Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মোদির আমলে ভারতে বেকারত্বের রেকর্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:১৩ পিএম

ভারতে ২০১৭-১৮ সালে দেশে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশ, যা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসের সমীক্ষায় সামনে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা কর্মসংস্থানের তথ্য এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সমীক্ষার ‘গোপন’ রিপোর্ট পাওয়ার দাবী করে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ না করা নিয়েই গত কয়েক দিন ধরে চলছিল বিতর্ক। অনুমতি থাকা সত্ত্বেও এই রিপোর্ট প্রকাশ না করায় বুধবারই পদত্যাগ করেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন (এনএসসি) বা জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান-সহ দুই সদস্য। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘এই রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের হাতেই। কখন প্রকাশ করা হবে, সেই সিদ্ধান্তও আমরাই নেব।’
এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে প্রকাশ করা না হলেও সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এই রিপোর্ট হাতে পেয়েছে। সেখানে দেখা যায় দেশে বেকারত্বের হার এখন আক্ষরিক অর্থেই আকাশচুম্বী। গ্রামের থেকে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার অনেকটাই বেশি। ভারতবর্ষের গ্রামে বেকারত্বের হার ৫.৩ শতাংশ, সেখানে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৭.৮ শতাংশে।
২০১৬ সালে মোদি সরকার নোটবন্দি ঘোষণা করার পর এটিই প্রথম সরকারি সমীক্ষা। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে, বিরোধীরা লাগাতার এই অভিযোগ তুললেও সেই সংক্রান্ত কোনও সরকারি রিপোর্ট এতদিন সামনে আসেনি। এই রিপোর্ট প্রকাশ নিয়েও বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে টালবাহানা। কেন্দ্রের বিরুদ্ধেএই রিপোর্ট চেপে রাখার অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান পি সি মোহনন।তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ বা এনএসএসও-র ২০১৭-১৮ সালের রিপোর্ট (যা আসলে কর্মসংস্থানের তথ্য ও পরিসংখ্যান) খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসেই প্রকাশ করার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছিল এনএসসি। কিন্তু তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।’ মোহননের সঙ্গেই ইস্তফা দেন এনএসসি-র আরও এক সদস্য জে ভি মীনাক্ষী। তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসের প্রাক্তন সদস্য এবং দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক।২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও তার আগেই তাঁরা ইস্তফা দেওয়ায় শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা।
এর আগে গড় জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছিল কেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছিল সংশোধনের নামে মনমোহন জমানার জিডিপি কমিয়ে দেখানো হয়েছে, পাশাপাশি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মোদি আমলের জিডিপি বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। নীতি আয়োগের মতো সংস্থাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। তার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিচালনার ক্ষেত্রেও উঠেছিল অহেতুক কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফা সেই বিতর্ক উসকে দিয়েছিল অনেকটাই। তালিকায় ছিল সিবিআই-ও। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মোদির সময়ে সিবিআইকে ‘খাঁচাবন্দী তোতাপাখি’ তে পরিণত করা হয়েছে। নীতি আয়োগ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই-এর পর সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হল জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন বা এনএসসি, এই অভিযোগ তুলতে দেরি করেনি বিরোধীরা।গত কালই, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম কটাক্ষ করেছিলেন, ‘পুনর্জীবন না পাওয়া পর্যন্ত এনএসসি-র আত্মার শান্তি কামনা করি। জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। সেই সঙ্গেই ‘সংশোধনহীন’ জিডিপি প্রকাশের বিরুদ্ধে এই এনএসসি-র লড়াইকে কুর্নিশ করি। দূষিত সরকারের অবহেলায় ২৯ জানুয়ারি আরও একটি স্বশাসিত সংস্থার মৃত্যু হল।’
রিপোর্টে দেখা যায় গ্রামের শিক্ষিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষপর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৯.৭ এবং ১৫.২ শতাংশ। সেই বেকারত্ব ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে গিয়ে পৌঁছেছে ১৭.৩ শতাংশে। গ্রামের শিক্ষিত পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৩.৫ এবং ৪.৪ শতাংশ। সেই বেকারত্বই ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৫ শতাংশে।
রিপোর্ট অনুয়ায়ী, গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবকদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার এখন শোচনীয়। ২০১১-১২ সালে সমাজের এই অংশের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৪ শতাংশে। গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রেও বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক। ২০১১-১২ সাল থেকে ২০১৭-১৮, এই ছয় বছরে তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ