নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
টস হেরে যখন বোলিং বেছে নিলেন সাকিব আল হাসান, তখনই ম্যাচ থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছিল বাংলাদেশ। দিন শেষের সমীকরণও হয়ে যায় সহজ। টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অমন সাহসের খেসারত দিতে হয়েছে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ হেরে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এভিন লুইস ঝড়ে ১৯১ রানের আকাশ ছোঁয়া লক্ষ্য দাঁড় করায় ওস্টে ইন্ডিজ। যার কাছেই যেতে পারেনি বাংলাদেশ, মাত্র ১৭ ওভারেই স্বাগতিকরা থামে ১৪৪ রানে। ৫০ রানের এই হারে তিন ম্যাচ সিরিজটি খুইয়ে বসে সাকিব আল হাসানের দল। টেস্ট ওয়ানডেতে জয়ের পর প্রথমবারের মতো কোনো দলকে সিরিজে তিন সংস্করণে হারানোর আশায় মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই অর্জন আর ঝুলিতে জমা পড়ল না টাইগার বাহিনীর। কিমো পলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত।
গতকাল মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনেকটা নিরুত্তাপ, একতরফা ম্যাচে কিছুটা রসদ যুগিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ফিল্ড আম্পায়াররা। বাংলাদেশ ইনিংসের ৪র্থ ওভারে ওশান টমাসের এক ওভারে দুটি ভুল ‘নো’ বল ডাকলেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। প্রথম নো বলটিতে চার হাঁকিয়েছিলেন লিটন। আর ফ্রি-হিটে পেলেন ছয়। দ্বিতীয়বার ডাকা ‘নো’ বলে উঠে যায় ক্যাচ, মুঠোয় জমান ফিল্ডার।
রিপ্লেতে টমাসের পায়ের কিছু অংশ লাইনের ভেতরে থাকতে দেখে প্রতিবাদ জানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে রিভিউয়ের ইশারা দিতে দেখা যায়। তবে নো বলের রিভিউ না থাকায় কিছুই করার ছিল না।
ফিল্ডাররা সব মাঠের মাঝে জড়ো হয়। ড্রেসিংরুমের বার্তা নিয়ে আসেন দুই জন। অধিনায়ক সীমানায় গিয়ে চতুর্থ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলেন। আলোচনায় যোগ দেন সাকিবও। কথা শেষে আবার মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলেন ব্র্যাথওয়েট। ৮ মিনিট বন্ধ থাকার পর শুরু হয় খেলা। ফ্রি-হিটে ছক্কা হাকান সৌম্য। তবে তাতে কালক্ষেপন হলেও ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি একরত্তিও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবারের বাংলাদেশ সফরটা যেন অদ্ভুত সমাপাতনের এক সফর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সফরসূচক টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের জবাব হলো ধবলধোলাইয়ে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুরন্ত পেস-বাউন্সের জবাব ঢাকা-চট্টগ্রামের স্পিনের ‘ভুলভুলাইয়ায়’। ওয়ানডে সিরিজে ধরনটা আবার অন্য রকম; জুলাই-আগস্টের সেই সিরিজের মতো এবারও জয়ী দলটা বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো বাংলাদেশেও দুই ম্যাচ শেষে ১-১ সমতা। সিলেটে শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতলেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা।
টি-টোয়েন্টি সিরিজেও সেই একই ঘটনা। দেশের মাটিতেও পিছিয়ে পড়ে দুই ম্যাচ শেষে গতকাল সন্ধ্যার অলিখিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় সাকিব ও ব্রাফেটের দল। মার্কিন মুলুকে ফ্লোরিডার লডারহিলের সেই রাত আবার মিরপুরে ফিরে আসুক, এটাই চাইছিল গোটা বাংলাদেশ।
তবে তার ছিঁটেফোটাও চোখে পড়েনি শেষ ম্যাচে। প্রথম ছয় ওভারে প্রায় ১৫ করে, দশ ওভার শেষে সেটি নামিয়ে আনা হয় সাড়ে বারোতে (১২ দশমিক শূন্য ৩)। আর শেষের দশ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা রান করতে পেরেছে কেবল ওভারপ্রতি সাড়ে সাত করে। যে কারণে ইনিংসের শুরুর দিকে প্রায় আড়াইশো রানের ইঙ্গিত দিলেও শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৯০ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টি-২০ সূলভ ব্যাটিং দরকার ছিল, যা আগের ম্যাচেই দেখেছে মিরপুর, তার ছিঁটেফোঁটাও চোখে পড়েনি এদিন। একমাত্র লড়াইটা চালিয়েছেন লিটন দাস। বাকিদের আসা যাওয়ার শেষদিকে মিছিলে কিছুটা মানবাঁচানোর চেষ্টা করেছেন আবু হায়দার। তবে তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। বলতে গেলে কিমো পলের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে পথ হারানো বাংলাদেশ পেরে ওঠেনি শেষ পর্যন্ত। ৪ ওভার বল করে ১৫ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন এই পেসার।
বছরের শেষ ম্যাচে জয়ের সক্ষী হতে এদিন হোম অব ক্রিকেটে হাজির ছিলেন ২৪ হাজার দর্শক। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি বলে বলে উৎসাহ যুগিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে হারের হতাশা নিয়েই ঘরমুখো হয়েছে টাইগার প্রেমীরা।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৩য় টি-২০
মিরপুর, টস : বাংলাদেশ (বোলিং)
উইন্ডিজ ইনিংস রান বল ৪ ৬
লুইস বোল্ড মাহমুদউল্লাহ ৮৯ ৩৬ ৬ ৮
হোপ বোল্ড সাকিব ২৩ ১২ ৩ ১
পল ক আরিফুল ব মুস্তাফিজ ২ ৩ ০ ০
পাওয়েল ক লিটন ব মাহমুদউল্লাহ ১৯ ১৬ ১ ১
হেটমায়ার এলবি মাহমুদউল্লাহ ০ ১ ০ ০
পুরান ক রনি ব মুস্তাফিজ ২৯ ২৪ ২ ২
ব্রাফেট ক মিরাজ ব মুস্তাফিজ ৮ ৬ ১ ০
রাদারফোর্ড ক মুশফিক ব সাকিব ২ ৬ ০ ০
অ্যালেন স্ট্যাম্প ব সাকিব ৮ ৭ ১ ০
কট্রেল অপরাজিত ২ ২ ০ ০
থমাস রানআউট ০ ২ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, ও ৭) ৮
মোট (অলআউট, ১৯.২ ওভার) ১৯০
উইকেট পতন : ১-৭৬ (হোপ), ২-৯০ (পল), ৩-১২২ (লুইস), ৪-১২২ (হেটমায়ার), ৫-১৫৯ (পাওয়েল), ৬-১৭৬ (পুরান), ৭-১৭৮ (ব্রাফেট), ৮-১৮৮ (অ্যালেন), ৯-১৮৯ (রাদারফোর্ড), ১০-১৯০ (থমাস)।
বোলিং : রনি ২-০-৩৯-০, সাইফউদ্দিন ৪-০-৩৬-০, মিরাজ ২-০-২৬-০, সাকিব ৪-১-৩৬-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩.২-০-১৮-৩।
বাংলাদেশ (লক্ষ্য ১৯১) রান বল ৪ ৬
তামিম রানআউট ৮ ৬ ০ ১
লিটন ক ব্রাফেট ব পল ৪৩ ২৫ ৩ ৩
সৌম্য ক কট্রেল ব অ্যালেন ৯ ১০ ০ ১
সাকিব ক কট্রেল ব অ্যালেন ০ ১ ০ ০
মুশফিক ক অ্যালেন ব পল ১ ৫ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ ক ব্রাফেট ব পল ১১ ৯ ২ ০
মিরাজ ক অ্যালেন ব কট্রেল ১৯ ১৯ ১ ১
আরিফুল ক রাদারফোর্ড ব পল ০ ১ ০ ০
সাইফউদ্দিন ক হোপ ব পল ৫ ৭ ১ ০
আবু হায়দার অপরাজিত ২২ ১৭ ৩ ১
মুস্তাফিজ ব ব্রাফেট ৮ ৭ ০ ১
অতিরিক্ত (বা ১, লেবা ২, নো ৫, ও ৬) ১৪
মোট (১৭ ওভারে অল আউট) ১৪০
উইকেট পতন : ১-২২ (তামিম), ২-৬৫ (সৌম্য), ৩-৬৫ (সাকিব), ৪-৬৬ (মুশফিক), ৫-৮০ (মাহমুদউল্লাহ), ৬-৮৯ (লিটন), ৭-৮৯ (আরিফুল), ৮-৯৬ (সাইফউদ্দিন), ৯-১২৯ (মিরাজ), ১০-১৪০ (মুস্তাফিজ)।
বোলিং : কট্রেল ৪-০-৩২-১, থমাস ৩-০-৫৬-০, অ্যালেন ৪-০-১৯-২, পল ৪-০-১৫-৫, ব্রাফেট ২-০-১৫-১।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : এভিন লুইস।
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
সিরিজ সেরা : সাকিব আল হাসান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।