Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন মন্ত্রিসভা

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছে। এবারই প্রথম শপথ গ্রহণের আগে মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, তাদের নাম এবং কে কোন দফতর পাচ্ছেন, তা জানিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার যে ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই নতুন। স্বভাবতই নির্বাচনের পর কারা মন্ত্রীসভায় স্থান পাচ্ছেন, তা নিয়ে সবার মধ্যেই একটা আগ্রহ ও ঔৎসুক্য ছিল। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ আগেই বলেছিলেন, মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের চমক আসবে। বাস্তবেও সে চমক লক্ষ্য করা গেছে। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখের আধিক্যই লক্ষ্যনীয় নয়, আগের মন্ত্রীসভার ৩৬ জনই বাদ পড়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক জাঁদরেল মন্ত্রীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, নূরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুরূপভাবে এই সারিতে রাখা যায়, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুকেও। এরা ছিলেন ১৪ দলীয় জোটের শরীক স্ব স্ব দলের শীর্ষ নেতা। নতুন মন্ত্রিসভায় স্বপদে বহাল আছেন ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আকম মোজাম্মেল হক। আর আগের মন্ত্রিসভার পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হয়েছেন। আগের চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর মধ্যে দু’জন নতুন মন্ত্রীসভায় স্থান পেয়েছেন। এরা হলেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও মোস্তফা জব্বার। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে বাদ পড়েছিলেন এমন চারজন যথাক্রমে আবদূর রাজ্জাক, দীপুমনি, হাসান মাহমুদ ও মন্নুজান সুফিয়ান এবার মন্ত্রী হয়েছেন। মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৯ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৫ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী। যেহেতু টেকনোক্র্যাট তিনজন ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরীক দলের নেতাদের কাউকেই মন্ত্রী করা হয়নি, সুতরাং বলা যায়, এটা নিরংকুশভাবে আওয়ামী লীগেরই মন্ত্রিসভা। আগের দুই মন্ত্রিসভা এর ব্যতিক্রম ছিল।
এটা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে তার মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নে যাদের অধিকতর প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত মনে করেছেন, তাদেরকেই মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। এ জন্য দলের প্রবীণ নেতা ও অভিজ্ঞ মন্ত্রীদের বাদ দিতেও কিছুমাত্র দ্বিধা করেননি। তাদের বাদ দিয়ে নতুনদের মন্ত্রীসভায় সংযুক্ত করে তিনি কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। কিন্তু যারা তাকে জানেন, তারা স্বীকার করবেন, তিনি যে কোনো ঝুঁকি নেয়ার মতই একজন মানুষ। তার নেতৃত্বের গুনাবলী, প্রভাব ও ক্ষমতা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে তিনি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দৃঢ়তা দেখাতে পারেন। একথাও তো সত্য, সদ্যসাবেক অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই জনগণপর্যায়ে নানা অভিযোগ ছিল। তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, ব্যর্থতা, অক্ষমতা নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল, বির্তক ছিল। সুতরাং, অভিযুক্ত ও বির্তকিত মন্ত্রীদের নতুন মন্ত্রীসভায় স্থান না দেয়া অসঙ্গত বলে বিবেচিত হতে পারেনা। এতে বরং প্রধানমন্ত্রীর উচ্চ ভাবমর্যাদাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা তার অসম সাহসিকতার পরিচায়ক বলেই গণ্য হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় অনেকেই আনকোরা। রাজনীতিক হিসাবে তাদের পরিচিতি ও খ্যাতি থাকলেও মন্ত্রণালয় পরিচালনার অভিজ্ঞতা একেবারেই শূণ্য। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর কাজ করতে হবে। তাতে নানামুখী সমস্যা-সংকট দেখা দিতে পারে। তবে নতুন মন্ত্রীরা যদি সৎ হন, আন্তরিক হন, দায়িত্বশীল হন, সচেষ্ট হন, তবে সমস্যা-সংকট কাটিয়ে ওঠাও অসম্ভব হবে না। বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ মন্ত্রী মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে আ হ ম মুস্তাফা কামালের কথা প্রথমেই বলতে হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমর্যাদাও রয়েছে। তাকে নতুন মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনোনিত করায় অনেকেই মনে করছেন, আর্থিক যাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্ষম হবেন, যার প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। ওবায়দুল কাদেরের কথা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জনগুরুত্বসম্পন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে প্রশংসিত হয়েছেন। একইভাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আকম মোজাম্মেল হকের কথাও বলা যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। আফম মোজাম্মেল হকের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। অবশ্য দুয়েকজন মন্ত্রীর ব্যাপারে পর্যবেক্ষক মহলে সমালোচনা রয়েছে। শিক্ষার মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দীপুমনিকে দেয়া অনেকেরই পছন্দসই হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ব্যাপারেও ভিন্ন মত রয়েছে কারো কারো। কৃষি পরিবার থেকে উঠে এলেও তিনি পারিবারিকভাবে চালের ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত। চালের ব্যবসায়ীকে খাদ্যমন্ত্রী করা কতটা সঙ্গত হয়েছে, এমন প্রশ্ন তাদের। যা হোক, সব কিছুই সবার্ঙ্গসুন্দর হবে, এটা আশা করা যায়না। সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, মন্ত্রীসভা ইতিবাচক হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই।
নতুন-পুরানোর মিশেলে এ মন্ত্রিসভা যেমন চমক সৃষ্টি করেছে, তেমনি এর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। নতুন সরকারকে দুর্নীতি ও দৃর্বৃত্তায়ন রুখে দিয়ে সুর্নীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জারী হতে হবে। সন্ত্রাসী-গডফাদারের দৌরাত্ম্য থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে বেকারত্ম কমাতে হবে। গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। উৎপাদন-রফতানি বাড়াতে হবে। উন্নয়নের ধারা বেগবান করতে হবে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে গণতন্ত্রের বিকাশ তরান্বিত করতে হবে। মানবাধিকার লংঘন রহিত করে সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, উদ্দেশ্যের সততা এবং লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রতিজ্ঞা ও একাগ্রতা থাকলে সব কিছুই করা ও সফল হওয়া সম্ভব। আমরা নতুন মন্ত্রিসভাকে স্বাগত জানাই এবং তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।



 

Show all comments
  • Liton ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
    প্রশাসন এর এত অধ পতন এর পরেও আসাদুজ-জামাল কামাল এর সফলতা এটা কিবাবে সম্বব আমার বোঝতে পারিনী সফলতার একটু বেখ্যাজদি তুলেদরতেন তাহলে আমরা পরিস্কার হতাম ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রিসভা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন