মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের বিখ্যাত বাবরি মসজিদে ৬ মাস ধরে খোঁড়াখুঁড়ির পর ২০০৩ সালের আগস্টে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে (এএসআই) এলাহাবাদ হাইকোর্টকে জানায়, মসজিদের নিচে একটি মন্দির থাকার প্রমাণ মিলেছে। ১৯৯২ সালেই কর সেবক নামে একদল উগ্রবাদী হিন্দু গোষ্ঠী বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। তাদের দাবি, সেখানে রাম মন্দির ধ্বংস করে এই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। এএসআই’র বক্তব্যে সেই দাবি আরও জোরালো হয়। তবে সুপ্রিয় ভার্মা ও জয়া মেনন নামে দুই প্রত্মতাত্ত্বিক তখনই এএসআই’র বিরুদ্ধে খোঁড়াখুঁড়ি শুরুর আগেই পূর্বানুমান ধারণ করার অভিযোগ আনেন। সুপ্রিয় ভার্মা ভারতের জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ব বিভাগের অধ্যাপক। শিব নদর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান জয়া মেনন। তারা আদালতকে জানান, ওই খোঁড়াখুঁড়ি থেকে এমন কোনো প্রমাণ উঠে আসেনি যা এএসআই’র বক্তব্যকে সমর্থন করে।
২০১০ সালে তারা ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি নামে একটি সাময়িকীতে এএসআই’র অনুসৃত পদ্ধতি ও ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, তৎকালীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের চাপেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে বৈধতা দিতে ওই বক্তব্য দেয় এএসআই।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৬তম বার্ষিকীতে সুপ্রিম ভার্মা হাফিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ২০০৩ সালের খোঁড়াখুঁড়িতে যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়, সেগুলো মূলত এএসআই-এর আবিষ্কৃত। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে বি. আর. মনির নেতৃত্বে হওয়া এই খননে পদ্ধতিগত ত্রুটি হয়েছে। পরে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে তাকে এই খননকার্য থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৬ সালে এসে নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বি. আর. মনিকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করেছে।
সুপ্রিয় ভার্মাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোনো রামমন্দিরের ওপর বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমন কোনো প্রত্মতাত্বিক প্রমাণ রয়েছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, কোনো ধরনের প্রমাণ নেই। এমনকি আজও কোনো প্রত্মতাত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, বাবরি মসজিদের নিচে মন্দির রয়েছে। কিন্তু কী প্রমাণের ভিত্তিতে এএসআই এমন দাবি করেছিল, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খননকার্য থেকে এএসআই মূলত তিন খন্ড প্রমাণ পেয়েছে। একটি হলো পশ্চিমমুখী দেওয়াল। ৫০টি স্তম্ভের গোড়া। আর কিছু স্থাপত্য খন্ড। পশ্চিমমুখী দেওয়াল মূলত একটি মসজিদের বৈশিষ্ট্য। এই দেওয়ালের সামনে ফিরেই মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। এটি কোনো মন্দিরের বৈশিষ্ট্য নয়। মন্দিরের বৈশিষ্ট্য পুরোই আলাদা। অপরদিকে যে ৫০টি স্তম্ভের গোড়ার কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণই ভুয়া। আমরা আদালতের কাছে বহুবার এই অভিযোগ করেছি। আমাদের যুক্তি হলো, তারা যে জিনিসকে স্তম্ভের গোড়া বা ভিত্তি বলছে, তা মূলত ভাঙা ইটের খন্ড। এগুলোর ভেতরে মাটি। এসবের ওপর কোনো পিলার দাঁড় করানো একেবারেই সম্ভব নয়।
তৃতীয় প্রমাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আর্কিটেকচারাল কিছু অংশবিশেষ। তারা বলছে যে, ৪০০-৫০০ টুকরো পাওয়া গেছে। এগুলো মূলত যেকোনো ভবনেরই অংশ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে ১২টিকে তারা বলছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ১২টি খন্ড খননের সময় পাওয়া যায়নি। এগুলো মূলত মসজিদের মেঝের ওপর পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ থেকে নেয়া হয়েছে। সেখানে একটি মূর্তিসদৃশ ছিল, সেটাকে বলা হচ্ছে কোনো স্বর্গীয় জোড়া! কিন্তু সেটাকে সত্য ধরলেও সেখানে শুধু একজন পুরুষ, একজন নারীর প্রতিকৃতির মতো আছে, তা-ও অর্ধভাঙা। আর কিছুই সেখানে নেই! একটি মন্দির, যেটি কিনা প্রস্তর মন্দির বলে দাবি করা হচ্ছে, সেসব মন্দিরে আরও অনেক বেশি মূর্তি বা প্রস্তরে খোদাই করা জিনিস থাকার কথা। কিন্তু এমন কিছুই পাওয়া যায়নি। এছাড়া এই প্রস্তরের কোনো তারিখ নির্ণয় করা যায় না। এসব প্রস্তর যেকোনো সময়ের হতে পারে। এর সঠিক বয়স নির্ণয় করার কোনো উপায় নেই। অর্থাৎ এটি কোনো রাম মন্দিরের কিনা, তার কোনো প্রমাণই নেই। আর যেসব পিলারের গোড়া রয়েছে, সেগুলো আমার মতে স্পষ্টতই ১২ থেকে ১৫শ’ শতাব্দীর সময়কার। এএসআই নিজেও বলছে না, এসবের বয়স কতদিন। সুকৌশলে তা এড়িয়ে সংস্থাটি শুধু বলেছে যে, মসজিদের নিচে একটি মন্দির আছে। ব্যাস!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।