দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১. মো. ফারহানুল বারী দাইয়্যান, খেজুর বাগ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : দরূদ শরীফ ও সালাম পাঠ না করার ক্ষতি কি?
জবাব : আল্লাহ তায়ালার প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর সদা সর্বদা দরূদ শরীফ পাঠ করাও একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। এই আমল সঠিকভাবে পালন না করার কারণে একজন মুমিন ব্যক্তি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হন, কেননা হজরত ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মোকাশাফাতুল কুলুব’-এ উল্লেখ্য করেছেন যে, একজন বিখ্যাত বুজুর্গ বলেছেন, “দেহের সুস্থতা নির্ভর করে অল্প আহারের উপর, রূহের শান্তি নির্ভর করে গোনাহ পরিত্যাগ করার উপর এবং দ্বীন ও ইমানের সংরক্ষণ নির্ভর করে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠের উপর” একজন ইমানদারের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা যে কতখানি প্রয়োজন তা এই বাক্যের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায়।
ওলামায়ে কেরামের মতে, জীবনে একবার দরূদ শরীফ পাঠ করা ফরজ কোন কোন ওলামায়ে কেরামের মতে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাম শোনা মাত্র তাহার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজেব। যারা নাম শোনা মাত্র দরূদ শরীফ পড়ে না তাদের জন্য হাদিস শরীফে শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। অনেক হাদীসে তাদেরকে বদবখত ও কৃপণদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে তারা কেয়ামতের ময়দানে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চেহারা মুবারক দর্শন হতে বঞ্চিত থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অপরিসীম এহসান পাওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি প্রতিদান স্বরূপ তাঁর প্রতি দরূদ শরীফ পড়ে না সে এই রূপ শাস্তিযোগ্য হওয়াই স্বাভাবিক।
হজরত আবু হোরাইরা (রা.)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণিত তিনি বলিয়াছেন, যখন কয়েকজন লোক কোন মজলিসে বসে অথচ এই মসলিসে তারা আল্লাহ তায়ালারও যেকের করে না এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও প্রেরণ করে না। তখন এই মজলিস তাদের ক্ষতি ও মন্দ পরিণামের কারণ হবে। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। (তিরমিযি ও আবু দাউদ)
হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো কিন্তু আমার নাম শুনে আমার উপর দরূদ পড়ল না সে বখিল অর্থাৎ কৃপণ। (বোখারী, নেসায়ী)
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যে রোজ কেয়ামতে আমাকে দেখতে পাবে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে রোজ কেয়ামতে আপনাকে দেখতে পাইবে না? রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন বখিল, যে আমার নাম শ্রবণ করেও দরূদ পাঠ করল না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন যার সামনে আমার আলোচনা হলো এবং আমার নাম শুনেও দরূদ শরীফ পড়ল না ইহা বড় জুলুমের কথা।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, কোথাও লোকজন মজলিস করে বসে এবং আল্লাহ তায়ালার যেকের না করে এবং দরূদ শরীফ না পড়ে যদি মজলিস ভঙ্গ করে চলে যায় তবে কেয়ামতের দিন তা বিপদের কারণ হবে, বেহেশতি হলেও যেকের ও দরূদ শরীফ না পড়ার কারণে আফসোস করবে। যদি তারা যেকের দরূদ না পড়ে মজলিস ত্যাগ করে তবে তারা যেন মরা গাধার নিকট হতে উঠে গেল।
আল্লামা সাখাভী (রহ.)সহ ওলামায়েকেরাম এই বিষয়ে একমত যে, দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং তৎপর দরূদ শুরুতে, মাঝখানে ও শেষে পাঠ করলে দোয়া কবুলের ব্যাপারে আর কোন পরদা থাকে না।
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেহ আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করতে ইচ্ছা করলে প্রথমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করবে তারপর দরূদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করবে। এতে আশা করা যায় যে, তার দোয়াতে কামিয়াব হয়ে যাবে।
হজরত আনাস (রা.) বলেন- যেকোন দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ না করলে ঐ দোয়া বন্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু ঐ দুইটি কাজ করে দোয়া করলে উহা কবুল হয়ে যায়।
হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উপর দরূদ পাঠ করা তোমাদের দোয়াকে হেফাজত করে এবং উহা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কারণ হয়।
হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন যে, আমাকে এই কথা বলা হয়েছে দোয়াতে দরূদ শরীফ পাঠ না করা হলে দোয়া আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলে থাকে উপরে উঠতে পারে না।
আল্লাহ তায়ালার যেকেরের শান ও মরতবা যেমন-সুউচ্চ সেরূপ তাঁর হাবীবের দরূদের শানও উচ্চ। দরূদের ফজিলাত ইহা ব্যতিত আর কি বড় হতে পারে যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর একবার দরূদ পড়লে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন। এছাড়া ফেরেশতাদের দোয়া, গুনাহ মাফ, মর্যাদা বৃদ্ধি হওয়া, ওহুদ পাহাড় সমান নেকী লাভ করা, শাফায়াত ওয়াজেব হওয়া, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। তাঁর লানত হতে মুক্তি লাভ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নৈকট্য লাভ, মুনাফেকী হতে মুক্তি লাভ, হৃদয়ের মরিচা দূর হওয়া এরূপ অসংখ্য নেয়ামত ও বরকত লাভ করা। সর্বোপরি দরূদ শরীফ নেক আমল কবুলের গ্যারান্টিযুক্ত একটি আমল। দরূদ শরীফ পাঠ ত্যাগকারী এই সমস্ত নেয়ামত ও বরকত হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। সে ব্যক্তির জন্য আক্ষেপ যে সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এইরূপ মহান সম্পদ হতে বঞ্চিত রইল।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নিয়মিত দরূদ শরীফ পাঠ করবার তাওফিক দান করুন। আমিন!!!!!
উত্তর দিচ্ছেন মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক দেব নগরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।