চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আট
আমি যদি তা দিয়ে আল্লাহর কোন ইবাদত বা সাওয়াবের কাজ করি, তবে তাতে কি আমার উপকার হবে? রসূল স. বললে: তুমি যদি সেই অর্থ হজ্জ্ব, জিহাদ, অথবা সাদকায় ব্যবহার করো, তবে তা আল্লাহর কাছে একটা মাছির ডানার সমানও মূল্য পাবে না। আল্লাহ পাক পবিত্র সম্পদ ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না।’’ “ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৪৫২।”
চুরি ঃ প্রচলিত ও ইসলামী আইনে চুরি একটি জঘণ্য অপরাধ। যার শাস্তিও ভয়াবহ। চুরির মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ ভোগ করা হারাম ও দন্ডনীয় অপরাধ। চুরি শব্দের অর্থ-অপহরণ, চৌর্য, পরের দ্রব্য না বলে গ্রহণ, গোপনে আত্মসাৎকরণ ও অন্যের অলক্ষ্যে চুরি করা, সম্পদ কুক্ষীগত করা ইত্যাদি। “ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪২৩।” চুরির আরবী প্রতিশব্দ হলো আস-সারাকাহ। এর আভিধানিক অর্থ-অপরের সম্পদ গোপনে হস্তগত করা। “মাওলানা উবায়দুর হক ও অন্যান্য সম্পাদিত, ফাতাওয়া ও মাসাইল, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০০, খ. ৫, পৃ. ৩১৭।” গোপনীয়ভাবে অন্যের নিকট হতে সম্পদ বা অন্য কিছু নিয়ে নেয়া। কোন বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি কর্তৃক অপরের দখলভূক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ সংরক্ষিত স্থান হতে গোপনে হস্তগত করাকে চুরি বলে। “গাজী শামছুর রহমান ও অন্যান্য সম্পাদিত, বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০১, ১. খ, ১ম ভাগ, পৃ. ৫৩।”
আব্দুল কাদির আওদা বলেন: ‘‘চুরি হচ্ছে গোপনে অন্যের সম্পদ নেয়া অর্থাৎ গোপন পন্থায় অথবা প্রাধান্য বিস্তার করে অন্যের সম্পদ হস্তগত করা।’’ “আব্দুল কাদির আওদাহ, প্রাগুক্ত, ২য় খ. পৃ. ৫১৪।”
লিসানুল আরব গ্রন্থে বলা হয়েছে- গোপনভাবে অপরের সম্পদ হরণ করাকে চুরি বলে। “ইবনে মানজুর, লিসানুল আরব, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৩২” তাহ্যীবুল লুগাত গ্রন্থে বলা হয়েছে: শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বালেগ ও বিবেকবান ব্যক্তি কর্তৃক দশ দিরহাম পরিমাণ সম্পদ হরণ করাকে চুরি বলে। “তাহজীবুল লুগাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৮৭।”
মোট কথা, কোন জ্ঞানবান বালেগ ব্যক্তি কর্তৃক অপরের মালিকানাধীন সংরক্ষিত নিসাব (এক দিনার বা দশ দিরহাম) পরিমাণ সম্পদের মূল্য, যার মাঝে চোরের কোন অধিকার কিংবা অধিকারের কোন অবকাশ নেই। গোপনে ও ধরা পড়ার ভয়ে সবার অলক্ষ্যে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে হস্তগত করাকে চুরি বলে। সে ব্যক্তি মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক অথবা মুরতাদ হোক অথবা পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক, স্বাধীন হোক কিংবা দাস হোক এতে কোন পার্থক্য হবে না। সবার বেলায় একই বিধান প্রযোজ্য। “ফাতওয়া ও মাসাইল, প্রাগুক্ত, ৫ খ. পৃ. ৩১৭।”
জাস্টিনিয়ানের বিধিবদ্ধ আইন এ প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী কাউকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তার সম্পত্তি ব্যবহার বা দখল করা অথবা অন্যের সম্পত্তি অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার নাম চুরি। “নিমুলেন্দু ধর, রোমান আইন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬৯।”
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, অপহরণ করার উদ্দেশ্যে অন্যের অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাত বা ব্যবহার করলে তা চুরি বলে বিবেচিত হয়। আর চুরির দায়ে শুধু চোর নয়, চোরের সহায়তাকারী এবং পরামর্শদানকারীও অভিযুক্ত হতো। “প্রাগুক্ত।”
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘হে নবী! মুমিন নারীগণ যখন তোমার নিকট এসে বায়আত করে এ মর্মে যে, তাারা আল্লাহর সহিত কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না ...... তখন তাদের বায়আত গ্রহণ করিও।’’ “আল-কুরআন, ৬০:১২।”
আল-কুরআনের চুরির শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘আর পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও এতো তাদের কৃতকর্মের ফল এবং প্রদণ্ড আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’’ “আল-কুরআন, ৫ : ৩৮।” উল্লেখ্য যে, ইমাম চতুষ্ঠয়ের মতে, হাত কব্জি থেকে কেটে দিতে হবে। “মুহাম্মদ জামালুদ্দীন কাসেমী, মুহাসিত তাবীল, মিসর: দারু ইহইয়ায়িল কুতুবিল আরাবিয়্যাহ, তা.বি., খ. ৬, পৃ. ১৯৭৬।”
প্রকাশ থাকে যে, প্রথমবার চুরির দায়ে ডান হাত, দ্বিতীয়বার চুরির দায়ে বাম পা কেটে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সকল ইমাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।