Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের মোবাইল ইন্টারনেট সর্বনাশ করছে

গোদাগাাড়ী রাজশাহী উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ৬:০০ পিএম

রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিশু কিশোরদের হাতে হাতে এখন স্মার্ট মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ফোনে রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। এ নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। প্রযুক্তি নিয়ে শিশু-কিশোরদের অতি আগ্রহ ও সহজলভ্যতা শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোন নিয়ে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি হয়েছে। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের নিষিদ্ধ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইলের মাধ্যমে শিশুরা যে শুধু তার পরিবারের সদস্য, শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে তা নয়, একই সঙ্গে এর মাধ্যমে তারা পর্ণো ছবির প্রতিও আসক্ত হয়ে পড়ছে। উপজেলার

কয়েক বছর পূর্বে গুল গফুর বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ময়েন মাষ্টার তার এক ছাত্রীর সাথে পর্ণ ভিডিও তৈরি করে তা ইন্টারনেট ও মোবাইলে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ওই এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণীর মানুষ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ তীব্র আন্দোলন করেন। এর পর কলেজ অধ্যক্ষ গভর্নিং বডি সভা আহ্বান করে অভিযুক্ত শিক্ষক ময়েন আলিকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেন। অন্যদিকে গোদাগাড়ীর উপজেলার দিগরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে সহকারী লাইব্রেরীয়ান মোঃ শহিদুল ইসলামকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে গণ ধোলায় দিয়ে পুলিশের কাছে সোপার্দ করেছে স্থানীয় জনতা। স্থানীয় লোকজনসহ ওই এলাকার দ্বিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী আলী আহম্মদের মেয়ে তার মায়ের সাথে জালসা শুনতে যায়। এরই ফাঁকে দ্বিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেনীয়ান শহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে স্কুল ছাত্রীটিকে প্রসাব করার কথা বলে মায়ের কাছ হতে বাড়ীতে আসার বুদ্ধি দেয়। মেয়েটি তার কথা মতো বাড়ীতে আসে ও শহিদুল ইসলামও বাড়ীতে ঢুকে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে জড়িয়ে পড়ে। মোবাইলে তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে মেয়েটি আতœহত্যা করে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা নিজেদের তোলা আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে অভিভাবকরা আবদার পূরণের জন্য শিশুদের হাতে সহজেই তুলে দিচ্ছে মোবাইল সেট। যা শিশুদের নৈতিকস্খলনের সাথে কখনও কখনও ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। পৃথিবীতে শিশুদের অবাধে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। আমাদের দেশে এ নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: শাহাদুল হক বলেন, মোবাইল ফোন এখন মানুষের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানায়, এর ব্যবহার সচেতন না হওয়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হোন্ডা, বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রো চালায় এ যেন ফ্যশান এ পরিনত হয়েছে। ফলে মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটছে, অকালে ঝরে যাচ্চে তরতাজা প্রাণ। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন তাদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়ে অবশ্যই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে। একই সাথে স্কুল কলেজগুলোতেও ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমাদের দেশে শহর থেকে শুরু করে একেবারে অজপাড়াগাঁয়েও শিশু কিশোরদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায়। তারা মোবাইলে ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
১৮ বছরের কম বয়সীরা পাড়া মহল্লায় দোকান থেকে অবৈধভাবে সিম ক্রয় করে আইনের লঙ্ঘনও করছে। শিশু কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এই প্রবনতা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে সেলফির উন্মাদনায় বয়স্কদের তুলনায় এখন শিশু কিশোররাও পিছিয়ে নেই। সন্তান প্রাইভেট কোচিংয়ে গেলে বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকে। এজন্য শিশু বলেন আর কিশোর-কিশোরী বলেন তাদের হাতে বাবা-মায়েরা মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিচ্ছে। আর সেটাই কেউ কেউ অপব্যবহার করছে। অনেকেই বলেছেন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা কোচিংয়ে পড়তে গিয়ে মোবাইলফোনে সংযুক্ত ক্যামেরা দিয়ে স্কুল-কলেজের ছেলে শিক্ষার্থীরা তুলছে সহপাঠী মেয়ে শিক্ষার্থীদের ছবি। পরে ছবিগুলো অপব্যবহার করে আপত্তিজনকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে অন্য সহপাঠীদের মোবাইল সেট ও ইন্টারনেটে। অন্যদিকে, হঠাৎ মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে কৌতূহলবশত অবুঝ মেয়ে শিক্ষার্থীরা স্বল্প সময়ের কথোপকথনে অপরিচিতদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে প্রেমের সম্পর্কে। এদের অনেকে পরবর্তীতে ফোনে কথা বলা যুবকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। আর প্রতারিত হয়ে আবেগবশত এই কিশোরীরা কখনও কখনও বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন, শিক্ষার্থীদের ফেসবুক, পর্ণ ছবি দেখা, ডাউন লোড করা এটা এক ধরণের মানসিক রোগ। গোদাগাড়ীর কয়েকটি কলেজ, মাদ্রাসা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ৫ম. শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। তবে বেশিরভাগ বেসরকারী স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয়না। তবে শিক্ষককে ফাঁকী দিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শাখার শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে মোবাইল ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। অত্যন্ত দু:খ জনক হলেও বাস্তব সত্য অনেক পরীক্ষার্থী ও কক্ষ পরিদর্শক জেএসসি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যায়। কেন্দ্র সচিব কোন সময় শিক্ষার্থীদের মোবাইল জব্দ করলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে নিযোজিত ব্যক্তি ও কক্ষ পরিদর্শকদের মোবাইল জব্দ করেন না।অভিজ্ঞ সচেতন মহলের অভিমত মোবাইল ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি একটা নিয়ম করে শিশু কিশোরদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ