মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের কনভয়ে ভয়াবহ হামলার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা বিষয়ক সভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার জোর দাবি উঠেছে। ভারত সরকার এবং দেশটির সকল মিডিয়া ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করছে। পাকিস্তান এ ঘটনার সাথে কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে। ওই হামলায় জওয়ানদের মৃত্যুর নিন্দা করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত না করে কোন একটি দেশকে সরাসরি দায়ী করা ঠিক নয়। এদিকে পাকিস্তানকে সুবিধাভোগী দেশের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি পাকিস্তানকে ক্রমান্বয়ে একঘরে করারও অঙ্গীকার করেছেন। এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে নয়াদিল্লিতে ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদলিপি ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওদিকে গতকাল জম্মু ও কাশ্মীরের কারফিউ কবলিত এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১২ জন। পোড়ানো হয় একাধিক গাড়ি। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় জইশ হামলায় ৪৪ জন জওয়ানের মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত জম্মু। ঘটনার জেরে গুজ্জর নগর এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে কারফিউ অগ্রাহ্য করে শহরের বাসস্ট্যান্ড, নওয়াবাদ, বকশি নগর, পীর মিঠা, পাক্কা দাঙ্গা, চান্নি হিম্মত, জানিপুর, ডোমনা ও বাগ-এ-বহু অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, জম্মু চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডাকে এদিন কর্মবিরতি পালন হয়েছে। সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুতে কর্মবিরতি পালন করেছে জম্মুর বার অ্যাসোসিয়েশনও। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জম্মুতে বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা।
কাশ্মিরে হামলার ঘটনায় মুখ খুললো পাকিস্তান
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে জঙ্গি হামলায় ৪৪ জওয়ান নিহতের ঘটনায় একদিন পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ বলেছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকার কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। প্রতিক্রিয়ায় হামলার ঘটনাটি বড় ধরনের উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে দেশটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এখবর জানিয়েছে।
তদন্ত না করেই পাকিস্তানকে দোষারোপ ঠিক না : মমতা
ভারতে যে কোনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কর্মকান্ডে দেশটির রাজনীতিকরা প্রায় সময়ই পাকিস্তানকে দোষারোপ করেন। অতীতের মতো বৃহস্পতিবারের হামলার পরও ভারতের ক্ষমতাসীন দল, সরকার ও সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে এবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটেছেন উল্টোপথে। তিনি বলেছেন, বিস্তারিত তদন্ত না করেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করা ঠিক হচ্ছে না। কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় বাংলা সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পররাষ্ট্র বিষয়ে আমি সচরাচর মন্তব্য করি না। এসব ক্ষেত্রে দেশের অবস্থানই আমার অবস্থান। তবে বৃহস্পতিবার ঘটনার পর পরই জানিয়ে দেওয়া হয়, এ ঘটনার নেপথ্যে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।’
মমতা আরও বলেন, ‘বিস্তারিত তদন্ত না করে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া ঠিক নয়। বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। সেটা মাথায় রেখে আগে তদন্ত করা হোক। তারপর দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
মমতার এই প্রতিক্রিয়ার পর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দাবি করেছেন, পুলওয়ামার ঘটনার নেপথ্যে যে পাকিস্তানের সরাসরি হাত রয়েছে, সে ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে নয়াদিল্লির কাছে। কাশ্মিরে হামলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ক্ষমতাসীন বিজেপি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পুলওয়ামার ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছেন মমতা। তিনি সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করার জন্য এতটাই মরিয়া যে পুলওয়ামার ঘটনার পর পাকিস্তানের উপর দোষারোপেও তিনি আপত্তি জানাচ্ছেন। তবে মমতাই অভিযোগ করেছেন এই হামলা নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। মমতা বলেছেন, পুলওয়ামায় যা হয়েছে তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েও রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠান বাতিল করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে দেওয়া।
স্বাধীনতার কাশ্মিরে সবচেয়ে ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল মোদি সরকারের জরুরি বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে পুরোপুরি একঘরে করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে দিল্লি। পাকিস্তানকে ভারতের দেওয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’-এর তকমা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে হামলাটির নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি।
ইসলামাবাদ সবসময় সহিংস কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকার হামলায় পাকিস্তানকে জড়ানোর যে কোনও পরোক্ষ ইঙ্গিতকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করবে পাকিস্তান।
এক টুইটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, কাশ্মির উপত্যকায় যে কোনও অতিরিক্ত সহিংস কর্মকান্ডের নিন্দা আমরা সব সময় জানিয়েছি।
এর আগে কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছিল ২০০২ সালে। ওই সময় জম্মুর কাছে কালুচাক সেনাঘাঁটিতে হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের বেশিরভাগ ছিলেন বেসামরিক ও সেনাদের আত্মীয়। এছাড়া ২০১৬ সালে উরিতে একটি সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গিরা হামলা চালালে ১৭ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন। হামলাগুলোর জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। তবে পাকিস্তান এসব হামলায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে আসছে। বৃহস্পতিবারের হামলায় পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যকার উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলওয়ামায় ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং কট্টরপন্থী হুরিয়ত কনফারেন্স নেতাদের টার্গেট করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই সমস্ত নেতারা পাকিস্তান থেকে অর্থ সাহায্য পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
পুলওয়ামায় হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজনাথ। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জম্ম-কাশ্মীরের কয়েকজনের সঙ্গে আইএসআই এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির যোগ আছে। এই সমস্ত ব্যক্তিকে দেওয়া নিরাপত্তা পুনরায় খতিয়ে দেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এবিপি আনন্দ, জি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।