Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারে মাঠে পুলিশ-র‌্যাবের একাধিক টিম

ইডেন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল হত্যা মামলা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ইডেন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহভাজন দুই গৃহকর্মীকে গতকালও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জড়িতদের গ্রেফতারে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযানে রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম। তবে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ রুনু আক্তার নামে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি নিহতের বাসায় ওই দুই গৃহকর্মীকে এনে দিয়েছিলেন। এছাড়া লুণ্ঠিত মালামালও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকান্ডে একাধিক লোক জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। নজরদারিতে ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউমার্কেট থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর থেকে দুই গৃহকর্মী রেশমা ও স্বপ্না পলাতক রয়েছে। তারা পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদের যে কোন সময় গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। এদের গ্রেফতারে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক টিম কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও বেশ অগ্রগতি রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট নিউ মার্কেট থানার একজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সাবেক প্রিন্সিপাল হত্যার ঘটনায় একাধিক লোক জড়িত থাকতে পারে। কারণ হত্যার সময় কেউ বালিশ চাপা দিয়ে ধরেছে, কেউ পা ধরেছে, কেউ হাত আবার কেউ মুখে আঘাত করেছে। যার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এজন্য ড্রাইভারকেও সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আরো হবে। তাকে পুলিশ নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। যেহেতু তার নাম এজাহারে উল্লেখ নেই তাই এখনই তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রুনু আক্তারকে গত সোমবার রাতে আটক করা হয়েছে। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রেশমা ও স্বপ্নাকে ধরতে রুনু আক্তার সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে এ হত্যার সাথে রুনু আক্তার জড়িত ছিলেন কিনা। তবে বাদী যেহেতু দুই আসামীর নাম উল্লেখ ছাড়াও রুনু আক্তারের নাম এজাহারের শেষে জড়িত থাকার সন্দেহে উল্লেখ করেছেন তাই তাকে আটক করা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি নিহতের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত কাদির গামা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রায় দু মাস আগে রুনু আক্তার নামে এক নারী দুই গৃহকর্মী-রেশমা ও স্বপ্নাকে তাদের বাসায় আনেন। এছাড়া আগে থেকেই একজন বয়স্ক গৃহকর্মী ছিল এই বাসায়। এই তিনজন মিলে বাসার কাজের পাশাপাশি ৬৬ বছর বয়সী সাবেক প্রিন্সিপালকে দেখাশোনা করতেন। বাসাটি ডুপ্লেক্স হওয়ায় উপরের তলায় প্রিন্সিপাল ও তার স্বামী থাকতেন আর নিচ তলায় রান্নাঘর ও গৃহকর্মীরা থাকতেন। ঘটনার দিন গামা বাসার বাইরে ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে দরজা বন্ধ পেয়ে ডাকাডাকি করলে বয়স্ক গৃহকর্মী দরজা খুলে দেন। বাসার ভেতরে ঢুকে তিনি আলমারী ভাঙ্গা দেখতে পান। এরপর স্ত্রীকে বালিশ চাপা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেন। রেশমা ও স্বপ্নাকে না পেয়ে বুঝতে পারেন তারা তার স্ত্রীকে হত্যা করে টাকা পয়সা ও স্বর্ণাঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় যে ফোনটাতে তাদের দুজনের ছবি তুলে রাখা হয়েছিল সেই ফোনটাও নিয়ে যায়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করেছেন, রেশমা ও স্বপ্নার সাথে গৃহকর্মী এনে দেয়া রুনু আক্তারও জড়িত থাকতে পারে। তাই তাকেও সন্দেহের বাইরে রাখতে চান না। সেজন্য তাকেও আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
গাড়িচালক সুজন শেখের বরাত দিয়ে ইসমত কাদির গামা এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাড়িচালক সুজন শেখ তার স্ত্রীর কাছ থেকে মাসিক বেতনের টাকা নিয়েছেন। এ থেকে তিনি ধারণা করছেন, বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে দুই গৃহকর্মী তার স্ত্রীকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এজাহারে তিনি প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা বিষয়টির ছায়া তদন্ত করছি। দুই গৃহকর্মীকে গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এদিকে নিহতের সাবেক কর্মস্থল ইডেন মহিলা কলেজসহ এলিফ্যান্ট রোডের বাসার সামনে ও স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে সোমবার সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে সাবেক প্রিন্সিপাল মাহফুজা চৌধুরীর লাশ দাফন করা হয়। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ