Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটি প্রশ্ন

রুহুল আমিন রাকিব

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

পৃথিবীটা গোলাকার জীবন চলার পথে হঠাৎ আপনার সাথে দেখা হতে পারে শৈশবের প্রিয় বন্ধু।

তরুণ বয়সের সেই প্রিয়জন!
জীবনের বাঁকে বাঁকে,জড়িয়ে আছে কত স্মৃতি!
কত হাসি গান,কাঁন্না বেদনা!
রাজু সুঠাম দেহর অধিকারি প্রাণবন্ত ময় এক হাস্যজ্জল তরুণ।
কত হবে বয়স তেইশ, চব্বিশ,দেখতে শুনতে খুবই স্মাট।
সব সময় নতুন নতুন শার্ট,প্যান্ট পরে।
চোখে কালো সানগ্লাস,হাতে ডিজিটাল মডেলের হাত ঘড়ি পায়ে দামি চামড়ার জুতা।সব সময় পরিপাটি ভাবে চলতে পছন্দ করে বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে রাজু!
এক মাত্র ছেলে হলে যা হয় আর কী!
রাজুর বেলায়ও তাই হয়েছে ছোট থেকে যা আবদার করে বসতো বাবা মা তাই কিনে দিতো।
রাজু ঠিক মতো পড়া লেখা করে নাই সেই ছোট বেলা থেকে।
টেনে টুনে কোন রকমে এস,এস,সি পরীক্ষায় পাশ করে,এখন সব সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
রাজুর স্বভাব চরিত্র ছোট থেকেই ভালো নয় দেখতে শুনতে সুন্দর হলেও ব্যাবহারও কথা বার্তায় কখনই মাধুর্য ছিলো না।
এলাকার লোক কখনই ভালো চোখে দেখত না।
এমন কি ভালো পরিবারের কোন ছেলেকে রাজুর সাথে কখনই মিশতে বা চলতে দিতো না।
রাজুর বাবা ওদের এলাকায় খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
অনেক বছর আগে এলায় মেম্বার ছিলো।
সেই সুত্রধরে এলাকায় এখনো লোক মুখে উচ্চরণ হয় তার নাম।
আর বাবার নাম ভাঙিয়ে সব জাগায় অন্যায় করেও পার পেয়ে যায় রাজু।
তবে ওর বাবা ও মা খুবই ভালো মানুষ,পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন।
রাজুর বাবা মাঝে মাঝে খুবই আক্ষেপ করে বলেন।
জীবন চলার পথে কী পাপ যে করছি আমি কে জানে!
হয়তো›বা সেই পাপের ফসল এই রাজু।
গ্রামের এমন কোন খারাপ কাজ নেই যেখানে তার নাম নেই।
এইতো সেদিন ও পাশের গ্রামের এক মেয়েকে স্কুল যাওয়া আসার পথে আজেবাজে কথা বলার দায়ে জুতার মালা গলায় পরিয়ে,দুুই গ্রামের লোকের সামনে বিচার করা হলো।
সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছে রাজুর বাবা।
লজ্জায় চোখের পানি ছেড়ে চুপি চুপি কেঁদেছে।
ছেলের এমন ব্যাবহারের কোন মানে খুঁজে পায়না বাবা মা।
ছেলে›কে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো বাবা মায়ের।
ছেলেকে একদিন কোরআনের হাফেজ বানাবে।
একদিন অনেক বড় আলেম হবে রাজু।
হাজার হাজার লোকের সামনে কোরআনের তাফসির পেশ করবে!
গর্বে বুক ভরে যাবে বাবা মায়ের।
অথচ আজ রাজুর নামে একটার পর একটা বিচার আসে।
গ্রামের কারো কাছে মুখ দেখাতে পারে না রাজুর বাবা।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে লজ্জা অপমান আর ঘৃণায় মরে যেতে।
কত জাগায় যে চুরি করতে গিয়ে মাইর খেয়েছে রাজু তার যেন কোন শেষ নেই।
ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে বলার পরেও কিছুতেই ভালোর পথে আনতে পারে না বাবা মা।
কী ছিলো না রাজুর বাবার!
হালের গরু,কয়েক বিঘা আবাদি জমি,বড় বড় তিনটা পুকুর,বাঁশের বাগান বাড়ি ভিটা।
তবে আজ আর কিছুই নেই।
সব গুলোই এই রাজুর পিছনে শেষ করছে।
তবুও ছেলেকে ভালোর পথে আনতে পারলো না।
একটার পর একটা মামলায় জড়িয়ে যেতো রাজু।
আর বাবা জমি-জমা সব কিছু বিক্রি করে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতো।
রাজুর বাবা ভাবতো হয়তো তার ছেলে এবার তার নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
হয়তো এবার সে ভালোর পথে ফিরে আসবে।
তবে নাহ্ শত চেষ্টা করেও ভালোর পথে ফিরানো গেলো না।
রাজুর বাবা এক সময় তার নিজের ভুল বুঝতে পারে।
ছোট থেকে ছেলেকে সব সময় টাকা পয়সা দেওয়া ও তার বিষয়ে সঠিক ভাবে খোঁজ খবর না রাখার কারণে আজ এই পরিণতি রাজুর জীবন জুড়ে।
তবে ততোদিনে অনেক ডেরি হয়ে গেছে।
অন্ধকারের কালো মেঘ গ্রাস করে ফেলছে রাজুর আকাশ।
চাঁদনীর আলো হয়তো আর কখনই উঠবে না ওই আকাশে।
মসজিদে ফজরের নামায পড়ে বাড়ি মুখে ফিরছে গ্রামের মানুষ।
হঠাৎ সবুর মিয়ার পুকুর জলে ভাসতে দেখা যায় অপরিচিত এক তরুণীর লাশ।
মহুর্তের মাঝেই কয়েক গ্রামে ছড়িয়ে গেল সেই খবর।
থানা থেকে পুলিশ এলো লাশ তোলা হলো ডাঙায়।
লাশ দেখে কারো বুঝতে বাকি রইলো না রাতের কোন এক সময় ধর্ষণের পর ধারালো ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয় এই মেয়েকে।
বাঁশের চাটিয়া দিয়ে লাশ মুড়িয়ে মর্গে নেওয়া হয়।
পরের দিন পুলিশ এসে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় রাজুকে।
থানায় পুলিশের জেরার মুখে অনেক কিছুই উল্টা পাল্টা বলে রাজু।
সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
একে একে বেরিয়ে আসে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করার ভয়ংকর কাহিনী।
অনেক আগে থেকেই রাজুর পরিচিত এই তরুণী।
ও যখন ক্লাস নাইনে পড়তো তখন এই মেয়ে পড়তো ক্লাস সেভেনে।
তখন থেকেই প্রেমের অফার করে আসতো রাজু।
তবে বার বার তার প্রেমকে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে,
অন্য ছেলেকে দিয়ে ফোনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে।
আজ রাতে কোন এক নির্জন জাগায় নিয়ে ধর্ষণের পরে খুন করে লাশ ফেলে দেওয়া হয় সবুর মিয়ার পুকুরে।
এই হত্যাকাণ্ডে আরো তিন জন অংশ নেয় রাজুর সাথে।
এই মামলার প্রধান আসামি করা হয় রাজুকে।
মামলার রায়ে রাজুকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দণ্ডর আদেশ দেয় আদালত।
আর বাকি তিন জনকে অমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিতো করা হয়।
আর ছেলের এমন করুণ পরিণতির জন্য আজও উত্তর খুঁজে ফিরে রাজুর বাবা।
আসলে কে দায়ি ছিলো রাজুর এমন ভয়ংকর পথে পা-দেওয়ার জন্য?
পরিবার,সমাজা,না কী রাজুর বন্ধুরা?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন