শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ.
কাব্যানুবাদ : রূহুল আমীন খান
সিংহ ও খরগোশের পরবর্তী কাহিনী
১৩৬৪. কূপের নিকটে এসে বনরাজ দেখে অতঃপর
খরগোশ দাঁড়িয়ে ঠায়, সমুখে না হয় অগ্রসর।
১৩৬৫. বলিল সে : কি কারণে দিলে তুমি এই পিছু টান ?
নির্ভয়ে আমার সাথে সমুখেতে হও আগুয়ান।
১৩৬৬. খরগোশ বলিল : ভয়ে সারা দেহ অবশ আমার
কাঁপে প্রাণ থরথর সাধ্য নাই আর আগাবার।
১৩৬৭. উদ্বেগ-আকুল আর কম্পিত ও ভীত মোর মন
তারই ছাপ চেহারাতে- এ ফ্যাকাশে হলুদ বরণ।
১৩৬৮. করেছেন আল্লা’পাক চেহারাকে মনের দর্পণ
দেখেন আরেফগণ চেহারার মধ্য দিয়ে মন।
১৩৬৯. রঙ গন্ধ প্রকাশক- উহা ঘণ্টা ধ্বনির সমান
অশ্বের হ্রেষা ধ্বনি দেয় যথা অশ্বের সন্ধান।
১৩৭০. ধ্বনিই বলিয়া দেয় কি বস্তু, কি পরিচয় তার
শব্দই বলিয়া দেয় এই শব্দ দরজা, না গাধার।
১৩৭১. বাতিয়েছে মহানবী আলামত মানুষ চিনার
মানুষ লুকিয়ে থাকে তলদেশে মানব জিহ্বার।
১৩৭২. মানসিক অবস্থার ভাষ্যকার- রঙ চেহারার
আমায় করুন দয়া দেখে ধ্বস্ত চেহারা আমার।
১৩৭৩. চেহারার লাল রঙ- প্রকাশক খুশী শোকরের
হলদে ফ্যাকাশে রঙ- অভিব্যক্তি বেদনা কষ্টের।
১৩৭৪. পেয়েছি যে ভয় আমি তাহাতে আমার হস্ত পদ
গিয়েছে অবশ হয়ে, চেহারাও হয়ে গেছে বদ।
১৩৭৫. এমন ভয়দ বস্তু যার মাঝে করে আগমন
ধ্বস্ত করে তার সব, বৃক্ষ করে মূলে উৎপাটন।
১৩৭৬. এসেছে যা মোর মাঝে কারো মাঝে গেলে সেই বস্তু
উদ্ভিদ মানব জীব যেই হোক হবে সে বিধ্বস্ত।
১৩৭৭. এ হলো অংশের কথা- সমগ্রেরও দশা হবে তাই
হলদে ফ্যকাশে হবে- ছড়াবে দুর্গন্ধ সর্ব ঠাঁই।
১৩৭৮. এ ধরা সাবের*১ কভু কখনো সে শোকর গোযার
উদ্যান সবুজ হয়, কভু হয় উলঙ্গ আবার।
১৩৭৯. যে সূর্য প্রভাত কালে উজ্জ্বল প্রোজ্জ্বল দীপ্তিমান
বেলা শেষে সে আবার দীপ্তি হীন নিস্তেজ নি¯প্রাণ।
১৩৮০. ওই যে নক্ষত্ররাজি দ্যোতিমান আকাশের গায়
আবার কখনো তারা জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
১৩৮১. কী উজাল দীপ্তিময় নভঃজয়ী চাঁদ পূর্ণিমার
ক্ষয় জ্বরে ভূগে ভূগে ক্রমে তনু ক্ষীণ হয় তার।
১৩৮২. হাল্ দেখ মিত্তিকার কতই সে প্রশান্ত বিনত
ভূ-কম্পন জ্বরে হয় সে আবার প্রচন্ড কম্পিত।
১৩৮৩. এই বিশ্বে কত শত সুবিশাল অটল পর্বত
চূর্ণ বিচূর্ণ হলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে হলো ধূলি বৎ।
১৩৮৪. জীবন ধারণ তরে যেই বায়ু শ্রেষ্ঠ উপাদান
সে বায়ূ ছড়ায় পুনঃ মহামারি, কেড়ে নেয় প্রাণ।
১৩৮৫. যেই পানি রক্ষা করে জীবনকে আবার সে পানি
কালো তিক্ত হলদে হয়ে বিষবৎ করে প্রাণহানি।
১৩৮৬. যে বায়ূর সমর্থনে অগ্নি তেজঃলকলকে জিভে
সে বায়ূরই ফুৎকারে আবার সে অগ্নি যায় নিভে।
১৩৮৭. তাকাও সমুদ্র পানে অবধান কর তার হাল
বিবর্তন জারি তলে- পৃষ্ঠ তাই তরঙ্গ-উতাল।
১৩৮৮. ঘুরছে চর্কির মত সর্বক্ষণ দিক্চক্রবাল
সন্তান সন্ধানে রত, মায়ের মতই তার হাল।
১৩৮৯. কভু ঊর্ধ্বে, কভু নিচে, তলদেশে, কখনো শিখরে
বিস্তারিছে শুভাশুভ ছুটিয়া অস্থির কলেবরে।
১৩৯০. হও আত্মসচেতন অংশ তুমি বিশ্ব সমগ্রের
প্রভাব তোমাতে পরে সমগ্রের শুভ অশুভের।
১৩৯১. সমগ্র যেখানে সদা হরিদ্রাভ বেদনা কাতর
সেখানে তোমার পরে হবে নাকি তাহার আসর?
১৩৯২. বিশেষত যেই অংশে প্রতিদ্ব›দ্বী চার উপাদান
অগ্নি পানি মাটি বায়ূ যুগপৎ যেথা অবস্থান ?
১৩৯৩. বিস্ময়ের নয় কিছু নেকড়ে দেখে ভয়ে ভাগে মেষ
তবে বিস্ময়ের বটে উভয়ের প্রীতি সমাবেশ।
১৩৯৪. জীবন তো বিপরীত পরস্পরে অন্বয়ের নাম
পরস্পর সংঘাতের বিধ্বসংই শেষ পরিণাম।
১৩৯৫. জীবন হলো সন্ধি মিলন দ্ব›দ্ব উপাদানে
মরণ হলো ফেরা তাদের দ্ব›েদ্ব পুনঃ রণে।
১৩৯৬. দ্ব›দ্বমানের সন্ধি মিলন বিশেষ কারণেই
কদিন বাদেই দ্ব›েদ্ব মাতে আবার কিছুতেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।