মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কলকাতা পুলিশ-সিবিআই সঙ্ঘাতের জেরে গতকাল উত্তাপ ছড়ায় সংসদ থেকে আদালত পর্যন্ত। গতকাল সকাল থেকেই সংসদের উভয় কক্ষে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল এমপিরা। তৃণমূল এমপিদের বিক্ষোভের জেরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লোকসভা মুলতবি করে দেন স্পিকার। ফের অধিবেশন শুরু হল তৃণমূল এমটি সৌগত রায় দাবি করেন, অভূতপূর্ব ঘটনার ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে দিতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের বাধার বিষয়টি আদালতে তুলে প্রতিকার চায় সিবিআই। কিছুটা শুনারি পর আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কেন্দ্রের শাসন জারির আশঙ্কা দেখা দেয় বিজেপি থেকে। রাজ্যে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তার কাছে রাজ্য বিজেপির নেতারা প্রেসিডেন্ট শাসনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। তাদের আশঙ্কা, তাতে মমতার হাত আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। পুলিশের সাথে সঙ্ঘাতের বিষয়টি সামাল দিতে আজই পশ্চিমবঙ্গে যেতে পারেন সিবিআই-এর নবনিযুক্ত ডাইরেক্টর ঋষি কুমার শুক্লা।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘সংবিধান রক্ষা’য় অবস্থান ধর্মঘটে বসে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআইয়ের হানা দেওয়ার ঘটনা নিয়ে সুর চড়ান। তিনি বলেন, ‘রাজীব চোর? আমি ওর জন্য জীবন দিতেও রাজি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘রাজীব কুমার চোর? কার টাকা নিয়েছে ও? আমি চোর? কার টাকা নিয়েছি?’ এরপরই তিনি বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে লড়াই করব আমি। কী হবে আমার? ৩৫৬ ধারা? আমার কাছেও ৪২০ ধারা রয়েছে।’ তিনি আবারও সতর্ক করেন, “৩৫৫, ৩৫৬ হবে? এত সস্তা? আমাদেরও ১৪৪ রয়েছে।’ উল্লেখ্য, ১৪৪ ধারার কথা উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রী কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, যদি ৩৫৫, ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা হয়, তবে রাজ্যে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন তিনি।
ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে ধর্মঘটস্থলের পাশে গতকাল একদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক সারেন মমতা, একইভাবে ধর্মঘট মঞ্চেই পুলিশ পদকও বিতরণ করা হয়। আর এ অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান রাজীবের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে ওঠে। একজন আইপিএস অফিসার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সিবিআই বিষয়টি আদালতে তোলে যার শুনানি গতকাল কিছুটা হয়েছে এবং বাকিটা আজ অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনার যদি স্বপ্নেও তথ্যপ্রমাণ নষ্টের কল্পনা করেন তাহলে তার প্রমাণ আদালতে পেশ করুন। তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেব যে সারা জীবন পস্তাবেন’।
গতকাল মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই আন্দোলন কারোর একার নয়। যারা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক কাঠামোয় বিশ্বাস রাখেন, তারাই এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।’
গত রোববার রাত ৮.৪০ মিনিট থেকে ধর্মতলা মেট্রো চ্যানেলে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী শনিবার থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তাই শুক্রবার পর্যন্ত তিনি অবস্থান ধর্মঘট মঞ্চে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য এরপরও অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে, তবে মাইক বাজানো হবে না। আজ (মঙ্গলবার) অবস্থান ধর্মঘট মঞ্চে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধি দলের যোগ দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘আইন আইনের পথে চলবে। আইন মেনে কোনো কিছু করা হলে, আমরা বাধা দিই না। কিন্তু এখানে সাংবিধানিক ও ব্যক্তিগত অধিকার খর্ব করা হয়েছে।’
এদিকে ‘সংবিধান রক্ষায়’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান ধর্মঘটে ফের একজোট হয়েছে বিরোধীরা। রোববার রাতে অবস্থান ধর্মঘটে বসার পর থেকেই একে একে ফোন আসতে শুরু করে বিজেপি বিরোধী দলগুলির। পাশে থাকার কথার জানিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে এইচডি কুমারস্বামী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, লালু প্রসাদ যাদব, চন্দ্রবাবু নাইডু, মেহবুবা মুফতি, মায়াবতী, স্তালিন, হার্দিক প্যাটেলসহ প্রায় সব বিরোধী দলের নেতারা। বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের গতকাল মমতার সঙ্গে দেখা গেছে। ধর্নার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। সকাল হতে না হতেই মেট্রো চ্যানেলে দলের সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
সারদা কান্ডের তদন্তের ব্যাপারে রোববার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে অভিযানে গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসাররা। তখন তাদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রীতিমতো ‘ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে সিবিআই অফিসারদের পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এখান থেকেই আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। সিবিআই হানার খবর পেয়েই সিপি-র বাড়িতে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদস্থ পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। তারপরই তিনি ঘোষণা করেন মোদী সরকারের হাত থেকে দেশের সংবিধানকে ‘বাঁচাতে’ অবিলম্বে ধর্না (অবস্থান ধর্মঘট)-এ বসবেন। সেই ঘোষণার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে ধর্না শুরু করেন মমতা।
রোববার রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ধর্না মঞ্চের পিছনেই রয়েছে কলকাতা পুলিশের একটি আউটপোস্ট। সেখানেই মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় আধ ঘণ্টার বৈঠকে মূলত আলোচনা হয় বাজেট নিয়ে। বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার আগে মন্ত্রিসভার অনুমতি নিতে হয়। সেই জন্যই এই বৈঠক। বৈঠকের পর মন্ত্রীরা বিধানসভায় যান। সেখানে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
সিবিআই বনাম কলকাতা পুলিশের সঙ্ঘাতে এবার সিবিআই-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তবকে নোটিস ধরাল কলকাতা পুলিশ। গতকাল দুপুরেই নিজাম প্যালেসে যায় ভবানীপুর থানার পুলিশ অফিসারদের একটি দল। তারাই জয়েন্ট ডিরেক্টরকে ওই চিঠিটি দিয়ে আসেন। সিবিআই-এর পক্ষ থেকে সে কথা স্বীকারও করা হয়েছে। পঙ্কজ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের নোটিস পেয়েছি। আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে সঙ্ঘাত বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে গোপন রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বিষয়টি নিয়ে রোববার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে ফোনে একপ্রস্থ কথা হয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে ডেকে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন। তার ভিত্তিতেই রাজ্যপালের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়।
এদিকে, বাংলার সিবিআই-পুলিশ দ্বৈরথের আঁচ পড়ে দিল্লিতেও। সিবিআই-এর ভূমিকার প্রতিবাদ করেন বিরোধীরা। এদিন সংসদে গুলাম নবি আজাদের ঘরে একপ্রস্থ বৈঠকে করেন বিরোধী নেতারা। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়াও, ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স, সিপিএমসহ অন্য বিরোধী দলের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সূত্র : এবিপি আনন্দ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।