Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে এখন খুব দরকার বাক ও লেখার স্বাধীনতা

কলকাতায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ভারতের বিশিষ্টজনরা দেশ জুড়ে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং সৌজন্যহীনতার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বাক স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতা আমাদের দেশে এখন খুব দরকার। ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক সৌজন্যের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাদের কথায়। যারা এ নিয়ে কথা বলেছেন তারা হচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন গভর্নর গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। সোমবার কলকাতায় দুটি ভিন্ন অনুষ্ঠানে এ বিশিষ্টজনরা এ উদ্বেগ-সমমত প্রকাশ করেন। খবর আনন্দবাজার।
সোমবার এশিয়াটিক সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘নীরব থাকা নয়, বরং কথা বলতে হবে। সামগ্রিকভাবে অসহিষ্ণুতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপ‚র্ণ। আমি মনে করি, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি।’ পাশাপাশি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে যেভাবে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছে গেরুয়া শিবির, এদিন তারও সমালোচনা করেন তিনি। অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দীক্ষান্ত ভাষণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ইতিহাসকে যেন রাজনৈতিকভাবে পরিবর্তন করা না হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মাঝখানে ছোট ছোট দেওয়ালগুলি ভেঙে ফেলতে হবে। একতাই সম্প্রীতি। ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সৌজন্য যেন থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় রাজনৈতিক সৌজন্যের কথাও মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও মতের বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সৌজন্য থাকবে না কেন?’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তিনি বলেন, ‘মমতা যা বলেছেন, তা যুক্তিগ্রাহ্য এবং তথ্যভিত্তিক। আমি পূর্ণ সমর্থন করি। এই কেন্দ্রীয় সরকার লাগাতার ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় কিংবা কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, সেখানে হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে তথ্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’ তিনি আরো অভিযোগ করেন, এবারই প্রথম নয়, প্রথম এনডিএ সরকারের আমলেও একই চেষ্টা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইতিহাস কংগ্রেসে তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা ইতিহাস লিখতে শুরু করলে তথ্যের বিকৃতি ঘটবেই এবং সেটাই ঘটছে। ইতিহাসের কাজ সত্যকে সামনে নিয়ে আসা। আমি ভুল করলেও ইতিহাস সেই ভুল চিহ্নিত করে দেবে।’ ইতিহাস কংগ্রেসে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেছিলেন, ‘গান্ধীকে যে মেরেছিল, তাকেই এখন বরেণ্য বলে দেখানো হচ্ছে। এটাই ইতিহাসের বিকৃতি।’ সেই একই সময়ে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে ইরফান হাবিবও মন্তব্য করেছিলেন, ‘বিকৃত তথ্য ইতিহাস নয়, গল্প। এখন সেটাকেই ইতিহাস বলে চালানোর চেষ্টা চলছে।’
অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে বাক স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন রাজ্যের প্রাক্তন গভর্নর গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট প্রদান করে। গোপালকৃষ্ণ বলেন, ‘বাক স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতা আমাদের দেশে এখন খুব দরকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশে মুক্ত গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ