মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০১৮ সাল জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে সারা বিশ্ব। সেই মন্দার আবহ থেকে বেরোতে পারেনি আমেরিকা, রাশিয়া, চিন-সহ ইউরোপের দেশগুলিও। সে কারণে ২০১৯-এ কী হতে চলেছে তাই নিয়ে বাড়তি সতর্ক সবাই। যদিও এই মন্দার বাজারে ২০১৮ সাল জুড়ে গড় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হিসাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ দেশকে পিছনে ফেলে সামনের সারিতেই আছে ভারত। এই মুহূর্তে দেশটি পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি।
উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরেই গ্রেট ব্রিটেনকে সরিয়ে পঞ্চম স্থান দখল করে নেবে ভারত। দু’শো বছরেরও বেশি সময় ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা ভারতের জন্য এই ঘটনা ঐতিহাসিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু সেই পথ খুব একটা মসৃণ হবে না ভারতের জন্য। এ বছরেই হতে চলা লোকসভা নির্বাচন সেই পথ বন্ধুর করতে পারে, এমনটাই মন আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদদের।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি আমেরিকা। তার পরই আছে চিন, জাপান, জার্মানি এবং ইংল্যান্ড। ষষ্ঠ স্থানে ভারত। তার পরই আছে ফ্রান্স। ২০১৮ সালে ভারতের গড় জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির যা ধারা এবং ২০১৯ সালে ভারতের জন্য বিভিন্ন সংস্থা যে পূর্বাভাস দিয়েছে, সেই হিসেবে নিশ্চিত ভাবেই ইংল্যান্ডকে ছাপিয়ে পঞ্চম স্থানে চলে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু জিডিপি বৃদ্ধির সেই ধারা অব্যাহত থাকছে কিনা, এটাই এখন বড় প্রশ্ন ভারতের সামনে।
প্রথম কারণ অবশ্যই সারা বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা মন্দা। সেই কারণে ২০১৯ সালে বৃদ্ধির হার কমিয়ে ২.৮ শতাংশ করেছে আর্থিক সংস্থা নমুরা হোল্ডিংস। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৩.২ শতাংশ। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেই মন্দার ধাক্কা কতটা সামলাতে পারবে ভারত, তার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছুই। তবে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, ভারতের ক্ষেত্রে অনেকটাই কমবে রফতানি, উৎপাদন এবং বিনিয়োগের পরিমাণ।
২০১৯-এ কোন পথে চলবে ভারতের অর্থনীতি, তার উপরও নির্ভর করছে অনেক কিছুই। ২০১৮ সালে দু’বার সুদের হার বাড়িয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই মুহূর্তে কমছে বাজারের চাহিদা, বিশ্ব বাজারে কমছে তেলের দামও। সে ক্ষেত্রে কমতে পারে মুদ্রাস্ফীতির হার। তাই ২০১৯-এ সুদের হার কমাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, এমনটাই অনুমান অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যদিও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে কতটা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়, তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। কারণ, কিছু দিন আগেই অপ্রত্যাশিত ভাবে সবাইকে অবাক করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তার পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন উর্জিত পটেল।
সবার উপর আছে সাধারণ নির্বাচন। ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে নিশ্চিত ভাবেই এই বছর নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে কল্পতরু হয়ে ওঠার বছর। নিশ্চিত ভাবেই বাড়বে অপরিকল্পিত খাতে খরচের বহর। সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্রতিযোগিতা। কৃষিক্ষেত্রে দেওয়া শুরু হয়েছে ঢালাও ছাড়। ছাড় দেওয়া হচ্ছে জ্বালানিতেও। এই জনমোহিনী খরচ নিশ্চিত ভাবেই দুর্বল করবে ভারতের অর্থনীতিকে।
মনে রাখতে হবে, ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার। শেষ তিন মাসে বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশ। তার ঠিক আগের ত্রৈমাসিক রিপোর্টে এই বৃদ্ধির হার ছিল আট শতাংশের কাছাকাছি। বিভিন্ন পণ্যের জিএসটি-ও কমানো হয়েছে পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলের পরপরই। বাজেট ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, তা অক্টোবরেই ছুঁয়ে ফেলেছে ভারতীয় অর্থনীতি। যদিও তা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে চলেছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাবে, ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশের পরই।
এই সমস্ত জট যদি সামলানো সম্ভব হয়, তাহলে ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০, এই দু’টি পরপর অর্থবর্ষে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার থাকবে সাতের ওপরেই। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার পূর্বাভাস তাই বলছে। এই পূর্বাভাস মিললে ২০১৯ সালেই ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে যাচ্ছে ভারত। সামনে থাকছে শুধু আমেরিকা, চিন, জাপান এবং জার্মানি। সূত্র: টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।