Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগান যুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের ধৈর্য্য সামান্যই

দি নিউইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৬:২৮ পিএম

আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন এই ডিসেম্বরে ১৮ বছরে পড়ল। এ বছর ৮ জন নিহত হওয়াসহ এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪শ’রও বেশি মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে। আফগানিস্তানের মার্কিন সমর্থিত সরকার খারাপ অবস্থায় আছে। জাতিসংঘ বলেছে, ২০১৮ সালের প্রথমার্ধ যে কোনো বছরের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী ছিল। এ বছর ১ হাজার ৬শ’ ৯২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। আর ২০০১ সালের ডিসেম্বরের পর যে কোনো সময়ের চেয়ে তালিবান এখন সবচেয়ে বেশি এলাকা দখল করেছে।
কেন মার্কিন বাহিনী এখনো আফগানিস্তানে আছে?
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রায় এক মাস পর প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ অক্টোবরে আফগানিস্তানে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালান। তার লক্ষ্য ছিল আল কায়েদা ও তার রক্ষাকর্তা তালেবান সরকার আর দেশটি যাতে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র না হয় তা নিশ্চিত করা।
১৭ বছর পর তালেবান যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আফগান সরকারের সাথে লড়াই করছে। আর আমেরিকান কর্মকর্তারা শঙ্কিত যে দেশটি এখনো আমেরিকার মাটিতে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্র হতে পারে। এমনকি যে আল কায়েদা কয়েক বছর আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, তারা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে।
২০১৪ সালে পেন্টাগন আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধাভিযানের অবসান ঘোষণা করে। কিন্তু তখন থেকে আগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ইসলামিক স্টেটের মত গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন অভিযান পরিচালনার জন্য অল্প কিছু সৈন্য থেকে যায়।
গত বুধবার পদত্যাগকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের অনুরোধে আফগানিস্তানে নতুন করে ৪ হাজার সৈন্য পাঠানো হয়। তা এ কারণে যে এতে যুদ্ধ সমাপ্তি ত্বরান্বিত হবে এবং আমেরিকান সৈন্যদের চড়ান্ত প্রত্যাহারের আগে আফগান বাহিনীকে প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
এখন আমেরিকান বিমান হামলা প্রচন্ডতম হয়েছে যেমনটি ছিল যুদ্ধের তুঙ্গ মুহূর্তে যখন আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে থাকা তার ১৪ হাজার সৈন্যের প্রায় অর্ধেক প্রত্যাহার করবে।
কারা এই তালেবান?
তালেবান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বেশীর ভাগ শাসন করে। তাদের লক্ষ্য ছিল একটি ইসলামী খিলাফত ও অগণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা যেখানে নারীদের সামান্য অধিকার থাকবে।
আমেরিকার সামরিক অভিযান তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও তারা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। গ্রুপটি পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে ও আফগানিস্তানের ৪০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, তারা আরো বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। জুলাইতে তালেবান বলে যে, তারা বেসামরিক লোকদের ওপর আত্মঘাতী হামলা বন্ধ করবে। কিন্তু তারা এলাকা দখল ও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখায় সহিংসতা থামেনি।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ধারণা যে, ২০ থেকে ৪০ হাজার সক্রিয় তালেবান যোদ্ধা রয়েছে। অন্যদিকে আফগান সৈন্য ও পুলিশের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। তারা বিপুল সংখ্যায় মারা যাচ্ছে, সংখ্যা কমছে ও সেনাবাহিনী ত্যাগ করছে।
শান্তি আলোচনা কোন পর্যায়ে?
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আগ্রাসনের পর থেকে পাশ্চাত্য মার্কা গণতন্ত্র চালু করেছে। তালেবান আফগান সরকারের সাথে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে যতক্ষণ না তারা আমেরিকান সামরিক উপস্থিতির ভবিষ্যত, তালেবান বন্দীদের ভাগ্য ও তালেবান নেতাদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনো চুক্তিতে না পৌঁছবে।
কিন্তু তালেবানরা আমেরিকান দূতদের সাথে সাক্ষাত করেছে। এ সপ্তাহে দুবাইয়ে তাদের বৈঠক এ যাবতকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আফগান বিষয়ক প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ আফগান সংবাদ মাধ্যম টোলোনিউজকে বলেন, আমি বলেছি যে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা যদি দূর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে স্থায়ী সামরিক উপস্থিতির কথা ভাবছে না।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন অবস্থানের পরিবর্তন
এ সপ্তাহ পর্যন্ত খুব বেশী কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ওবামা ও ট্রাম্প উভয়েই পাকিস্তানে বিদ্রোহীদের অভয়ারণ্যে দমন অভিযান চালাতে দেশটির উপর সামরিক বাহিনী ও কূটনৈতিক চাপ মিশ্রভাবে ব্যবহারের নীতি অনুসরণ করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সমর্থিত আফগান সৈন্যদের তালেবান নিয়ন্ত্রিত গ্রাম এলাকা থেকে সরে আসতে ও শহরগুলোকে রক্ষা করতে বলেছে। ওবামা ও বুশের সময়ও এমনই করা হয়।
২০১৭ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে সৈন্য প্রত্যাহার আইএস ও আল কায়েদাসহ সন্ত্রাসীদের জন্য শূন্যস্থান সৃষ্টি করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধৈর্য্য অল্পই আছে। তিনি বারবার বলেছেন, তার ইচ্ছা সৈন্য সরিয়ে আনা। এই ব্যয়বহুল যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র্রে অত্যন্ত অজনপ্রিয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ