প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কের মাত্র এক চতুর্থাংশ ইউক্রেনকে দিচ্ছে পশ্চিমারা
ব্রিটেনের সানডে টাইমস রোববার জানিয়েছে, এপ্রিলের শুরুর মধ্যে ইউক্রেন পশ্চিম-প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কগুলোর এক চতুর্থাংশের কম পাবে। এতে
পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, সাগর, নদ-নদী, হ্রদ-ঝরণা আর সবুজ উপত্যকায় ঘেরা প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রাম। হাজার বছর ধরে পৃথিবীখ্যাত পর্যটকগণ চাটগাঁর সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। আজও দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্বেষায় অগণিত মানুষ ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। মানবসভ্যতার বিস্ময় এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রামের এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে শতাধিক দর্শনীয় স্থান। যা সারাবছরই পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। সগৌরবে চট্টগ্রামের বলিষ্ঠ অবস্থান জানান দিচ্ছে পর্যটন, বিনোদন আর ঐতিহ্যমন্ডিত স্থাপনা এবং জায়গাগুলো। এরমধ্যে বীর চট্টলার গুটিকয়েক স্থাপনা এবং স্পট দৈনিক ইনকিলাবের বিদগ্ধ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর : বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। দেশের হৃৎপিন্ড। জাতীয় অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। দুই হাজার বছরের সুপ্রাচীন এই সমুদ্রবন্দর কর্ণফুলী নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মিলিত মোহনায় গড়ে উঠেছে। ব্রিটিশ শাসনের গোড়াতে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীগণ বার্ষিক এক টাকা সেলামীর বিনিময়ে নিজেদের ব্যয়ে সেখানে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুইটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অ্যাক্ট কার্যকরী করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা সূচনা হয়। বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই বন্দর পরিচালনা করছে। বন্দরে এখন বার্ষিক ৯ কোটি মেট্রিক টন সাধারণ পণ্যসামগ্রীসহ ২৮ লাখ ইউনিটেরও বেশি কন্টেইনারবাহী মালামাল হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে, ৫১টি জেটি, বার্থ এবং মুরিংয়ের মাধ্যমে। এরমধ্যে কন্টেইনার জেটি আছে ১৭টি। দেশের আমদানি-রফতানি প্রবাহের ৯০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম মূলত জোয়ার-ভাটা নির্ভর একটি ফিডার পোর্ট যেখানে মাদার ভেসেলগুলো আউটারে অবস্থান করে খোলা (বাল্ক) পণ্য খালাস করছে। রাত্রিকালীন বঙ্গোপসাগরে জাহাজবহরকে সংকেত প্রদর্শনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ও সমুদ্র এলাকায় ৫টি বাতিঘর আছে। দিনের বেলায় কর্মচঞ্চল আর রাতের বেলায় সারি সারি জাহাজের বিচ্ছুরিত রঙিন আলোর ঝলকানি পর্যটককে মুগ্ধ করবেই।
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত : চট্টগ্রাম নগরের কোল ঘেঁষে কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে অপরূপ সুন্দর ছোট এক সৈকত পতেঙ্গা। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই পর্যটন কেন্দ্রটি জনপ্রিয় হওয়ার মূলে রয়েছে সেখান থেকে বহির্নোঙর এলাকায় সারি সারি অবস্থানরত মাদার ভেসেলের আলো ঝলমলে দৃশ্য সকলের নজর কাড়ে। সৈকতটির কাছেই গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাঁটি এবং বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। রসনা তৃপ্তিকর হরেক সামুদ্রিক মাছের আস্বাদও মিলবে বিকেলের সৈকতে। জেলেদের জালে সামুদ্রিক মাছ শিকারের অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়লে ভাবুক মন হারিয়ে যাবে অসীম দিগন্তের পানে।
ফয়’স লেক : চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় সবুজ পাহাড় টিলাময় প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর সাজে সজ্জিত জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র ফয়’স লেক। চট্টগ্রামে পানীয় জলের সমস্যার সমাধানের জন্য ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এই হ্রদ খনন করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফয়’স লেকের প্রাকৃতিক শোভা বর্ধন করা হয়েছে। ২০০৫ সালে সেখানে গড়ে তোলা আধুনিক রিসোর্টসহ অ্যামিউজমেন্ট পার্ক স্থাপিত হয়। এখানে সুউচ্চ টিলায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। চট্টগ্রাম নগরীর বিশাল অংশকে বিহঙ্গ দৃষ্টিতে যাবে দেখা। পাহাড় ও টিলাগুলোর সংরক্ষিত বনভূমিতে খেলা করে চিত্রা হরিণ, খরগোশ ও বিভিন্ন প্রাণী, হরেক পাখ-পাখালী উড়ে বেড়ায়। এখানে নানান আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট কিংবা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পানে করে হ্রদে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা।
ওয়ার সিমেট্রি : বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রায় কেন্দ্রস্থলে মেহেদীবাগ বাদশা মিয়া রোডে পাহাড়ের কোলে শান্ত, নিরিবিলি, সবুজ-শ্যামল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনা ও বিমান বাহিনীর ৭৫১ জন বীরযোদ্ধা। দেশের মায়া কাটিয়ে বিদেশে করে বিজয়ীর বেশে দেশে ফেলে আসা মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র আর স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য তাদের অপূরণ থেকে যায়। তারা আজ হাজার হাজার মাইল দূরে সমাহিত। প্রতিবছর ১১ নভেম্বর কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর হাইকমিশনার এবং প্রতিনিধিরা এখানে এসে যুদ্ধ সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রায় ৪ একর জমিতে অবস্থিত এ সমাধিক্ষেত্র। ৭৫১টি সমাধিতে শায়িত আছেন ১৪ জন নাবিক, ৫৪৩ জন সৈনিক এবং ১৯৪ জন বৈমানিক। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের ২ জন, অবিভক্ত ভারতের (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) ২১৪ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, মিয়ানমারের ২ জন, নেদারল্যান্ডসের ১ জন ও জাপানের ১৯ জন। সমাধিটি কমনওয়েলথ গ্রেইভস কমিশন রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) : সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এনক্লেভ চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে শতবছরের প্রাচীন সুরম্য ভবনরাজি। এটি তৎকালীল অবিভক্ত ‘আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে’র সদর দফতর। শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি টাইগার পাস পাহাড়ী এলাকায় এর অবস্থান। ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হয় মূল ভবনটির নির্মাণ কাজ। সিআরবির আশপাশ এলাকায় প্রাচীন বড় বড় আকৃতির গাছপালার ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের মেলা ও বলী খেলা (কুস্তি বিশেষ) দেখতে হাজারো মানুষ ছুটে আসে। বাংলাদেশের প্রথম দেড়শ’ বছরের প্রাচীন স্টিম (বাস্পীয়) ইঞ্জিনটি সিআরবি ভবনের সামনে সংরক্ষিত রাখা আছে। এই পাহাড়ে রয়েছে হাতির আকৃতির ‘হাতির বাংলো’। আছে সবুজ পাহাড়-টিলা, বন-জঙ্গল। পর্যটকদের কাছে সিআরবি ভিন্নমাত্রার এক আকর্ষণ।
চন্দনপুরা তাজ মসজিদ : চন্দনপুরা ‘মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা’ অথবা ‘হামিদিয়া তাজ মসজিদ’ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বহন করছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে নবাব সিরাজ উদ-দৌলা রোডে এর অবস্থান। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলি আর সুনিপুণ নকশায় গড়া এই মসজিদ সবার নজর কাড়ে। পর্যটকগণ এটি বিস্ময়ের সাথে দেখেন। বাংলায় মোঘল শাসনামলে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শিল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভারতের নির্মাণ কারিগররাও এটি তৈরিতে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে মোঘল স্থাপত্য ঘরানায় এ মসজিদটির সংস্কার কাজ করা হয়। শেষ হয় ১৯৫২ সালে। জলবায়ু ও পরিবেশের বিরূপ প্রভাবের কারণে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটির বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিও হয়। তবে এ মসজিদের মিনারগুলো অপরূপ স্থাপত্যের স্মারক।
জাতিতাত্তি¡ক জাদুঘর : চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জাতি-তাত্তি্ব জাদুঘর। এটি জাপানের পর এশিয়ায় একমাত্র এ ধরনের বিশেষায়িত জাদুঘর। মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃতাত্তি¡ক জাতিগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন প্রণালী, অনুভূতি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পরিবারের মূল্যবোধ ইত্যাদি সযত্মে এই জাদুঘরে ইতিহাস সমন্বিত উপকরণের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। এটি গবেষণার কাজেও ব্যবহৃত হয়। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭৪ সালের ৯ জানুয়ারি সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত করা হয়। একতলা বিশিষ্ট দক্ষিণমুখী জাদুঘরটি পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। সেখানে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় হলঘরসহ সর্বমোট চারটি গ্যালারি। জাদুঘরে প্রদর্শনী কক্ষের সংখ্যা ১১টি। এখানে ২৯টি বিভিন্ন নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর জীবনধারা প্রদর্শন করা হয়। তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের উপকরণ প্রদর্শন করা হয়। দেশ-বিদেশের গবেষক ও পর্যটকগণ গভীর আগ্রহভরে এখানে আসেন।
চট্টগ্রাম নিউমার্কেট বা বিপণিবিতান : চট্টগ্রাম নিউমার্কেট বা বিপণিবিতান হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো মার্কেট কমপ্লেক্স। অত্যন্ত সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা সহকারে বন্দরনগরীর ঠিক কেন্দ্রস্থলেই ১৯৬২ সালে স্থাপিত হয় নিউমার্কেট। সেখানে সংযোজন করা হয় এই উপমহাদেশের কোন মার্কেটের প্রথম এস্কেলেটর। আজও প্রতিদিন হাজারো মানুষ কেনাকাটার জন্য ছুটে যান নিউমার্কেটে। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও কম নয়। সেখানে বস্ত্র সামগ্রী, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই কিনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের খ্যাতি বহন করছে বনেদী এই নিউমার্কেট বা বিপণিবিতান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।