Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দ আশরাফের দাফন সম্পন্ন

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বাদ আসর তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের জানাযার পর হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নেওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। সেখানে দুপুর সোয়া ১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তিনটায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাঁ মাঠে তৃতীয় জানাযা শেষে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মরদেহ ঢাকায় এনে আসরের পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সৈয়দ আশরাফ ৩ জানুয়ারি ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। ৬৭ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
সৈয়দ আশরাফের লাশ ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছায়। উড়োজাহাজ থেকে নামানোর পর লাশ গ্রহণ করেন তার ভাই সাফায়েত উল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা। বিমানবন্দরেই এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেওয়া হয় জাতীয় পতাকায়। সেখান থেকে আশরাফের লাশ নেয়া হয় বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে। রাতে আশরাফের লাশ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম নামাজে জানাযায় ছিল লাখো মানুষের ঢল। জানাযায় অংশ নেন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, ব্যবসায়ী ও সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সংসদ প্লাজায় এমপি বা সাবেক এমপিদের জানাযায় সাধারণ যত মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়, সৈয়দ আশরাফের জানাযায় উপস্থিতি ছিল কয়েক গুণ বেশি। দক্ষিণ প্লাজার ওপরের চত্বর পূর্ণ হয়ে সিঁড়ি এবং সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে জানাযায় অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ। মানুষের এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু আগে সৈয়দ আশরাফের কফিন সংসদ চত্বরে আনার পর একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে আশরাফের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। সংসদ সচিবালয় জামে মসজিদের ইমাম আবু রায়হানের পরিচালনায় জানাযা ও মোনাজাত শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জানাযার আগে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন জানাজায়। এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ইলিয়াস মোল্লাহ, আসলামুল হক ও সাদেক খান। মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্য ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন সৈয়দ আশরাফের জানাযায়।
এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতির মাঠে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিয়োগে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করা দুরূহ। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। আমাদের ছেড়ে তার চলে যাওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য এক বড় শূন্যতা।
এরপর হেলিকপ্টারে করে সৈয়দ আশরাফের লাশ কিশোরগঞ্জে নেয়া হয়। কিশোরগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার এ কে নাছিম খান জানান, লাখ লাখ মানুষের মানুষের অংশগ্রহণে কিশোরগঞ্জে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে লাশবাহি হেলিকপ্টার দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরন করে। সেখান থেকে দুপুর ১ টায় মরহুমের লাশ শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে পৌছে এবং দুপুর সোয়া একটায় মরহুমের জানাযার নামাজ শুরু হয়। প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টানে নামাজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই দূর দূরান্ত থেকে আসা সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে পাঁচ একর আয়তনের বিশাল ঈদগাহ মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিসিবির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি আফজাল হোসেনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানাযায় অংশ নেন। মরহুমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার তিন ভাই বিগ্রেডিয়ার (অবঃ) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, ড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম ও সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা অংগ্রহণ করেন। স্থানীয় পাগলা মসজিদের ইমাম মুফতি মোঃ খলিলুর রহমান জানাযার নামাজ পরিচালনা করেন। নামাজ শুরু হওয়ার পূর্বে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ এবং পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদের উপস্থিতিতে পুলিশের একটি চৌকশ দল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মরহুম জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জানাযা শুরুর আগে দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সৎ, নির্লোভ, নিরংকারী ও পরোপকারী মানুষ হিসাবে বর্ণনা করে তার মাগফিরাত কামনা করেন। পরে মরহুমের পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও চাচাত ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু জীবদ্দশায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভুল-ভ্রান্তির জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চান। জানাযা শেষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহমের কফিনে পুস্পস্তক অর্পন করা হয়।
সেখান থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়া হয় লাশ। ময়মনসিংহ থেকে বিশেষ প্রতিনিধি শামসুল আলম খান জানান, আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে বিকেল ৩টার দিকে জানায়ায় জনতার ঢল নামে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। জানাযাস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তখন এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ। স্মৃতিকাতর হয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সৈয়দ আশরাফের সঞ্চালনায় ছাত্রলীগের সভায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহৎপ্রাণ এই রাজনীতিকের শূন্যতা কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা নিহত হওয়ার পর বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ। লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে প্রবাসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আশরাফ। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুননির্বাচিত হন। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন হাসপাতালে থেকেই।#



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:৪৪ এএম says : 0
    Islame kon jaigai likha ase porosh mohila eakshathe tesha teshi kore monajat pora sheta jar jonno je karonei houkna keno?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ