Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের নাগরিকত্ব আইন : যার মূলে রয়েছে উগ্র মুসলিম বিদ্বেষ

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারতীয় লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাস হয়েছে। এই বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোকদের নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই সব ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্ব স্ব দেশ থেকে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে হতে পারে, এই বিলের উদ্দেশ্য তিন প্রতিবেশী মুসলিম দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিয়ে ভারত সরকার বিরল মহানুভরতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মোটেই তা নয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এ ব্যাপারে দলটির কোনো রাখ ঢাক নেই। হিন্দু ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকের প্রতি তার বিন্দুমাত্র অনুকম্পা ও সহানুভূতি নেই। একথা কারোই অজানা নেই, খোদ ভারতেই মুসলমানসহ বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রীস্টান, শিখ ও অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের লোকেরা নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। মুসলমান প্রধান বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে মুসলমানদের ভারতে যাওয়ায় কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তারপরও যদি কোনো কারণে এই তিন দেশের কোনো মুসলমান ভারতে গিয়ে থাকে, তার জন্য নাগরিকত্বের এই সুবিধা দেওয়া হয়নি। এখানে বিজেপি সরকারের উগ্র মুসলিম বিদ্বেষের সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। আসলে ভারতে মুসলমানসহ সকল ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় বিজেপি সরকারের শাসনে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মুসলমানরা সেখানে বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাদের ওপর বিজেপি ও উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোর জুলুম-নির্যাতন সবচেয়ে বেশি। অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো তুলনামূলকভাবে অনেক ক্ষুদ্র। তা সত্তে¡ও তারা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাদেরও মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার লংঘিত হচ্ছে। কাজেই এটা বলার কোনো অবকাশ নেই যে, কথিত অন্য সম্প্রদায়গুলোর প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাস করেছে।
এ বিলের অন্যতম উদ্দেশ্য এই হতে পারে যে, নাগরিকত্বের টোপ দিয়ে অন্যান্য সম্প্রদায় বাদে কেবলমাত্র হিন্দুদের ভারতে টেনে আনা। এ জন্য প্রতিবেশী তিন মুসলিম দেশকেই বেছে নেয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ যেমন, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারকে এতে শামিল করা হয়নি। ওইসব দেশেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস রয়েছে। নেপাল তো হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবেই পরিচিত। শ্রীলংকা ও মিয়ানমারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হিন্দু আছে এবং তারাও বৃহত্তম সম্প্রদায়ের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত ও উৎপীড়িত। এ থেকে এটা বিশেষভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, তিন মুসলিম রাষ্ট্রকে বেছে নেয়া হয়েছে উৎকট মুসলিম বিদ্বেষ থেকেই। বিজেপি সরকারের শাসনে সেখানে মুসলিম বিদ্বেষ কতটা ঘৃন্যতম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, গো রক্ষা আন্দোলন থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। গো রক্ষার নামে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং গরুর গোশত খাওয়া বা রাখার মিথ্যা অভিযোগে ঢালাওভাবে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। তাদের কয়েকজনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। গরুর গোশত শুধু মুসলমানরাই খায় না, খ্রীস্টানসহ আরও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা, এমন কি হিন্দুদেরও অনেকে, বিশেষত নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও খায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় মুসলমানরা যেহেতু গরুর গোশত খায় সে কারণে গরু জবাই ও গরুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিম বিদ্বেষ বশে খাদ্যের অধিকার থেকে ভারতীয়দের (যারা গরুর গোশত খায়) বঞ্চিত করা হয়েছে।
ভারতে আগা-গোড়াই মুসলমানরা বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। উপমহাদেশের বিভক্তি বা ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সেখানে হয়েছে, বিশে^র ইতিহাসে তার কোনো দ্বিতীয় নজির নেই। এসব সম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জানেমালে মুসলমানরাই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ও তার পরিবারভুক্ত বিজেপি, শিবসেনা, বজরং, বিশ^ হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন উগ্র হিন্দুত্ববাদে বিশ^াসী এবং তার প্রচার-প্রতিষ্ঠাতেই তারা নিয়োজিত ও সদাতৎপর। উগ্র হিন্দুত্ববাদের অভিমুখে আছে চরম মুসলিম বিদ্বেষ। অর্থাৎ উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম বিদ্বেষ একাকার। একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। সংঘ পরিবারের সব সংগঠনই ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র মনে করে এবং যেহেতু ঐতিহাসিকভাবেই সেখানে মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস রয়েছে সে কারণে তারা তাদের উৎসাদন করে হিন্দুরাষ্ট্রের পূর্ণতা দিতে চায়। এক্ষেত্রে অন্যান্য সম্প্রদায় ততটা বাধা নয়, যতটা মুসলমানেরা। তাই কার্যত মুসলমান বিতাড়ণই তাদের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তারা প্রকাশ্যেই মুসলমানদের অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা বলে। না হয় তাদের হিন্দু হয়ে যেতে বলে। বলে, হিন্দু হয়েই মুসলমানদের ভারতে বসবাস করতে হবে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ‘ঘর ওয়াপস’ নামে একটি কর্মসূচী নিয়েছিল। সে কর্মসূচীর লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনা। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে জবরদস্তিমূলক কিছু ঘটনাও ঘটে। তবে এতে বিশেষ কোনো সাড়া না মেলায় কার্যত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে, অতএব মুসলমানদের বিতাড়ন ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এজন্য এমন পরিবেশ বা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তারা স্বেচ্ছায় ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে, ভারতের অংশীদায়িত্ব মুসলমানদের জন্মগত ও ঐতিহাসিক। সেখানে এখন অন্তত ২০ কোটি মুসলমান বসবাস করে। তারা তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে যাবে কেন? ইচ্ছা করলেই তারা দেশ ছাড়তে পারে না। তাছাড়া তারা যাবে কোথায়? প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ তাদের নেবে কেন? এই বিপুল সংখ্যক মুসলমান ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আস্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। চাইলেই তাদের বিতাড়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে তাদের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার ফন্দিফিকির করা হচ্ছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে কিছু মুসলমানকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা এরই অপরিহার্য অংশ। আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তার তুলনা বিশে^র কোথাও নেই। আসামের মুসলমানেরা যুগের পর যুগ বংশ-পরস্পরায় সেখানে বসবাস করলেও লাখ লাখ আসামী মুসলমানের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী। তাদের ফেরৎ পাঠানো হবে। এ নিয়ে আসামসহ গোটা ভারতে তুলকালাম চলছে।
ভারতের সরকারি মহল থেকে শুরু করে সকল মহলই বলে থাকে, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় আধিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি মহলও অনুরূপ বক্তব্যই দিয়ে থাকে। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ভারতের চিহ্নিত সকল মহল আগের মতো এখনো বাংলাদেশীদের ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উপস্থাপন করে। বছরাধিককাল ধরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে আরম্ভ করে রাজ্য পর্যায়ের নেতারা পর্যন্ত যেভাবে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলছেন এবং বাংলাদেশে তাদের পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, সেরকমটা অতীতে কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্র, অথচ সেই বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বের কোনো প্রমাণ মিলছে না। বন্ধুকে মিথ্যা মামলায় কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিন্দুমাত্র কসুর করা হচ্ছে না। তারা নিজ দেশের মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার আয়োজন ও পাঁয়তারার মাধ্যমে, বাংলাদেশ যে ভারতের অবন্ধুরাষ্ট্র, সেটাই জানিয়ে দিচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র, এটাই তার বড় ‘অপরাধ’। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষ কতটা গভীরে প্রথিত তার আরেকটি বড় প্রমাণ, ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেয়ার ঘোষনা ও পদক্ষেপ। মিয়ানমার যে মুসলিম বিদ্বেষ থেকে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, নির্যাতন ও বিতাড়ন করছে, সেই একই মুসলিম বিদ্বেষ থেকে ভারত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করছে। ইতোমধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে ভারত মিয়ানমারের হাতে তুলে দিয়েছে। সম্প্রতি ১৩শ রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও তাদের অবস্থানকে অনিরাপদ করে তোলার কারণেই ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী ও জঙ্গী বৌদ্ধদের বেপরোয়া হত্যা-নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে যখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে এবং বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় প্রদান করে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গা বিতাড়নকে সমর্থন দিয়ে আসেন। তখনই ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা দেয়া হয়। সেই থেকে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের উৎপাত করা হচ্ছে ও তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এমতাবস্থায়, ফিরে যাওয়ার বা সেখানে তাদের ঠেলে দেয়ার অর্থ হলো, পুনরায় তাদের হত্যা-নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা। ন্যূনতম মানবিক বোধ ও বিবেচনা অবশিষ্ট থাকলে এটা কোনো দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। মানবতার প্রতি কোনোরূপ দায়বদ্ধতা প্রদর্শন না করেই ভারত রোহিঙ্গাদের তাড়াতে চাইছে এবং কার্যত তাদের ঠিকানা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ভারতের পক্ষে ৩০-৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া কি খুব কঠিন? পরিস্থিতি এমনভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে, ওই ৩০-৪০ হাজার রোহিঙ্গা আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশেই আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের ওপর এভাবে বোঝা চাপানো কি বন্ধুত্বের লক্ষণ বহন করে।’ আমরা দু:খের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমাদের সরকার কোনো ব্যাপারেই কোনোরূপ উচ্চবাক্য করছে না। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের অভিযোগ ও কথিত অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশ ফেরৎ পাঠানোর হুমকি, আসামের নাগরিকত্ব না দেয়া মুসলমানদের ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা এবং রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়া একই সূত্রে গাঁথা। এসবের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদার প্রশ্ন যেমন জড়িত তেমনি স্বার্থও জড়িত। রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়ার উদ্যোগ-পদক্ষেপ সফল হলে, আসামী মুসলমানদের ঠেলে দেয়ার বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। এরপর আসবে তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ফেরৎ পাঠানোর বিষয়টি। বলা যায়, খুবই সুপরিকল্পিতভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এসকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন হলেও সরকার নিরব, রাজনৈতিক দলগুলোও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের কাছে ভারতের চাওয়ার এমন কিছু নেই, যা বাংলাদেশ সরকার অবলীলায় দিয়ে দেয়নি। পক্ষান্তরে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার খাতা সম্পূর্ণ শূণ্যই পড়ে আছে। তারপরও সরকারি মহল ভারতের বন্ধুত্বের জয়গানে বুঁদ হয়ে আছে।
উল্লেখ করা দরকার, ভারতে অন্যান্য দেশ থেকে আসা শরণার্থী বিশেষ করে তিব্বত থেকে আসা বৌদ্ধ শরণার্থীদের ব্যপারে সে দেশের সরকার নিরব। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাদের ব্যাপারে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর পেছনে যে মুসলিম বিদ্বেষই চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করছে, তা বলাই বাহুল্য। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিলের পেছনেও মুসলমান বিদ্বেষই নিয়ামক। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার যে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক কর্মসূচী বিজেপির রয়েছে, এটা তারই অংশ। লোকসভায় এই বিল পাস হওয়ার পর সঙ্গতকারণেই সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপি সরকার ২০১৪ সালে প্রথম বিলটি পাসের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিরোধী দলের প্রবল আপত্তির মুখে তা স্থগিত করা হয়। বিজেপিবিরোধী সকল দল বিলের বিরোধিতা করে। কিন্তু লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সহজেই এবার বিলটি পাস হয়েছে। এ নিয়ে বিরোধীদলগুলোর সমালোচনা অব্যাহত আছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক সমাজও এর বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে। লোকসভায় বিল পাস হলেই তা আইনে পরিণত হবে না। এজন্য রাজ্য সভায়ও বিলটি পাস হতে হবে। রাজ্যসভায় পাস না না হওয়া পর্যন্ত বিলের কোনো কার্যকারিতা নেই। ভারতেরই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন বিজেপি এই বিলের মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদকে আরো উস্কে দিয়ে আগামী নির্বাচনে ফায়দা পেতে চাইছে। তবে এটা দলটির জন্য বুমেরাংও হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্বে এমন কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই যেখানে সব মানুষ একটিমাত্র ধর্মের অনুসারী। একধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের সুযোগও বিশ্বের কোথাও নেই। ভারত ঐতিহাসিকভাবেই বহু ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীর মানুষের দেশ। এখানে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যেমন আগেও ছিলনা, এখনো নেই। এটা একটা অলিক স্বপ্ন-কল্পনা, যার বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হবে না। কাজেই ভারতের অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি, নাগরিক সম্প্রদায় ও বিদ্ব্যৎ সমাজকে এই বিলের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হতে হবে, যাতে বিলটি রাজ্যসভায় পাস না হতে পারে। তাদের সকলেরই মনে রাখা প্রয়োজন, অসম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক ভারতই শক্তিশালী ভারতের নিশ্চয়তা দেয়।

 



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:৫৯ এএম says : 0
    ভারতের ক্ষমতাধররা এতই নিম্নে পৌঁছে গেছে 'যহারা অসহায় মানূষদেরকে নিরযাতন করিতেছে তাহারা আসলে মানূষ নামের অযোগ্য। ইনশাআল্লাহ। ওদের উপর আল্লাহ তা'আলার গজব পড়িবে। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:৩৮ এএম says : 0
    It's very clear to the world community's that Indian bjp administration is very crucial no tolarence to others except Hinduism but throughout the years they are enjoying the remittance from all over the world. What a shamless Irresponsible this India BJP government to the world community's..
    Total Reply(0) Reply
  • ব্রজেন্দ্র নাথ গাইন ২০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম says : 0
    ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পাকিস্থান মুসলিম রাষ্ট্র হলো অথচ ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ হলো,ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র হওয়া উচিৎ ছিল,এখুনি তা করা উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন