Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার-১ আসনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি

কক্সবাজার থেকে জাকরে উল্লাহ চকোরী | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-১ চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসনটি গঠিত। এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ। সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ দুই উপজেলার উপক‚লীয় এলাকায় প্রায় এক লাখ একর জমিতে প্রতি বছর চিংড়ি চাষ হয়। এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে ঘের চাষিদের হাতে যেমন অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তেমনি স্বশস্ত্র ডাকাত দলের হাতেও রয়েছে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র। এসব অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডার থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া হিসেবে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা ও ব্যালেট বাক্স ছিনতায়ের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সাধারণ ভোটাররা। তাই তারা নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও র্শীষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। 

এ আসনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি মরহুম নেতা মাহমুদুল করিমের কাছে ১৯৮৯ সালে পরাজিত হন, তৎকালীন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম। এরপর এরশাদ সরকারের আমলে পরপর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যান, এ এইচ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের কাছে তৎকালীন জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জুর কাছ থেকে চতুর্থ বারের মতো অ্যাড. জহিরুল ইসলাম হেরে গিয়ে আ.লীগের দল থেকে তিনি পদত্যাগ করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে চলে যান। এর পর আ.লীগের মনোনয়ন পান সাবেক জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। তিনি দুইবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপাসরন খালেদা জিয়ার এপিএস ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের কাছ থেকে দুইবার ও তার সহধর্মিণী অ্যাড. হাসিনা আহমদের কাছ থেকে একবার পরাজিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারবিহীন জাপার জেলা সভাপতি মৌলভী ইলিয়াছ এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। বিগত আটটি নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থীরা বিএনপি থেকে চারবার, জাপা (এরশাদ) থেকে তিনবার ও জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে একবার হেরে যান। স্বাধীনতা পরবর্তী এ পর্যন্ত একবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে আ.লীগের কোনো প্রার্থী বিজয়ের মুখ দেখেননি।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাড. হাসিনা আহমদ এক লাখ ৫৬ হাজার ৫১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটমত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীক নিয়ে জেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। তার প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে, এক লাখ ২১ হাজার ১১১। এবার আ.লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন দিয়েছে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জাফর আলমকে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনে নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চকরিয়ায় দীর্ঘ দিন কর্মরত থাকায় আ.লীগের প্রার্থীর সাথে তাররয়েছে গভীর সম্পর্ক। ফলে বিএনপি প্রার্থী অ্যাড. হাসিনা আহমদ প্রশাসনের কাছে তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছেন না, এ অভিযোগ ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের। গত ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার চকরিয়া পৌরসদরে বিএনপির গণসংযোগ কালে আ.লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় সাবেক পৌরমেয়র ও বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দার ও যুবদল নেতা জুয়েল, জকরিয়া এবং নুরুল আমিনসহ সাত-আটজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। পরে এ ব্যাপারে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. হাসিনা আহমেদ চকরিয়া থানার ওসি বরাবরে এ অভিযোগ জানাতে গিয়ে, তিনিসহ তার দলের নেতাকর্মীরা আ.লীগের সন্ত্রাসীদের কাছে থানার ভেতরেই অবরুব্ধ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তারা হমলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে প্রাকাশ্যে গণসংযোগও করতে পারছেন না। বিভিন্ন এলাকায় তাদের নির্বাচনী ক্যাম্প ও পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই ওই তিন কর্মকর্তাকে চকরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। না হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিসহ অসংখ্যা প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী জাফর আলম জানান, অতীতে এ আসনে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৪০ বছর ধরে আসনটি আ.লীগের হাতছাড়া। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এ আসনটি আ.লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি নিজ দলের পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা অস্বিকার করেছেন।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে, মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে, চকরিয়ায় ৯৯টি ও পেকুয়ায় ৪০টি। চকরিয়ায় পুরুষ ভোটর সংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন। আর নারী ভোটার হচ্ছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন। পেকুয়ায় পুরুষ ভোটার ৫৬ হাজার ৬১০ জন ও নারী ভোটার হচ্ছেন ৪৪ হাজার ৬৫০ জন। চকরিয়ায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। পেকুয়ায় সর্বমোট ভোটার এক লাখ এক হাজার ২৬০ জন। চকরিয়া পেকুয়া মিলে এ সংসদীয় আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৬ জন।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, এ দু’ উপজেলার ১৪৯টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। অপর দিকে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলম দাবি করেছেন, গত ৪০ বছর ধরে এ আসনে আলেম সমাজ ও মহিলারা ভোট না দেয়ায় আসনটিতে একবার ও বিজয় হয়নি আ.লীগ প্রার্থীরা। এবার তিনি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন।
বিগত সময়ের নির্বাচনে চারবার বিএনপি, তিনবার জাতীয় পাটি ও একবার জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। উল্লেখ্য, চকরিয়া-পেকুয়া আসনটি জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের দুর্গ। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ লাইন ধরে যার ভোট সে প্রয়োগ করতে পারলে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে বলে ভোটারদের বদ্ধমূল ধারণা।
গত ১০ বছর ধরে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা হত্যা, গুম, মামলা ও হামলার ভয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে তারা ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কাঠামো অত্যান্ত শক্তিশালী বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্র দখল, ব্যালেট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালেট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারতে না পারলে এবারের নির্বাচনেও তাদের বিজয় ঠেকানো আ.লীগের প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয় বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের বদ্ধমূল ধারণা।
বর্তমান দুই উপজেলার প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোনো রদবদল না হওয়াতে প্রশাসনের পক্ষপাত আচরণ নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা শঙ্কিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দু’ উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রদবদলের দাবি জানিয়েছেন। এ আসনে, চকরিয়ায় ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং পেকুয়ায় সাতটি ইউনিয়ন। এ দুই উপজেলায় সর্বমোট ২৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৬ জন।
উল্লেখ্য, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় এক লাখ একর জমিতে প্রতিবছর চিংড়ি চাষ হয়। এসব চিংড়ি ঘেরে ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে ঘের চাষিদের হাতে যেমন অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তেমনি সশস্ত্র ডাকাত দলের হাতেও রয়েছে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র। এসব অবৈধ অস্ত্রভাণ্ডার থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া হিসেবে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে হামলা ও ব্যালেট বাক্স ছিনতায়ের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সাধারণ ভোটাররা। তাই তারা নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র উদ্ধার


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ