২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
‘ত্রিকটু’ একটি সংস্কৃত শব্দ যার মানে হলো তিন কটুর মিশ্রণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ‘ত্রিকটু’ বলতে তিনটি ঝাঁজালো বা কটু স্বাদ। যুক্ত ভেষজের মিশ্রণকে বোঝানো হয়। আর এই ভেষজ তিনটি হলো গোলমরিচ, পিপুল এবং আদা।
বহু প্রাচীন তথা হাজার বছরের পুরাতন ‘আয়ুর্বেদিক মেটারিকা মেডিকো’ গ্রন্থে ত্রিকটুর ভেষজ তিনটির বিবিধ ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং অসংখ্য ঔষধ তৈরিতে ত্রিকটু ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক ঔষধের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রায় ২১০টি বা তারও বেশি ওষুধ তৈরিতে ত্রিকটু বা এর উপাদান ভেষজের (গোলমরিচ, পিপুল ও আদা) ব্যবহার হয়ে থাকে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী ‘ত্রিকটু’ মূলতঃ গোলমরিচ, পিপুল ও আদার কন্দের সমপরিমাণ মিশ্রণ। নি¤েœ ত্রিকটুর উপাদানসমূহের পরিচিতি ও উপকারিতা বর্ণনা করা হলো-
পিপুল : পিপুল ‘পিপেরাসি’ পরিবারভুক্ত এক প্রকার সুগন্ধি লতা জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘পিপার লংগাম’। এর ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল আকারে ছোট এবং কালচে লাল বর্ণের হয়ে থাকে।
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এ গাছের ফলের প্রকৃতি ঝাঁজালো, উষ্ণ ও হালকা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক, ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক, কাম-উদ্দীপক এবং টনিকের গুণসম্পন্ন। তাই কাশি, শ্বাসকষ্ট, কুষ্ঠ, য²া, ডায়াবেটিস, পেট ব্যথা, বদহজম, অর্শ, চর্মরোগ, এনিমিয়া, দীর্ঘকালীন জ্বর, টাইফয়েড, ক্ষুধামন্দা এবং আন্ত্রিক পরজীবির চিকিৎসায় এর ফল ব্যবহার করা হয়।
গবেষণায় প্রমাণ করা হয় যে, পিপুল শিশুদের অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্ট কমায় এবং বিষক্রিয়ার ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত লিভার বা কলিজার হেপাটিক কোষসমূহের পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে লিভারকে সুস্থ করে।
অপর এক গবেষণায় দেখান হয় যে, পিপুলের এন্টিবডি নির্ভর রোগ প্রতিরোধ শক্তি এবং কোষনির্ভর রোগ প্রতিরোধ শক্তি উভয়ই বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া আন্ত্রিক পরজীবী ধ্বংসে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের গøুকোজ কমাতেও পিপুলের ফল খুব কার্যকর।
গোলমরিচ : এটি পিপারাসি পরিবারভুক্ত একটি আংশিক পরজীবী ও লতানো গুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘পিপারমিজিয়াম’। গোলমরিচ আমাদের দেশে মসলা হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। আর এই গোলমরিচের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গোলমরিচকে কটু বা ঝাঁজালো, তিক্ত, হালকা ও উষ্ণ প্রকৃতির বা স্বভাবের বলে উল্লেখ রয়েছে। এটা পেটফাঁপা উপশমকারী, কৃমিনাশক এবং ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক গুণ সম্পন্ন। হাঁপানি, ফুসফুসের প্রদাহ, ডায়াবেটিস, পেটব্যথা, কৃমি, অর্শ, অ্যাকজিমা, পালাজ্বর, কলেরা ও আমাশয়ের চিকিৎসায় গোলমরিচের ব্যবহার হয়ে থাকে।
আদা : আদা ‘জিনজিবারাসি’ পরিবারভুক্ত বর্ষজীবী কন্দাল গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘জিনজিবার অফিসিনাল’। এই উপমহাদেশের পাক-ভারত এই উদ্ভিদের আদি বাসস্থান বলে ধারণা করা হয়। আয়ুর্বেদে এর কাঁচা এবং শুকনো উভয় প্রকার কন্দই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ‘ত্রিকটু’-র উপাদান হিসেবে শুধু শুকনো কন্দকেই ব্যবহার করা হয়।
আদা কটু বা ঝাঁজালো এবং উষ্ণ প্রকৃতির। এটা হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক, ব্যথা নিবারক, বাত প্রতিরোধক, পেট ফাঁপা নিবারক, শীতলকারক, উত্তেজক ও মূত্রবর্ধক গুণসম্পন্ন। তাই আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বমি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, এনিমিয়া, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা, বদহজম, ডায়রিয়া, কলেরা, ডায়াবেটিস এবং বিভিন্ন ফোলার চিকিৎসায় আদা ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় প্রমাণ করা হয় যে, শুকনো এবং কাঁচা উভয় প্রকার আদা ক্ষতিকর এনজাইম সাইক্লোঅক্সিজেনেজ এবং ৫-লাইপোক্সিজেনেজের কার্যকারিতা বা শক্তি কমায়। এছাড়াও আদা এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টি টিউমার বা টিউমার প্রতিরোধী, রাইনো ভাইরাস প্রতিরোধী এবং লিভার বা কলিজার বিষক্রিয়া প্রতিরোধী গুণ সম্পন্ন।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আদা দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে দেহকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক, চেয়ারম্যান মডার্ণ হারবাল গ্রæপ। ফোন ০১৯১১৩৮৬৬১৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।