প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
রাজধানী ঢাকার চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবনে গতকাল বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ১০ মিনিটে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী সকাল সাড়ে আটটার দিকে এক ব্রিফিংয়ে জানান, ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও লাশ থাকতে পারে। উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাশের সংখ্যা জানা যাবে না বলছে ফায়ার সার্ভিস। লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
এ ঘটনায় পুরো দেশবাসী মর্মাহত। নানা ভাবে শোক জানাতেও ভুল হয়নি অনেকের। এই তালিকায় পিছিয়ে নেই শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন তারকা উপস্থিত হয়েছেন ঘটনাস্থলে। এবং ভারাক্রান্ত কন্ঠে মৃত্য মানুষ এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চকের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর মিছিল নিয়ে ইনকিলাবের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক তারকা।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের পাশে থাকারও আহব্বান জানিয়েছেন তারা। এই তালিকায় আছেন খোদ পুরান ঢাকার ছেলে- রূপালী পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগর। এছাড়াও আছেন দর্শক নন্দিন নায়ক রিয়াজ, বাপ্পারাজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, সম্র ট ও বাপ্পি চৌধুরী। শুধু নায়করাই নন, শোক জানাতে ভুল করেননি রূপালী পর্দার নায়িকারাও। এদের মধ্যে আছেন সাদিকা পারভীন পপি, রেসি ও পূর্ণিমা।
মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমার বাড়িও এখানেই। কি বলবো? কিছুই বলার ভাষা নেই। বার বার একই কান্ড। কীভাবে এতো এতো মানুষের জীবন চলে গেলো। এটা একদমই কাম্য নয় কারো। এখানে সরকার একাধিক বার ব্যবস্থা নিয়েছেন। তার পরও কোনো সমাধান হয়নি। আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী। আমার বাসা এখানে হলেও আমি এখন থাকি উত্তরায়। তবে আমার পরিবারের অনেকেই থাকেন এখানে। এ ঘটনার খবর যখন শুনেছি তখন থেকেই নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারকে আরো কঠর হাতে হবে। শক্ত হতে অনিয়মগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
রিয়াজ বলেছেন, ‘এই ঘটনার দায় আমাদের নিজেদেরই। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সেবারও শতাধিক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। এবারও এর কম নয়। বার বার কেনো এমন ঘটনা ঘটবে? আমরা কী নিজেরা সচেতন হয়েছিলাম আগের ঘটনা থেকে? সরকার সব সময়ই চেয়েছেন সাধারণ মানুষের ভালো। এটার প্রমাণ এক বার নয়, একাধিক বারই মিলেছে। এমন ঘটনা সব সময়ই ঘটবে, যদি না আমাদের হুশ হয়। তবে অনেকটা কষ্ট হচ্ছে এটা একদমই মিথ্যা নয়। কারণ ২১ শে ফেব্রুয়ারির এই বিশেষ দিনে এমন একটা ঘটনা কোনো ভাবেই কাম্য ছিলো না। আমি একান্ত ভাবে বিশ্বাস করছি এবার হয়তো সবাই নড়ে চড়ে বসবেন। এবং সরকারের কাজে সহযোগিতা করবেন।’
বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ভালো নই। সচেতন নই। সচেতন হলে এমন ঘটনা বার বার কীভাবে ঘটে? আগে নিজেকে বদলাতে হবে। তাহলেই পুরো সমাজ পরিবর্তন হবে। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু তাতে সরকারেরই বদনাম হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য পুরো জাতিকে সময়-অসময়ে কলঙ্কিত করছেন। এদেরকে জরুরী ভাবে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছি। সেই সাথে সরকারকে আরো কঠর হতে এগুলোকে প্রতিহত করতে অনুরোধ করছি। যেন এমন ঘটনায় আর কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়। যেন আর কোনো মানুষ পথের ভিক্ষারী না হন। যেন দেশের প্রতিটি মানুষই সুস্থতার সঙ্গে, ভালো ভাবে, ভালো পরিবেশে বাস করতে পারেন। সেই সঙ্গে এই নোংরা ঘটনায় যেসব মানুষ জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানায়। এই অসুস্থ পরিবেশ থেকে ওপারে গিয়ে যেন সকলেই ভালো থাকেন সেই দোয়াও করি। এছাড়া দোয়া করি আল্লাহ যেন মৃত্য ব্যক্তিদের পরিবারের সকল সদস্যদের এই শোক সইবার ক্ষমতা দান করেন।’
শাকিল খান বলেছেন, ‘প্লাস্টিকের ফ্যাক্টরীর লাইসেন্স বাতিল করা প্রয়োজন। নামে-বেনামে অন্য ব্যবসায়ের নামে লাইসেন্স নিয়ে অবৈধ ভাবে পুরান ঢাকায় একাধিক প্লাস্টিক ফ্যাক্টরী গড়ে তুলেছেন যারা তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। সত্যিই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এমন ঘটনা পুনোরাই কীভাবে ঘটলো? এই ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা সত্যিই অপূরনীয়। যে সকল মানুষ এমন নিন্দনীয় ঘটনায় প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। সেই সঙ্গে শোকাহত পরিবারের মানুষদের এই শোক সইবার ক্ষমতা যেন আল্লাহ পাক দান করেন সেই দোয়ায় করি।’
ফেরদৌস বলেন, ‘যাদের গিয়েছে তারাই বুঝবেন কী গিয়েছে। আমরা যতোই এখন তাদের পাশে দাঁড়ায় তাতে তাদের এতোটুকু কাজে লাগবে বলে মনে করছি না। তবে সবার প্রতি শ্রদ্ধা। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আল্লাহ যেন ধৈয্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন এই দোয়ায় করি।’
সম্রাট বলেন, ‘যখন এমন খবর শুনেছি তখন থেকেই মনের অজান্তেই কেনো জানি কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতর। বলতে পারেন একটু অসুস্থ ফিল করছি। এক মুহুতের জন্যও চোখ সরাতে পারছি না নিউজ থেকে। তবে এই নিন্দনীয় ঘটনায় যে সকল পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সবাইকে আল্লাহ যেন ধৈয্য ধারণে সাহায্য করেন। এবং যেসব মানুষের প্রাণ গিয়েছে তারা সবাই যেন পরোপারে গিয়ে ভালো থাকেন সেই দোয়া রইলো।’
বাপ্পি চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমি রওনা হয়েছি পুরান ঢাকার উদ্দেশ্যে। সত্যিই এই শোক সইবার মতো নয়। তাই স্বশরীরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে গিয়ে তাদের কষ্টের ভাগ নিতে চাই। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জীবন দিয়েছেন যে সকল মানুষ তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। দোয়া করি ঈশ্বর যেন সবাইকে ওপারে ভালো রাখেন।’
সাদিকা পারভীন পপি বলেন, ‘আমি সত্যিই শোকাহত, মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আর কীই বা বলার আছে। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। আমি একজন তারকা বলেই হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কষ্ট অনেক বেশিই ফিল করতে পারছি। কারণ আমি মনে করি তারকারা একটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা দেশেই রয়েছে তারকাদের অসংখ্য পরিবার। যে সকল মানুষ এই ঘটনায় প্রাণ দিয়েছেন তারা সবাই এই পরিবারেরই সদস্য। যে কারণে বুক ফাটা কষ্ট অনুভব করছি। এই ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানায়। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের পাশে থাকারও চেষ্টা করবো। আমার বিশ্বাস এই বিপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে সবাই থাকবেন।’
রেসি বলেন, ‘বিষয়টি সত্যিই অনেক কষ্টদায়ক। দোয়া রইলো সবার জন্য। এই ঘটনায় যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা। সেই সঙ্গে শোকাহত পরিবারের প্রতি দোয়া রইলো আল্লাহ যেন সবাইকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দান করেন।’
পূর্ণিমা বলেন, ‘কী বলতে পারি? বিষয়টা ভাবতেই অবাক লাগছে। আর সত্যি করে বলতে গেলে এমন ঘটনায় এভাবে কোনো কিছু বলার মতো স্বাভাবিকতা আমার নেই। যা বলবো, যা করবো তা গোপনীয় ভাবেই হবে। মানুষকে জানিয়ে নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।