Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে তরুণদের যৌন বিকৃতির কারণ হচ্ছে স্মার্টফোন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৪:৫১ পিএম

ভারতে যেভাবে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে তাতে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, স্মার্ট-ফোন এবং সহিংসতায় পরিপূর্ণ পর্ণ ভিডিও, যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষার অভাব যৌন সহিংসতার ঘটনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
একদল টিনএজার একজন তরুণীর শরীর থেকে কাপড় টেনে খোলার চেষ্টা করছে-এমন একটি ভিডিও চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের জনপ্রিয় একটি সামাজিক মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় মেয়েটি ছেলেদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকে, তাদেরকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করে কিন্তু তারা ব্যঙ্গ করতে করতে, হাসতে হাসতে প্রচণ্ড উপভোগের সাথে অপকর্মটি করতে থাকে। সেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ এটা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় যে বিহারের একটি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল এবং অভিযুক্ত তরুণদের আটক করা হয়েছিল। সেখানকার বাসিন্দাদের মাঝে বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং তারা পুরো ঘটনার জন্য দোষারোপ করছে স্মার্টফোনকে।
যদিও সস্তা ইন্টারনেট ডাটা এবং স্মার্ট-ফোনের কারণে সেসব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে, কিন্তু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, নারী-পুরুষের সম্পর্ক এবং যৌনতার বিষয়ে সেসব তাদের অর্থপূর্ণ কোনও ধারণাই দিতে পারছে না। স্থানীয় অনেক কিশোর-তরুণ বিবিসির সংবাদদাতার কাছে স্বীকার করেছেন যে, তারা যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের ভিডিও দেখেছেন।
১৬ বছর বয়সী এক কিশোর জানায়, সে এরকম ২৫টির বেশি ভিডিও দেখেছে, সে এটাও জানায় যে নিজেদের বন্ধুদের মাঝে তারা স্মার্ট-ফোনে এসব আদান-প্রদান করে থাকে। তার ভাষায়, ‘আমার ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই একসাথে বসে কিংবা তারা নিজেরা নিজেরা এসব ভিডিও দেখে।’ আরেক কিশোর বলে, ‘এটা দারুণ লাগে কারণ সবাই এটা করে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভারতীয় বহু পুরুষের ক্ষেত্রেই এভাবে যৌনতার সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে।
চলচ্চিত্র পরিচালক এবং লেখক পারমিতা ভোহরা এজেন্টস অব ইশক (ভালবাসার এজেন্ট) নাম দিয়ে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করছেন যেখানে ‘সেক্স’ বিষয়ে খোলামেলা কথা-বার্তা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেড়ে ওঠার সময় যৌন শিক্ষা দেয়া হয়নি কিংবা এসব বিষয়ে স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক আলাপও হয়নি।’
ভারতে স্মার্ট-ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা চারশো মিলিয়ন এবং তাদের অর্ধেকেরও বেশি লোক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। এই ধরনের ভিডিও শেয়ার করতে এই মাধ্যমটিই প্রায়শ ব্যবহার করা হয়।
বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘আমাদের প্ল্যাটফর্মে এই ভয়াবহ ধর্ষণের ভিডিও এবং শিশু পর্নোগ্রাফির কোন স্থান নেই। এ কারণে আমরা এসব বিষয়ের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে রিপোর্ট করার বিষয়গুলো সহজ রেখেছি, যাতে করে আমরা ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ব্যান (নিষিদ্ধ) করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারি। আমরা ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যেকোনো আইনগত জিজ্ঞাসা বা অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাদের তদন্ত কাজে সহায়তা করে থাকি।’
অনেকেই মনে করছেন এই ধরনের সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পেছনের কারণ যৌন শিক্ষার অভাব উত্তরাঞ্চলীয় উত্তরাখণ্ড প্রদেশে কয়েকজন যুবক তাদের মোবাইল ফোনে পর্ণ ভিডিও দেখে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর তা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্ট করেছিলো।
তবে, সরকার অবশ্য এই অবস্থা বদলানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০০৯ সালে অ্যাডলসেন্ট এডুকেশন প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে। এর উদ্দেশ্য ছিল- কিশোর বয়সের নানা পরিবর্তন এবং লিঙ্গ, যৌনতা, যৌন সংক্রামিত রোগ ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করা। কিন্তু এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে এখনো।
ভারতের প্রজ্বলা সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে যৌন সহিংসতা এবং পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় হায়দ্রাবাদ শহরের এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সুনীতা কৃষ্ণাণ বলছেন, এই ধরনের হিংসাত্মক ভিডিওগুলো ভারতের সমাজে প্রচিলিত প্রাচীন বিশ্বাসকে আবারও সামনে তুলে ধরছে যে, একজন নারীর পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্বহীন এবং তার কোন কর্তৃত্ব নেই।
মিজ কৃষ্ণাণ যিনি নিজে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, তিনিও এ ধরনের ভিডিও পেয়েছেন এবং সেসব ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ