মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দারলা আবু শানাব যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা রাজ্যের ডেট্রোয়েটে লেক শহরে বড় হয়েছেন। তার রয়েছে উজ্জ্বল নীল চোখ আর জার্মান এবং স্কান্ডেনেভিয়ান যোগসূত্র। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে তিনি একজন মুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তাদের চার সন্তান রয়েছে।
দারলা আবু শানাব তার নতুন ধর্ম সম্পর্কে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি অন্য সবার মতই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই আমি কর্ম ক্ষেত্রে হিজাব পরিধান করতে শুরু করি। আমার সহকর্মীগণ বলেছিলেন তারা আমাকে সমর্থন করেন এবং আমাকে ভালোবাসেন।’
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে দারলা আবু শানাব তার কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরিধান করে আসতে শুরু করেন। দিনটি ছিল এমন একটি যোগসূত্রের মত যাকে এখন তিনি তার বিশ্বাসের জন্য একটি পরীক্ষা বলে মনে করেন। তার এমন সিদ্ধান্তে পরবর্তী সপ্তাহ জুড়ে তাকে তার ধর্ম বিশ্বাসের পরিবর্তন সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু এর ১০ দিন পরে ১১ সেপ্টেম্বর আসল আর তা যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের জন্য অবিশ্বাসের আগুন জ্বালিয়ে দিল, একই সাথে দারলা আবু শানাব তাৎক্ষণিকভাবেই এর উত্তাপ টের পেতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সে দিনটির কথা স্মরণ করে এখনো কান্না করি কারণ সেদিন আমার স্বামী আমাকে ফোন কল করেছিল অথচ আমি ছিলাম মিশিগান শহরে আর আমার সন্তান ছিল একটি মসজিদের ধর্মীয় সেবা কেন্দ্রে।’
মূহূর্তে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, লোকজন মুসলিমদের ধরে ধরে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পেটাতে শুরু করেছে। সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের পূর্বেই তার মন ভয়ে কাতর হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে আমার হিজাব খুলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি বলেছিলাম, এটি আমাকে দশ বছর পরে আজকের এই দিনে নিয়ে এসেছে, হতে পারে এটি আমার জন্য কোনো পরীক্ষা।’
তার কর্মক্ষেত্র, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা তাকে সমর্থন দিয়েছিল কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উড়ন্ত পতাকা হাতে নিয়ে এক ব্যক্তি তাকে হুমকির সুরে কথা বলেছিল। তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণের পরে ঐ দিনের মত অনেক ঘটনাই আমার জীবনে অনেকবার ঘটেছিল।
একজন মুসলিম নারী হিসেবে তিনি শালীন পোশাক পরিধান করেন, প্রতিদিন প্রার্থনা করেন, মদ্য পান পুরোপুরি ত্যাগ করেন আর রমজান মাসে রোজা থাকেন। কিন্তু এসব কিছু ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে তার ভাষায়- ‘আমি অতীতে যা ছিলাম এখনো তাই রয়ে গিয়েছি।’ তিনি বলেন, প্রথম প্রথম উপবাস করতে আমার খুব কষ্ট হতো, কিন্তু চূড়ান্তভাবে আমি একে পুরষ্কারের প্রতিদান স্বরূপ নিয়েছি।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে দারলা আবু শানাব দুটি মিউজিক ব্যান্ডের গায়িকা ছিলেন, এর একটি হচ্ছে জেসিকা আর অন্যটির নাম হচ্ছে কাশ্মীর যারা রক এন্ড রোল গানের জন্য বিখ্যাত। তিনি পুল খেলা পার্টিতে তার স্বামীর সাথে পরিচিত হন। তার ভাষায়- ‘তিনি সেখানে এসেছিলেন বসন্তের ছুটি কাটাতে আর তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- ওহে, কেমন চলছে?’ আর এর পরে যা ঘটেছে তা তো ইতিহাস তৈরী করেছে। তারা ১৯৯০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দারলা আবু শানাব সে সময় অমুসলিম ছিলেন। এর পরে তার স্বামীর সাথে প্রচুর আলোচনার পরে তিনি এবং তার স্বামী একমত হন যে, ইসলাম ধর্ম আর খ্রিষ্টান ধর্মের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এর পূর্বে মুসলিমদের সম্পর্কে আমার ধারাণা ছিল তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে জানান যে, এটি একটি ভুল ধারণা এবং ইসলামের রীতি হচ্ছে যদি স্ত্রী কোনো অর্থ উপার্জন করে তবে তাতে হাত দেয়ার অধিকার স্বামীর নেই।’
দারলা আবু শানাবের কয়েকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে সকল শ্রেণীর লোকজনের সাথে মেশা এবং তাদের মধ্য থেকে ইসলামভীতি দূর করার চেষ্টা চালানো। তিনি বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত হচ্ছ অপরের প্রতি দয়ালু হওয়া এবং একে অন্যের খোঁজ খবর নেয়া। আপনি বামপন্থী কি ডানপন্থী তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমরা যাকে তোয়াজ করি তা হচ্ছে আমাদের একে অপরের প্রতি ভালো আচরণ করতে হবে।’
বর্তমানে তার অবসর সময় কাটে অভিবাসীদের শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে। গত বছর তিনি নয় সদস্যের একটি পরিবারের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যাদের পিতা আইএসআই কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েন। তার স্বামী একজন ফিলিস্তিনি যিনি কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি একটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে প্রযুক্তি বিষয়ক পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তারা ডেট্রোয়েটে শহরের একটি উপশহরের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।