মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সউদী আরব পাকিস্তানের গভীর সমুদ্র বন্দর গোয়াদরে একটি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে নিশ্চিত করেছে। এটি এক বিরাট কৌশলগত অগ্রগতি। তা যে শুধু চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পকে জোরদার করছে তাই নয়, উপরন্তু তা সউদী আরব, পাকিস্তান ও চীনের সমন্বয়ে এক নয়া কৌশলগত অক্ষশক্তিকে প্রদর্শন করছে। সিপিইসির লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের মধ্যদিয়ে সড়ক, রেলপথ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক বিশাল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা। সউদী এ বিনিয়োগ সিপিইসিরই অঙ্ক।
চীনা অর্থায়নকৃত সিপিইসিতে চীন ৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিপিইসি হচ্ছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর স্বপ্নের আন্তদেশীয় বিশাল কানেক্টিভিটি উদ্যোগ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবর)-এর অঙ্ক। সম্প্রতি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে, চীনের ওবর প্রকল্পগুলো গ্রহিতা দেশগুলোকে ঋণজালে আবদ্ধ করেছে। কার্যত, দেশ দেউলিয়া হয়ে পড়বে এ আশঙ্কায় মালয়েশিয়া গত বছর দুটি বৃহৎ ওবর প্রকল্প বাতিল করে। এ ঘটনায় চীন গ্রহিতা দেশগুলোকে ঋণে বেঁধে ফেলছে ধারণা জোরদার হচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে গোয়াদরে একটি তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠার সউদী সিদ্ধান্ত সিপিইসি ও ওবরের জন্য এক জোর উৎসাহ হিসেবে এসেছে। এটা চীনা প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে আস্থা বৃদ্ধি করেছে ও সেগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার উপযোগী করেছে। যেমন দেখা যায় যে, ওবরকে বাস্তব রূপ দেয়ার দৃঢ়তা ও সম্পদ চীনের আছে। কিন্তু তার এখনো বিভিন্ন দেশকে এটা বোঝানো প্রয়োজন যে, এ প্রকল্গগুলো পারস্পরিক লাভজনক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত শক্তির লড়াইয়ে লিপ্ত চীনকে এখন এ বোঝানোর জন্য অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এদিকে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার মতো ঘটনা বেইজিংয়ের স্বার্থের সহায়তা করবে না। এক্ষেত্রে গোয়াদরে সউদী বিনিয়োগ যা সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরকালে স্বাক্ষরিত হবে, চীনের পরিকল্পনার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।
কিন্তু এখানে যা কৌত‚হলোদ্দীপক বিষয় তা হ’ল সিপিইসিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য রিয়াদকে উদ্বুদ্ধ করা। আমার বিশ্বাস এটা গত বছর সউদী আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের সাথে সম্পর্কিত। যদিও দু’দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব পুনরায় জোরদার করা অব্যাহত রেখেছে, আমেরিকার দুটি পদক্ষেপ রিয়াদকে ভুল ধারণা দিয়েছে। প্রথম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত বছর প্রকাশ্যে বলেন যে, মার্কিন সমর্থন ছাড়া সউদী বাদশাহ দু’সপ্তাহও টিকতে পারবেন না। এটা এমন সময় বলা হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র তেলের দাম কমানো এবং এ অঞ্চলে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতির জন্য আরো বেশি অর্থ দেয়ার জন্য সউদী আরবকে চাপ দিচ্ছিল। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, প্রকাশ্য অবমাননাকে রিয়াদ ভালোভাবে নেয়নি।
তারপর তুরস্কের ইস্তান্বুলে সউদী কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার জন্য মার্কিন সিনেট ডিসেম্বরে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে একটি প্রস্তাব পাশ করে। একই সময়ে ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে মার্কিন সাহায্য বন্ধের আহবান জানিয়ে পৃথক একটি প্রস্তাব পাশ করে মার্কিন সিনেট। এ কর্তনগুলো সউদী আরবকে বিপাকে ফেলে এবং তারপর আমার ধারণা যে, রিয়াদ তার কৌশলগত সম্পর্ক বহুমুখী করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানে চীনা প্রকল্পে বিনিয়োগ ছাড়া আমেরিকানদের চিন্তা করার জন্য তারা ভালো আর কী দিতে পারত। সন্ত্রাসবাদ ও আফগানিস্তান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাটানি চলছিল। সে শক্তিগুলোকে দেখা সহজ যেগুলো রিয়াদ, ইসলামাবাদ ও বেইজিংকে নিকটে এনে ত্রয়ীতে পরিণত করেছে।
এ ত্রয়ী জোট পুরনো মার্কিন-পাকিস্তান-সউদী আরব ত্রিভুজের স্থলাভিষিক্ত হবে। সর্বোপরি, চীন এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হতে চায় বলে মনে হয়। সে এখনো এই প্রক্রিয়া শেষ করেনি, কেউ জানে না আদৌ তা শেষ হবে কিনা। কিন্তু ট্রাম্প মিত্রদের প্রতি তার কঠোর পন্থা ও তাদের সাথে দাম্ভিক আচরণের মধ্যে দিয়ে চীনের জন্য তা সহজ করে দিচ্ছেন।
*রুদ্রনীল ঘোষের এ অভিমত ১৭ জানুয়ারি দি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।