Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুটবলার সুজনের বাঁচার আকুতি

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অন্যতম দল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক ফুটবলার শাহজাহান আহমেদ সুজনের এখন শুধুই বাঁচার আকুতি। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে প্রায় শয্যাশায়ী তিনি। পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না এই ফুটবলার। ভাবছেন নিজ চিকিৎসার সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে আবেদন করবেন। সহায়তা চাইবেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও। যে কারণে সুজন বেশ ক’দিন ধরেই দেখা করার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদের সঙ্গে। তার মাধ্যমেই সুজন সহায়তা চাইবেন প্রধানমন্ত্রীর।

রাজধানীর লালবাগস্থ পোস্তার বাসিন্দা চার সন্তানের জনক মো: জিন্নাত আলী’র (৬০) দ্বিতীয় সন্তান সুজন। লালবাগ কেল্লার মোড়ে বৃদ্ধ জিন্নাত আলী ফল ও সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন। থাকেন ভাড়ার বাসায়। সুজনদের সংসারে একমাত্র ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই চান মিয়া একটি গার্মেন্টসে সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন। এখন তাও বন্ধ। হাজার দশেক টাকা আয় হতো, যা দিয়ে তাদের বাসা ভাড়ার খরচ চলতো। বাবার ফুটপাতে ফল-ডিম বিক্রি ও ছোট ভাইয়ের মেয়েদের পোশাকের ছোট্ট একটা দোকান আর সুজনের ফুটবল খেলার টাকায় চলতো তাদের সংসার। সুজন কিডনি রোগে আক্রান্ত ও বড় ছেলে বর্তমানে বেকার থাকায় সংসারের ঘানি টানতে রীতিমতো হয়রান বৃদ্ধ জিন্নাত। সুজনের চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছেন না তিনি। আয়ের পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন টিকে থাকাই দায় সুজনদের পরিবারের।

প্রায় তিন বছর আগে প্রিমিয়ার লিগে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সুজন। ফুটবল ক্যারিয়ারটা ভালোভাবেই গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিপিএলের ২০১৬ মৌসুমে ১৫ নম্বর জার্সি গায়ে পুরোনো ঢাকার ক্লাব রহমতগঞ্জের রাইটব্যাক হয়ে মাঠে নামেন তিনি। ওই মৌসুমের খেলা শেষ করে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। যা ছিল সুজনের গরীব বাবার মাথায় বাজ পড়ার মতো খবর। দেরিতে রোগ ধরা পড়ায় চিকিৎসার শুরু থেকেই ডায়ালাইসিস করাতে হয় তাকে। তিন মাস দেশে চিকিৎসা করে গিয়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ে। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। যার সম্ভাব্য খরচ পড়তে পারে ২০/২২ লাখ টাকা। এই হিসাব চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপন তো দূরের কথা, এখন নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতেই হিমশিম খাচ্ছেন ২৭ বছর বয়সি ফুটবলার সুজন। মাসে ৮ থেকে ১০ বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতিবার খরচ পড়ে ১৫০০ টাকা করে। ধার-দেনা ও অনেকটা হাত পেতেই চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন এই ফুটবলার। ফুটবল খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এখন তার কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ক’দিন আগে ঢাকা আবাহনীর ক্লাব ভবনে গিয়েছিলেন। সেখানকার ফুটবলাররা ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন সুজনের হাতে। বিজেএমসির ফুটবলাররা দিয়েছেন ৫ হাজার টাকা। সাড়ে ১৩ হাজার টাকা পেয়েছেন নিজ ক্লাব রহমতগঞ্জের ফুটবলারদের কাছ থেকে।

ফুটবল খেলে মোটামুটি রোজগার হতো সুজনের। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল অগ্রণী ব্যাংকে খেলে পেয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন রহমতগঞ্জে খেলে। তখনই ছোট ভাইকে একটি দোকান করে দিয়েছিলেন সুজন। যার মাসিক ভাড়া ৬ হাজার টাকা। সেটাও এখন ছাড়তে হবে। কারণ, ভাড়া মেটানো মুশকিল।

বাঁচার আকুতি নিয়ে সুজন বলেন,‘এখন আমার কেবল বাঁচতেই ইচ্ছে করে। ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে কীভাবে বাঁচবো? তাই আমি সবার সহযোগিতা চাই। প্রধানমন্ত্রী অনেক অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করেন। আমার বিশ্বাস তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারলে আমিও সহযোগিতা পাবো। সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আমার আবেদন, আপনারা আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটবলার


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ