসেন বলেন, কেমিক্যাল কেরানীগঞ্জে নিয়ে একটি গোডাউনে রাখা হচ্ছে। সেখানে কেমিক্যালের মালিক শামীমের লোকজন রয়েছেন।
কেমিক্যাল সরানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সুমন (২৭) ও মজিদ (২৮) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভোর থেকে ৪০ জন শ্রমিক ওয়াহেদ ম্যানশনের গোডাউন থেকে কেমিক্যালের ড্রাম ও বস্তা ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন। আন্ডারগ্রাউন্ডের গোডাউনে আরো বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল রয়েছে।
এগুলো সরাতে অনেক সময় লাগবে জানিয়ে তারা বলেন, যে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল রয়েছে, ভেতরে আগুন লাগলে কয়েকদিন সময় লাগতো আগুন নেভাতে। আল্লাহ বড় ধরনের ধ্বংস থেকে এই এলাকাটিকে রক্ষা করেছেন বলে তারা মন্তব্য করেন।
সিলিন্ডার নয়, দোতলার কেমিক্যাল বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত
ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় সুগন্ধির গোডাউনে বিস্ফোরণ থেকেই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। বিস্ফোরণে ভবনটির দ্বিতীয় তলার চারপাশের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে ও আগুন নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। চুড়িহাট্টার দুইটি সিসিটিভি ফুটেজ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে বের হয়ে এসেছে এমন তথ্য। একই কথা জানিয়েছে অগ্নিকান্ডের তদন্তে গঠিত কমিটিও।
ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের ভবনের নিচতলার রাজমহল হোটেলের সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, ২০ ফেব্রæয়ারি রাত ১০টা ৩২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর ওয়াহেদ ম্যানশনের উপরের দিক থেকে আগুন নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের গলির ভেতরের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওয়াহেদ ম্যানশনের উপর থেকে বিস্ফোরণ হয়ে বিশাল আগুনের ফুলকি ছুটে আসে। সাথে সাথে অসংখ্য সুগন্ধির (বডি স্প্রে ও পারফিউম) বোতল আগুনের সাথে ছিটকে পড়তে থাকে। মূলত ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় একটি বিশাল সুগন্ধি কেমিক্যাল গোডাউন ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাতের কথা বলা হলেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো ও ঘটনাস্থলের আলামত পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকেই।
শাহাদাত হোসেন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি তার মোটরসাইকেলে বসেছিলেন, সঙ্গে ছিল ১৩ বছরের ছেলে। চুড়িহাট্টা মোড়ে যানজটে আটকে ছিল তার বাইকটি। হঠাৎ ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনের দিক থেকে আগুনের বিশাল ফুলকি বের হয়। দোতলার দেয়াল ভেঙ্গে নিচের দিকে পড়তে থাকে, সাথে সুগন্ধির বোতলগুলো ছিটকে পড়তে থাকে। তখন তিনি মোটরসাইকেল ফেলেই ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে পাশের গলি দিয়ে বের হয়ে যান। অন্যদিকে, অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, তারা এখন পর্যন্ত সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো আলামত পাননি। সে ক্ষেত্রে রাসায়নিক বিস্ফোরণেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
কেমিক্যাল গোডাউন-কারখানা অপসারণের দাবি
পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক কারখানা, গুদাম দ্রুত অপসারণ এবং আহতদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য যথাযত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। একইসঙ্গে কারখানাগুলোর বাণিজ্যিক লাইসেন্স বাতিল ও এ ধরনের লাইসেন্স আর না দেয়ার দাবিও জানায় সংগঠনটি। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে চকবাজারের অগ্নিকান্ডে ৬৭ জনের প্রাণহানি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গাফিলতির প্রতিবাদে এইচআরএফবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিকের হদিস নেই
চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর থেকে হদিস নেই হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান ও মো. শহীদের। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্তকারী বিভিন্ন সংস্থার লোকজন তাদের খুঁজলেও গতকাল পর্যন্ত তাদের দেখা পায়নি কেউ। চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে নিহত একব্যক্তির ছেলের করা মামলায় ওই দু’জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার রাতে চকবাজার থানায় মো. আসিফ বাদী হয়ে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দুই মালিক মো. হাসান ও মো. শহীদসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মো. আসিফের বাবা মো. জুম্মন চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডে নিহত হন। আসিফ মামলার এজাহারে বেপরোয়া বা তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজ করে মৃত্যু ঘটানো, ঘরবাড়ি ধ্বংসের জন্য আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার, উপাসনালয়, মানুষের বসতি বা সম্পত্তি রাখা হয়, এমন দালান ধ্বংস ও লোকসানের অভিযোগ এনেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের চারতলা ভবনের বিভিন্ন তলায় ভবন মালিক দাহ্য পদার্থের গোডাউন ভাড়া দিয়েছিলেন। আর্থিকভাবে লাভবান হতে তারা আবাসিক এলাকার ভবনে কোনো পরিবারকে ফ্ল্যাট ভাড়া দেন না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোরাদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা ওই ভবনে সব সময় থাকেন না। কালেভদ্রে আসেন। ভূগর্ভস্থ তলাসহ পাঁচটি তলায় পাঁচটি ইউনিট ও প্রতিটি ইউনিটে চারটি করে ঘর ছিল। দুটি ইউনিটে দুটি পরিবার ভাড়া ছিল। আর ভবনটির নিচতলায় দোকানপাট ভাড়া দেয়া ছিল। সেখানে অনেকেই মারা গেছেন। তবে ওপর থেকে কোনো লাশ উদ্ধার হয়নি। সে থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটিতে যারা থাকতেন, তারা বেঁচে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. হাসান (৫০) ও মো. সোহেল ওরফে শহীদ (৪০) দুজনেই নিরাপদে আছেন।
অগ্নিকান্ডে নিহত ওয়াসিউদ্দীন মাহিদের বাবা নাসিরউদ্দীন জানান, তিনি শুনেছেন, ঘটনার দিন মো. হাসান সপরিবার ঢাকার বাইরে ছিলেন। তারা আগে থেকেই চট্টগ্রামে বেড়াচ্ছিলেন। রাতে আগুন লাগার পর আরেক মালিক মো. সোহেল ওরফে শহীদ ও তার মা বেরিয়ে যান। নাসিরউদ্দীন ছেলের খোঁজে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেই তাদের দেখেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।