নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকটারদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দেশের উইকেট আর বিদেশের উইকেটের পার্থক্য। কোন টুর্নামেন্ট কিংবা সিরিজে নিজেদের খেলোয়াড়দের সামর্থ্যরে কথা চিন্তা করে উইকেট তৈরি করে, যেটা অতীতে একচেটিয়াভাবে করে এসেছে ভারত। ভারতের সেই আত্মঘাতী ফর্মূলা অনুকরণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও দীর্ঘদিন ধরে সেই একই দুরবস্থা। দেশের মাটিতে বাঘ আর বিদেশের মাটিতে বিড়াল। এর মূল কারণই হচ্ছে, উইকেটের তারতম্য।
ক্রীড়ামোদীদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এই মানসিকতায় পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যতে আরো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে। নিউজিল্যান্ডের চলমান সফরটি যার জ্বলন্ত প্রমাণ। ওয়ানডে সিরিজের দুটি ম্যাচের ফলাফল সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৮.৫ ওভারে অলআউট ২৩২ রানে। গতকাল ৪৯.৪ ওভারে ২২৬। প্রথম ওয়ানডের মতো এদিনও বাংলাদেশের দেয়া মামুলি লক্ষ্যটা নিউজিল্যান্ড টপকে গেছে ৮ উইকেট হাতে রেখে।
৭৫৫ কিলোমিটার। নেলসনের ম্যাকলিন পার্ক থেকে থেকে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের দূরত্ব। ভেন্যু বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের। যেন নেপিয়ারের ভূত তাড়া করে এসেছে ক্রাইস্টচার্চেও। ভোর রাতে উঠে যারা শুরু থেকে ম্যাচ দেখেছেন অনেকেরই হয়ত ভুল ভাঙতে সময় লেগেছে এই ভেবে, ‘আগের ম্যাচের হাইলাইটস নয় তো?’ কিন্তু বাস্তবে ফিরতেও সময় লাগেনি এতটুকু।
শীতল হাওয়ার দাপট বেড়েছে, কন্ডিশনকে প্রথম চ্যালেঞ্জ মানা বাংলাদেশ পেয়েছে আরও কঠিন পরিস্থিতি। এদিন টস ভাগ্যও আসেনি পক্ষে। প্রতিকূলতা জেতার মানসিকতাও দেখাতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। একটু এদিক সেদিক করে ঠিক আগের ম্যাচের মতই যেন সবই হয়েছে পুনরাবৃত্তি। বলা উচিত ভুলের পুনরাবৃত্তি।
নেপিয়ারে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল নিউজিল্যান্ড টসে জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের সেই বিপর্যয়। গত ম্যাচের মতোই তামিম ইকবাল করেছেন ৫, লিটন দাস ১ রান। ৫ রানে ভেঙেছে ওপেনিং জুটি। স্কোরবোর্ডে ১০০ রান না উঠতেই টপ অর্ডার ধসে পড়েছে, নেই ৫ উইকেট। মিল আছে মুশফিকুর রহিমের বেলাতেও। সেদিন স্টাম্পে বল টেনে বোল্ড হয়েছিল। ১ রানে একবার জীবন পেয়েও এবারও তার ইনিংস শেষ হয়েছে এভাবেই।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবারও মোহাম্মদ মিঠুনের লড়াই, ঐ একটাই ফিফটি। সেদিন মিঠুনের সঙ্গে সাইফউদ্দিনের ৮৪ রানের একটা জুটি হয়েছিল। গতকাল সেটি হয়েছে সাব্বির রহমানের সঙ্গে (৭৫) রানের। লেগ স্পিনার টেড অ্যাস্টলকে ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছার পর বেশিক্ষণ টেকেননি। পেশিতে টান পড়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন, ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ওই লেগ স্পিনারের বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। মাঝেসাঝে বাউন্ডারি আর প্রায়ই ডট বলের পসরা সাজিয়ে সাব্বির তবু দেখাচ্ছিলেন আশা। অনেকদিন থেকে ফিফটির দেখা না পাওয়া এই ব্যাটসম্যান দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস। ৪৩ রান করে তিনি থেমেছেন নিজের দোষেই। ফার্গুসেনের পেসে পয়েন্টে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার সংগ্রাম। পুরো ইনিংসের হাইলাটসও এই দুজন।
মিল এখানেই শেষ নয়, গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন মার্টিন গাপটিল। এদিনও করলেন। পার্থক্যটা হচ্ছে প্রথম ওয়ানডেতে গাপটিল অপরাজিত ছিলেন ১১৭ রানে, আর গতকাল আউট হয়েছেন ১১৮ রানে। পার্থক্য আরও একটা আছে। নেপিয়ারে গাপটিল বাংলাদেশের বোলারদের ভীষণ সমীহ করেছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে সেসব কিছু ছিল না। কিউই ওপেনার বুঝে গেছেন, নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে বাংলাদেশের বোলাররা নির্বিষ, বৈরী পরিবেশে তাঁরা খুব একটা হুল ফোটাতে পারেন না! কাজেই তাঁদের ওপর চড়াও হওয়া যায়। হয়েছেনও। ৭৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন। মুস্তাফিজুর রহমানের বাউন্সারটা জোর করে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে যখন লিটন দাসের ক্যাচ হলেন, নামের পাশে জমা হয়ে গেছে ৮৮ বলে ১১৮ রান। ১৪ চার আর ৪ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটার স্ট্রাইকরেট ১৩৪.০৯। গাপটিল-উইলিয়ামসনের দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করা ১৪৩ রানের জুটি যে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, তা না বলে বলা ভালো ম্যাচটা আরও একপেশে করে দিয়েছে। প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন এই ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের প্রাপ্তি বলতে মোস্তাফিজের ২ উইকেট। আর গত ম্যাচের চিত্রনাট্য মেনে এটিতেও ম্যাচসেরা গাপটিল।
টানা দুই ম্যাচ হেরে সিরিজও হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ২০১০ সাল থেকে দুই দলের সিরিজে একটা অভিন্ন দৃশ্য হচ্ছে, যারা হারে তো হারতেই থাকে। যে দল সিরিজ জিতবে, তারা প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেই জিতবে। এবারও কি সেটিই হতে যাচ্ছে?
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, ২য় ওয়ানডে
ক্রাইস্টচার্চ, টস : নিউজিল্যান্ড
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম এলবি ব হেনরি ৫ ২৮ ০ ০
লিটন ক ফার্গুসন ব বোল্ট ১ ৪ ০ ০
সৌম্য ক টেইলর ব গ্র্যান্ডহোম ২২ ২৩ ৩ ০
মুশফিক বোল্ড ফার্গুসন ২৪ ৩৬ ২ ০
মিঠুন বোল্ড অ্যাস্টল ৫৭ ৬৯ ৭ ১
মাহমুদউল্লাহ ক লাথাম ব অ্যাস্টল ৭ ৮ ১ ০
সাব্বির ক নিশাম ব ফার্গুসন ৪৩ ৬৫ ৭ ০
মিরাজ ক নিকোলস ব নিশাম ১৬ ২০ ১ ০
সাইফউদ্দিন বোল্ড ফার্গুসন ১০ ১৫ ০ ০
মাশরাফি ক বোল্ট ব নিশাম ১৩ ১৮ ০ ১
মুস্তাফিজ অপরাজিত ৫ ১২ ১ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৬, ও ১৭) ২৩
মোট (অলআউট, ৪৯.৪ ওভার) ২২৬
উইকেট পতন : ১-৫ (লিটন), ২-১৬ (তামিম), ৩-৪৮ (সৌম্য), ৪-৮১ (মুশফিক), ৫-৯৩ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-১৬৮ (মিঠুন), ৭-১৯০ (মিরাজ), ৮-২০৬ (সাব্বির), ৯-২১১ (সাইফউদ্দিন), ১০-২২৬ (মাশরাফি)।
বোলিং : হেনরি ১০-২-৩০-১, বোল্ট ১০-১-৪৯-১, গ্র্যান্ডহোম ৪-০-২৫-১, ফার্গুসন ১০-০-৪৩-৩, অ্যাস্টল ১০-০-৫২-২, নিশাম ৫.৪-০-২১-২।
নিউজিল্যান্ড (লক্ষ্য ২২৭) রান বল ৪ ৬
গাপটিল ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১১৮ ৮৮ ১৪ ৪
নিকোলস ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১৪ ২৩ ২ ০
উইলিয়ামসন অপরাজিত ৬৫ ৮৬ ৩ ০
টেইলর অপরাজিত ২১ ২০ ৩ ০
অতিরিক্ত (বা ১, ও ১০) ১১
মোট (২ উইকেট, ২৬.১ ওভার) ২২৯
উইকেট পতন : ১-৪৫ (নিকোলস), ২-১৮৮ (গাপটিল)।
বোলিং : মাশরাফি ৬-০-৩৭-০, সাইফউদ্দিন ৬-০-৪৪-০, মিরাজ ৭.১-০-৪২-০, মুস্তাফিজ ৯-০-৪২-২, সাব্বির ৪-০-২৮-০, সৌম্য ১-০-১০-০, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৫-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : ৩ ম্যাচে ২-০তে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।