চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
প্রশ্ন : আমি দাড়িতে কালো/ব্রাউন কালার কলপ দিতে পারব কি না ? দয়া করে জানাবেন ?
উত্তর : দাঁড়িতে কলপ দেয়া জায়েজ। কড়া কালো রঙ না দেয়া ভালো। কেননা, এটি মাকরূহ। উত্তম হলো মেহেন্দি দেয়া। এ ছাড়া হারবাল কালার দেয়া যায়। ব্রাউন/অ্যাশ/ব্ল বা মিশ্র রঙ দেয়া যায়। শর্ত হলো, রঙ যেন চুল-দাঁড়ির সাথে নিঃশেষে মিশে যায়। আলাদা আবরণ হয়ে লেগে না থাকে। চামড়া বা চুলে রঙয়ের আবরণ লেগে থাকলে অজু-গোসলে সমস্যা হতে পারে। তখন অবস্থাভেদে এটি মাকরূহে তাহরিমি থেকে নাজায়েজ পর্যন্ত হতে পারে। তাই নিখুঁত ও নির্দোষ খেজাব ব্যবহার করতে না পারলে চুল-দাড়ি সাদা রেখে দেয়াই ভালো। এ সম্পর্কিত যত হাদিস আছে- সে সবের সারসংক্ষেপ এই, নবী সা. বলেছেন, বার্ধক্য ও সাদা চুল-দাড়ি ঈমানদারের জন্য আল্লাহর নূরের মতো। এসবের বিকৃত করা চাই না। সৈনিক ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্য বলা হয়েছে, তোমরা চুল-দাড়িতে খেজাব (মেহেন্দি বা নির্দোষ কলপ) ব্যবহার কর। অমুসলিমদের বিপরীত সংস্কৃতি পালন কর। এটা দুষমনদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য। যেন তারা মুসলিম হিরোদের বার্ধক্যে আনন্দ না পায়। কুচকুচে কালো খেজাব দিওনা। এতে আল্লাহর দেয়া বার্ধক্যকে অপছন্দ করা এবং তারুণ্যকে অধিক পছন্দ করার আলামত দেখা যায়। যা আখেরাতপন্থী চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক। এ জন্য হাদিসে এসেছে, অকারণে কুচকুচে কালো খেজাব ব্যবহারকারীর চেহারা কালো হোক। শরিয়তে তাই এটি মাকরূহ। সাহাবিদের অনেকেই খেজাব ব্যবহার করেছেন। আল্লাহর রাসূল সা. স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ জন্য এটি সুন্নত। শরিয়তসম্মত কিছু কারণে খেজাব ব্যবহার করা অনুমোদিত। মাকরূহ পদ্ধতি বেছে চলতে হবে। কোনো কারণ না থাকলে সাদা রঙকে বরণ করাই উত্তম।
প্রশ্ন : ড্রেসিং করা মুরগি খাওয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর : জায়েজ আছে। শর্ত হলো, মুরগির ড্রেসিংটি তার নাপাক অঙ্গ বর্জ্য ছাড়া করতে হবে। গরম পানিটিও পাক হলে ভালো। এরপরও নিজেরা পবিত্র পানি দিয়ে এ মুরগির গোশত ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে। সুবিধা থাকলে সতর্কতার জন্য মেশিনে ড্রেসিং না করে নিজের হাতে করে নেয়া ভালো। অনেক মুরগি হলে, নিজের ক্ষমতা না থাকলে, বড় কোনো অনুষ্ঠানে, সুপার শপ থেকে কিনলে, বিদেশে, ভ্রমণের সময় বাইরের ড্রেসিং ছাড়া উপায় থাকে না। সুতরাং সচেতন ও সঠিক লোকেদের ড্রেসিং করা মুরগি খাওয়া যায়, যদি নাজায়েজ হওয়ার শক্ত প্রমাণ বা কারণ না থাকে।
প্রশ্ন : আমি ঢাকা ভার্সিটিতে লেখাপড়া করি। এখানে অন্যান্য বন্ধুদের মতো আমার কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বন্ধুও রয়েছে। তাদের পূজা-পার্বণে আমাদের তারা দাওয়াত করে। আমাদের কিছু কিছু বন্ধু পূজার ছুটিতে তাদের সাথে গিয়ে পূজা উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এমনকি তাদের মতো নাচ-গানেও অংশ নিয়ে থাকে। অন্য ধর্মের কোনো ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানদের অংশ নেয়া কি ঠিক? গুনাহ হলে কি ধরনের গুনাহ হবে?
উত্তর : অমুসলিম বন্ধু-বান্ধবের সাথে গুনাহর কাজ ছাড়া অন্য সব কিছুতে অংশ নেয়া যেতে পারে। আপনার বন্ধুরা যতক্ষণ স্বাভাবিক কাজে থাকে, ততক্ষণ তারা আপনাকে পাশে পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু তাদের বন্ধুত্বের টানে আপনি শিরক ও কুফরি করতে পারেন না। হারাম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন না। মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ক এক কথা, অন্য ধর্মের উপাসনায় যোগ দেয়া আরেক কথা। তাদের সাথে নাচ-গানে অংশ নেয়া, পূজার প্রসাদ খাওয়া, উৎসবে শরিক হওয়া সবই ইসলামে নিষিন্ধ। কেননা, ‘দুর্গোৎসব’ একটি উৎসব মাত্র নয়, এটি একটি ধর্মীয় আচার বা উপাসনা। এতে কোনো মুসলমান অংশ নিতে পারে না। যদি নেয়, তা হলে আল্লাহর সাথে শিরক করার গুনাহ হবে।
প্রশ্ন: যদি কোন নাবালক মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া অভিভাবকরা বিয়ে দেয়। সে বিয়ে কি হবে? পরে যদি সাবালক হয়ে মেয়েটি বিয়ে মেনে না নেয়, তখন কি হবে?
উত্তর : বিয়ে হবে। যদি ইসলামী শরিয়ত অনুসরণ করা হয় তাহলে নাবালিকাকেও তার সম্মতি বা কবুল বলা ছাড়াই বৈধ অভিভাবক বিয়ে দিতে পারেন। এ বিয়ে মেয়েটি সাবালিকা হওয়ার সাথে সাথে অনতিবিলম্বে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য কাজী বা বিচার কর্তৃপক্ষকে বলতে পারে। যদি না বলে অল্প সময়ও সংসার চালায় তাহলে আর নারাজি দেওয়ার অধিকার তার থাকে না। এখানে নাবালিকা বলতে আমরা কি বুঝবো? ইসলামী নীতিতে নাবালিকা অর্থ যে মেয়ের নারীত্ব শুরু হয়নি। বয়স তার যাই হোক। অন্যান্য আইনে পশ্চিমা অনেক দেশে ১৩ থেকে ১৮। আমাদের দেশে কমপক্ষে ১৮। এসব নিয়মের নাবালিকাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিলে বিয়েই হবে না। কারণ, তারা সম্ভবত ইসলামী নীতিতে সাবালিকা।
প্রশ্ন: (ক) দুধভাই ওয়ারিশের কোনো ভাগ পাবে কি? (খ) তারাবীহ পড়িয়ে, কোরআন খতম করে হাদিয়া গ্রহন করা জায়েজ আছে নাকি? (গ) মসজিদে দেরিতে এসে কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া ঠিক কিনা? (ঘ) নামাযের শেষ বৈঠকে দরূদ, দুআয়ে মাছুরা না পড়লে গোনাহ হবে নাকি?
উত্তর : (ক) দুধ ভাই বোন কিছুই পাবে না। (খ) শর্ত ছাড়া, হাত পাতা ছাড়া, পাওয়ার আশা ছাড়া প্রাপ্ত সব টাকা-পয়সা, খাদ্য, জামা-কাপড়, ঈদের উপহার, হাদিয়া ইত্যাদি তারাবীহ পড়ানো সম্মানিত হাফেজ সাহেব নিতে পারেন। (গ) কাতার পূরণের জন্য অন্যকে কষ্ট না দিয়ে যাওয়া যায়। তবে নিজেকে বড় মনে করে দম্ভ নিয়ে অন্যদের কষ্ট দিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। (ঘ) গোনাহ হবে না, কারণ এসব ফরজ ওয়াজিব নয়। তবে নামাজ অপূর্ণাঙ্গ ও অসুন্দর হবে।
প্রশ্ন: একজন স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর কি দায়িত্ব রয়েছে ইসলামের আলোকে জানালে মুসলিম নারী সমাজ উপকৃত হবে। জানাবেন আশা করি।
উত্তর : স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব তিনটি: ১. স্বামীর দৈহিক, মানসিক সংগ দেওয়া। ২. তার বিশ্বাস, আস্থা, সংসার, সন্তান ও সহায়-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা। ৩. শরীয়তসম্মত ও সামাজিক বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা।
প্রশ্ন : কারো মোবাইলে যদি অজ্ঞাত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক আসার পর সে ওই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ককে নিজ মোবাইলে কানেক্ট করে নেট ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে এটা তার জন্য জায়েজ হবে কি না? যদি জায়েজ না হয়ে থাকে, তা হলে যতটুকু গই ব্যবহার করেছে এর মূল্য ফেরত দেয়া লাগবে কি না? ফেরত দিতে
উত্তর : উত্তম হলো অজ্ঞাত মালিকের ওয়াইফাই লাইন পেলেও ব্যবহার না করা। তবে যতদূর জানা যায়, একটি ওয়াইফাই লাইনের খরচ অধিক ব্যবহারেও কমবেশি হয় না। নির্দিষ্ট টাকা দিলেই চলে। মালিকের যে সমস্যাটা হতে পারে সেটি হচ্ছে, তার নিজের ওয়াইফাই ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অতএব, বিনা অনুমতিতে অপরের জিনিস ব্যবহারের মতোই এমন ওয়াইফাই ব্যবহারও শরিয়তে অনুমোদিত নয়। অবশ্য মালিক জানা থাকলে, তার সাথে কথা বলে সম্মতি নিয়ে ব্যবহারে কোনো দোষ নেই। যদি কেউ ব্যবহার করে থাকে, তা হলে সুযোগে এর বিনিময় বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ইচ্ছা মনে পোষণ করতে হবে। সম্ভব না হলে আন্দাজ করে কিছু টাকা ওই মালিকের নামে আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়া ভালো। কোনো পাবলিক প্লেসে বা যে কোনো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থায় ওয়াইফাই ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। যদি নিজের ঘরেও ব্যাপক আকারে অন্য কারো লাইন এভেইলেবল থাকে, মনে হয় মালিকের কোনো অসুবিধা হবে না, বা জানলেও তারা কিছু বলবে না, তা হলে মাকরূহ পর্যায়ে (শরিয়তে অপছন্দনীয় ও অনুত্তম কাজ হওয়া সত্তে¡ও) এর ব্যবহার অনুমোদিত হতে পারে।
প্রশ্ন : আমার স্ত্রী মারা গেছে, এমন অবস্থায় তার ভাগ্নির মেয়ে বিয়ে করতে পারব? শরিয়তসম্মতভাবে জায়েজ কি না?
উত্তর : স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় একই সাথে তার আপন বোন, ভাগ্নি, ভাগ্নির দিকে নাতনি কাউকেই বিয়ে করা জায়েজ নেই। বরং তাদের সাথে কঠোর পর্দা আছে। কারণ, স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাদের কোনো একজনকে বিয়ে করা যাবে। শরিয়তের মূল নীতিটি জেনে রাখলে সহজ হবে, ‘যে মেয়েটি পুরুষ হলে আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারত না এমন মেয়েকে স্ত্রীর সাথে একত্রে বিয়ে করা জায়েজ নেই।’ ওপরের সম্পর্কগুলো এমন। কিন্তু স্ত্রী না থাকা অবস্থায় অন্যসব দিকে মিল হলে এদের একজনকে বিয়ে করা জায়েজ।
প্রশ্ন: আমার কোন বংশধর নেই। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি সবটুকু বিক্রি করতে চাই। আমার সহোদরদের পুর্ণ সম্মতি আছে। ইসলাম কি বলে ? শুনেছি পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করতে নেই। তাছাড়া চাচাত ভাইয়েরা ভিটাখানা দখলে নিয়ে নিয়েছে, কি করা উচিত? আমি নিজের বংশের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে আগ্রহী নই। জমি যদি চাচাত ভাইদের কাছে বিক্রি করি, তবে মুল্য নিয়ে ঠকার সম্ভাবনা আছে। বাইরের কারো কাছে দেয়া জায়েজ হবে?
উত্তর : আপনার বংশধর নেই। মানে আপনি নিঃসন্তান বা বিয়ে শাদী করেন নি। এখানে আপনার সম্পত্তি পরবর্তীতে ভাই-ভাতিজারা পাবেন। তারা যদি সম্মতি দেয় (যদিও এটি জরুরী নয়, সৌজন্য মাত্র) তাহলে পৈত্রিক সম্পত্তি সবটুকু বিক্রিতে শরীয়ত কোনো বাধা দেয় না। এতে কোনো অমঙ্গলও হয় না। তবে মানুষ সম্পূর্ণ বাস্তুহারা বা ছিন্নমূল যেন না হয়ে যায় এজন্য আমাদের সমাজে একটি রীতি চালু আছে নিজের পৈত্রিক ভিটাটুকু বিক্রি না করার। এতে মানুষ ঠিকানাবিহীন হয়ে যায়। এটি শরীয়তের বিধান না হলেও সামাজিক একটি সুন্দর রীতি। শরীয়ত একে মন্দও বলে না, ভালোও বলে না। তবে প্রচলিত ভালো রীতি শরীয়ত উৎসাহিত করে। এখন আসুন আপনার চাচাতো ভাইদের কথায়। আপনি ও আপনার আপন ভাইয়েরা আপনার জায়গায় থাকেন না। চাচাত ভাইয়েরা এজন্যই আপনার জায়গায় উঠেছে। আপনি মামলা করতে পছন্দ করেন না, এটি খুবই ভালো কথা। আপনি সম্ভব হলে কিছুটা ঠকেও জায়গাটি নিজ বংশের লোকদের দিয়ে দিন। এমন হতে পারে যে, বাজারমূল্য নির্ধারণ করুন, এরপর যা তারা দেয় তা গ্রহণ করুন, বাকীটা তাদের সওয়াবের নিয়তে ছাড় দিয়ে দিন। আত্মীয়দের প্রতি ইহসানের সওয়াব অনেক বেশি। এরপরও আপনার পূর্ণ অধিকার আাছে বাইরের লোকের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করার এবং চাচাত ভাইদের উচ্ছেদ করে ক্রেতাকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার। এতে আপনার গুনাহ হবে না। তবে অনেক অনেক সওয়াব থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। এখন আপনার ইচ্ছা।
প্রশ্ন : আমার মা গত ২০১৭ সালে দীর্ঘ দিন কিডনি, ক্যান্সারসহ নানা জঠিল রোগে ভুগে আমার উপর বেশ রাগ, অভিমান নিয়ে মারা গেছেন। মা খুব অসহায় অবস্থায় মারা যান। বড় সন্তান হিসেবে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করিনি। অনেক অবহেলা করেছি, রাগারাগি করেছি, তার চিকিৎসাও ঠিকমতো করিনি। আমি এখন খুব মর্মাহত, ক্ষমা পাওয়ার উপায় আছে কি?
উত্তর : যে বিবরণ আপনি দিয়েছেন, এটি আপনার অনুশোচনা ও অনুতাপ থেকেই এসেছে। এরই নাম তওবা। আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে খুব কান্নাকাটি ও মিনতি করে তওবা ইস্তেগফার করতে থাকুন। যে অপরাধ আপনি করেছেন, সেটি মূলত মায়ের কাছে। কারণ, এটি ছিল বান্দার হক। আল্লাহর নয়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনার আম্মাকে রাজী করিয়েও আপনাকে মাফ করতে পারেন। তবে আপনার অপরাধের নাম ‘ওকুকুল ওয়ালিদাইন’। যা শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ। বড় ছেলে হিসাবে মায়ের প্রতি এত অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা কেন দেখালেন? আপনার এ আচরণ অনেকটাই অমানবিক নির্মমতার পর্যায়ে পড়ে। আপনার গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন। তবে, মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া বাকি রয়ে গেছে। মা হয়তো অভিমান করে চলে গেলেও আপনাকে ক্ষমা করেও দিয়েছেন। মায়েরা এমনই হয়। এরপরও আপনার জন্য তিনটি পথ শরিয়তে খোলা আছে। ১. মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ২. দান, সদকাহ, নফল ইবাদত ইত্যাদির মাধ্যমে মায়ের নামে সওয়াব পাঠানো। ৩. নিজের ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে আজীবন রোনাজারি করে যাওয়া। যা প্রথমেই বলা হয়েছে।
প্রশ্ন: গত বছর আমার শ্বশুর মারা যান। আমার শ্বশুরের কোন ছেলে নেই। এমতাবস্থায় আমার শাশুড়ী আমাকে নিয়ে পবিত্র হজ্জ পালন করতে চান। আমার হজ্জের খরচ তিনি বহন করবেন। এটা কতুটুকু শরীয়ত সম্মত? আবার আমি কি আমার শ্বশুরের বদলী হজ্জ করতে পারব?
উত্তর : শাশুড়ীকে সাথে নিয়ে মেয়ের জামাতা হিসাবে আপনি হজ্জ পালন করতে পারেন। কারণ, আপনি তার মাহরাম (মাহরাম এমন আত্মীয়কে বলে যার সাথে বিয়েশাদি চিরতরে হারাম)। মহিলাদের হজ্জের সফরে মাহরাম থাকা জরুরী। যদি সহজে মাহরাম হজ্জ যাত্রী পাওয়া যায়, তাহলে মহিলাদের হজ্জ ফরজ হয়। অতএব, অনেক সময় দেখা যায়, মহিলারা দু’জনের খরচ জোগাতে পারলেই তাদের হজ্জ ফরজ হয়। যদি এমনিতেই মাহরাম পুরুষ নিজে হজ্জ যাত্রী হয়, তখন মহিলাদের একটি হজ্জের খরচ থাকলেও হজ্জ ফরজ হয়ে যায়। তিনি আপনার ব্যয় বহন করতে পারেন। প্রথম হজ্জটি হবে আপনার নিজের। খরচ যেই দিক, নিয়ত অনুযায়ী হজ্জ হবে। পরে অন্য সময় বদলি হজ্জ করবেন। অবশ্য নিজে হজ্জ পালন করার আগেও অন্যের বদলি হজ্জ করা জায়েজ। আপনার ওপর হজ্জ ফরজ হয়ে থাকলে শাশুড়ীকে বুঝিয়ে তার সাথে নিজের হজ্জটি করে নিন। আবার আপনি অবশ্যই বদলি হজ্জ করতে পারবেন। এটিই বরং বেশি নিয়মসিদ্ধ হবে।
প্রশ্ন : আমি কি আমার মেয়ের নাম জাসিয়া হুসেন রওজা রাখতে পারি? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর : রাখতে পারেন। কারণ এর তিনটি শব্দের কোনোটিই ইসলামবিরোধী কিছু বোঝায় না। অর্থবোধক ও রাখার উপযুক্ত নাম।
সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।