Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপি মোকাবেলায় কংগ্রেসের ‘নরম হিন্দুত্ব’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:০৮ পিএম

মধ্যপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দীর্ঘদিনের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা নিশ্চয়ই ছিল৷ কিন্তু তার সঙ্গে বিজেপির কট্টর হিন্দুত্বের মোকাবিলায় যে কংগ্রেসের ‘নরম হিন্দুত্ব’ কাজে এসেছে, নির্বাচনের ফলাফলই তার প্রমাণ। রাজনীতির বিশ্লেষকরা এখন মনে করেন, ভারতে রাজনীতি ক্রমশ আরো বেশি ধর্মাশ্রিত হয়ে উঠছে। বিজেপিকে টেক্কা দিতে কংগ্রেসের মন্দির রাজনীতি এই ধারণা আরও জোরারো করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচিতেও দেখা যাচ্ছে একই প্রবণতা৷
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল৷ তবু ভারতের প্রতিষ্ঠাতারা এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন৷ সেই ভাবনা থেকেই ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল৷ জনসমষ্টির ৮০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও ভারত তাই হিন্দুরাষ্ট্র নয়৷ কিন্তু এই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্রমশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের৷ ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মোকাবিলায় এতদিন যেখানে বিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের উপর জোর দিতো, সেখানে তারা ক্রমশ ধর্মকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ছে৷ সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে সেই প্রবণতাই দেখা গেল৷ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী অগুণতি মন্দির সফর করলেন৷ সেখানে পুজা দিলেন৷ সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ এই ছবি ফলাও করে প্রকাশিত হলো সংবাদপত্রে, দেখানো হলো টিভি চ্যানেলে৷ অথচ কিছুদিন আগেও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের এভাবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের নজর টানতে মন্দিরে যেতে দেখা যায়নি৷ নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটে জেতার একটি হাতিয়ার হিসাবে বিরোধীরাও এবার ধর্মকে এভাবে ব্যবহার করবে?
কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অরুণাভ ঘোষ তার দলের এই নীতির সঙ্গে সহমত নন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এই রাজনীতিই আজ দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ খুবই খারাপ লক্ষণ এটা৷ অথচ এটা কংগ্রেসের পরম্পরা নয়৷ জওহরলাল নেহরু মন্দিরে যাননি ভোট পেতে৷ নরসিমা রাও থেকে হালের মনমোহন সিংয়ের ক্ষেত্রেও এ কথা বলা চলে৷’
জাতীয় রাজনীতির মতো একই প্রবণতা আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷ এখানেও বিজেপির রামনবমীর মোকাবিলা করতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস হনুমান জয়ন্তী পালন করছে৷ এটা যে বিজেপির রাজনীতির প্রভাবেই হচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক নির্বেদ রায়৷ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যখন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে, তার মোকাবিলা করা জরুরি৷ মোকাবিলার পদ্ধতি কী হবে, সে ব্যাপারে নানা মত থাকতে পারে৷ তবে এটা ঠিক, কেন্দ্রের মোকাবিলায় আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি ছেড়ে এই পথ নিতে হচ্ছে, এটা দুঃখের৷’
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে ধর্মের থেকে অর্থনৈতিক কারণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল৷ জিএসটি চালু থেকে কৃষকের সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের নির্বাচনে৷ তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার কারণও রয়েছে। তবে বিজেপির হাতিয়ারকে ভোঁতা করতে সংখ্যালঘুদের কাছে টানার পাশাপাশি নরম হিন্দুত্বের প্রচার যে ক্রমশ ভারতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠছে, এ কথা মানছেন অনেক পর্যবেক্ষক৷ সূত্র: আনন্দ বাজার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ