প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কের মাত্র এক চতুর্থাংশ ইউক্রেনকে দিচ্ছে পশ্চিমারা
ব্রিটেনের সানডে টাইমস রোববার জানিয়েছে, এপ্রিলের শুরুর মধ্যে ইউক্রেন পশ্চিম-প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্কগুলোর এক চতুর্থাংশের কম পাবে। এতে
হলুদের চাদরে ঢাকা রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ উত্তরাঞ্চলের ফসলের মাঠগুলো। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ আর হলুদ। সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌচাষিরা। এক হাত বৌল্লা বার হাত শিং উড়ে যায় বৌল্লা ধা তিং তিং। সে বৌল্লা দিয়ে সুস্বাদু মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষীরা।
এ মধু চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও স্থানীয় মৌ চাষীদের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মৌ-খামারি গোদাগাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া পাবনা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় মোট আবাদ প্রায় ২ হাজার ১শ’ হেক্টর। অনেক মৌচাষি মৌবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এ বছর তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় প্রচুর পরিমাণে সরিষা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী বছর বিদেশ থেকে তেল বিশেষ করে সয়াবিন তেলের আমদানি কমবে বলে আশাবাদী। সেই সাথে এইসব সরিষার জমি থেকে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং পরাগায়নে সহায়তা হবে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
উপজেলার এক জায়গাতেই প্রায় ২০০ মৌলবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ১২ মন মধু পাওয়া যায়।
গোদাগাড়ী উপজেলার একটি সূত্র জানায়, এবছর ৭ হাজর ২শ’ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বারিত সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ ৯০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষা সহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। তিনি আরও বলেন, ২০ জনের মত গোদাগাড়ী উপজেলার মৌ চাষী কিছু বাহিরে থেকেও আসে। সারা বছর সরিষা আম, লিচু সরিষা থেকে প্রায় ৪/৫ টন মধু উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই মধু সংগ্রহ চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে। মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকশ মৌবাক্স। সকালে মধু সংগ্রহের জন্য খোলে দেয়া হয় মৌবাক্সগুলো। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের চাকে জমা করে। আর প্রতি সপ্তাহে একবার মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালীরা। মেশিনের মাধ্যমে মধু সংরক্ষণ করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মৌ-খামারের মালিক মো. জামাল শেখ বলেন, ২০০৩ সালে আমি বাক্স নিয়ে মৌখামার শুরু করি। বর্তমানে আমি এ কাজে ভালই লাভবান হচ্ছি। হুজরাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার বলেন, মৌচাষী সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ ব্যবসাটি বেশ লাভ জনক। সপ্তাহের একদিন মৌ চাষিরা বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করেন। এখানে খাঁটি মধু পাওয়া যায়। গুনগত মান ভালো হওয়ায় ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমি ৫০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ক্রয় করছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতুনু সরকার বলেন, মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়ছে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।