Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরেকটি হৃদয়ভঙ্গের বেদনা

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আইসিসি, আম্পায়ারও!

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:২৩ এএম

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি উত্তেজনা। বিশেষ করে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ান্ডে বিশ্বকাপের পরে রূপ নিয়েছে ভিন্ন মাত্রায়। ফলে পাক-ভারত যুদ্ধ ছাপিয়ে ভারত-বাংলাদেশের লড়াই এখন ক্রিকেটের সেরা দ্বৈরথে পরিণত। আরও একটি জিনিস বেশ ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। এই দুই দলের লড়াইয়ে ফিল্ড ও টিভি আম্পায়াররা করেন অদ্ভুত পক্ষাপাতিত্ব! যে সিদ্ধান্তগুলো ফিফটি-ফিফটি, তার সবই, সবসময়ই যাচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। গতকাল অ্যাডিলেডে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও যার প্রমাণ পাওয়া গেল। এমনকি ম্যাচের আগের দিন বৃষ্টির কারণে ঢেকে রাখা উইকেট দেখতে দেওয়া হয়নি বাংলাদেশের কাপ্তান বা কোচকে। অথচ ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় ঠিকই পেয়েছিলেন পিচ পরখের সুবিধা! এমনকি, বৃষ্টির কারণে ভেজা মাঠে খেলতে না চাওয়া বাংলাদেশকে অনেকটা জোর করেই খেলানো হয়েছে এই ম্যাচ!

তবে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। বৃষ্টি আইনে ৫ রানে হেরে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুর পর ২০২২ সালে অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে আরেকটি হৃদয় ভঙ্গের কাব্যই লেখা হল তাতে।
ভারতের ছোড়া বিশাল ১৮৫ রানের চ্যালেঞ্জ তারা করতে নেমে দারুণ জবাব দিচ্ছিল বাংলাদেশ। আরেকটু সূক্ষভাবে বললে লিটন দাস। এই ডানহাতির কল্যানে, ইনিংসের ৭ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৬ রান। আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত যেন, মাঠে থাকার জন্যই ছিলেন। এই ধরনের হাই-স্কোরিং শান্তর শুরুর দিকের ঢিমেতালে ব্যাটিংয় উল্টো দলের উপর চাপ বাড়িয়েছিল।

ভারতীয় পেসাররা সুইংয়ের জন্য বিখ্যাত। সেই বোলারদের উপর রীতিমত ঝড় বইয়ে দিলেন লিটন। কেউ নিজের চোখে না দেখলে, এই ইনিংসের মাহাত্ম্য বোঝা কঠিন। ফ্লিক, কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ, ডাউন দ্য উইকেটে এসে বোলারের ছন্দ নষ্ট করা, সব দক্ষতার প্রদর্শনীই করলেন লিটন। সেই আগুণে প্রদর্ষনীতে বিদ্ধ ভারতীয় আর্শদ্বীপ, শামি ও ভুবেনেশ্বর। স্বাভাবিকভাবেই ঝড়ের পরে আসবে বৃষ্টি। হলোও তাই। খেলা থামার আগে লিটনের সংগ্রহ ছিল ২৭ বলে ৬০ রান, আর ১৬ বলে ৭ করা আরেক ওপেনার, নিজের নামের মতই শান্ত ছিলেন। বৃষ্টির তীব্রতায় খেলা আর না হওয়ারও সম্ভাবনা উঁকি দিল। যদি সেটাই হতো শেষমেশ, তাহলে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জিতে যেত ১৭ রানে!

খেলা ৫২ মিনিট বন্ধ থাকার পর মাঠে নামলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নামেন স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। তবে যে ধরনের ভারী বর্ষণ হয়েছে, তাতে এতো দ্রুত মাঠ শুনাকর কথা না। খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশ কাপ্তান সাকিব এই সিধানের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তবে, সব সময়ই ভারতকে দভাশুরেরদ মত শদ্ধা করা আইসিসি সেই প্রতিবাদের দথোরায় কেয়ারদ করল। নতুন ভাবে খেলা শুরু হলে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৪ বলে ৮৫ রান। এসময় প্রথম ওভারেই আসলেন রবীচন্দ্র অশ্বিন। ভেজা উইকেটে ডাবলের জন্য দৌড়াতে গিয়ে পিছলে পড়লেন লিটন। কব্জিতে ব্যাথা পাওয়া এই ক্রিকেটার যখন ফিজিওর শুশ্রƒষা নিচ্ছেন, তখনও আম্পায়ার এসে তাড়া দিতে লাগলেন! অথচ ব্যাটসম্যান আহত! সেই ওভারেই আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ডাবল নিতে চাইলে অনিচ্ছা স্বত্তেও রান নিতে গিয়ে আউট হন লিটন। এক্সট্রা কাভার থেকে করা লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রো উপড়ে দেয় নন স্ট্রাইকের স্টাম্প। তাতেই মূলত ভেঙ্গে চুড়মার হত বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের শেষ আশাটুকুও।

লিটন আউট হয়েছিলেন ৭.২ ওভারের সময়। আর ১২.৫ ওভারের সময় বাংলাদেশ সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১০৮ রান। বাংলাদেশের শেষ ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল ৫২ রান। এটা জানা কঠা ছিল যে, আশ্বদ্বীপ এর মাঝে ৩ ওভার করবেন, তবে এরপরও পান্ডিয়া, শামি ও অশ্বিনের মাঝে যেকোন দুইজনকে ২ ওভার করতে হবে। তাই আর্শ্বদ্বীপের বলে বলে রান নিয়ে বাকি দুই বোলারকে টার্গেট করলে ম্যাচ জেতা খুবই সম্ভব ছিল। তবে বাংলাদেশের সেরা দুই ব্যাটার সাকিব ও আফিফ হোসেন আর্শ্বদ্বীপকেই টার্গেট করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হলেন ১২তম ওভারে। পরের ওভারে পান্ডিয়াকে চার্জ করতে গেলেন মাত্রই ক্রিজে যাওয়া ইয়াসির আলী ও মোসাদ্দেক হসেন, আর ক্যাচ দিয়ে দুইজনই সাজঘজরের পথ দেখালেন।

যদিও তাসকিনকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত লরাই করে গেলেন নুরূল হাসান সোহান। এই জুটি ব্যাট করার সময় ১৫তম ওভারের শেষ বলে পান্ডিয়ার বল লাইনের উপর দিয়ে যায়, আম্পায়ার ওয়াইদের কল দিতেই পারতেন। কিন্তু অদ্ভুত কারণে ছিলেন দনিশ্চুপদ। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২০ রান। প্রথম বলে ১ রান নিয়ে তাসকিন প্রান্ত দিয়ে দেন নুরুলকে। নুরুল একটা ছক্কা আর একটা চার মারলেও জয়ের জন্য দরকার ছিল আরো কিছু।

টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার-প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান করে ভারত। যার অবদান মূলত তাসকিন আহমেদের। এই পেসারের বোলে রোহিতের ক্যাচ ড্রপ হয় হাসান মাহমুদের মাধ্যমে। মাত্র ১৫ রান খরচ করে বোলিং কোটা শেষ করেন তাসকিন। তবে দলটা ভারত বলেই ইনিংসের যেকোন সময়ই দপাওয়ার প্লেদর মতই ব্যাট করা সম্ভব। সেটা ভাল বোলিংয়ের বিপক্ষেও। নবম ওভারে বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম সেই সুযোগটাই দিলেন। ভারত তুললো ২৪ রান। ব্যাইংয়ে আর কোন চাপ অবশিষত থাকল না রোহিতের দলের। এতোকিছুর মাঝে খুব দৃষ্টিকুটু ছিল ১৭তম ওভারে ভিরাট কোহলির আবেদনের পর, লেগ আম্পায়ার মরিচ এরাসমাসের, ওয়াডের ডাকে সারা দেওয়াটা। সাকিব হাসিমুখেই সেটার প্রতিবাদ জানান সেই মুহূর্তে।

শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৮৪ রানের পুঁজি পায় ভারত। এত বড় রান তাড়া করে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আর কোনো দলই জেতেনি। বাংলাদেশ সেই অসাধ্য সাধনের কক্ষপথেই ছিল। নিজেদের হিসেবে কিছু গড়মিল করা, ভুল বোলারের উপর চড়াও হওয়া সাথে ছিল প্রকৃতির বাধা। তবে খালি চোখে তার চেয়েও বড় বাধা ছিল আম্পায়ার তথা আইসিসির, দঅসমদ দৃষ্টিভঙ্গি। যার খেসারতে, ভারতের কাছে হেরে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ পর্ব প্রায় পরিসমাপ্তির পথেই।

আজকের খেলা
পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা, দুপুর ২টা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি ২০ বিশ্বকাপ

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ