চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
নয়
“আর-রাজী আল-মালিক, আল-মুনতাকা, বৈরূত: দারুল ফিকরিল আরাবী ১৪০৪, খ. ৭, পৃ. ১৬৭; মুহাম্মদ জামালুদ্দীন কাসেমী, মুহাসিনুত তা’বীল, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ১৯৭৬। তৃতীয়বার চুরি করলে তার শাস্তি কী হবে এ বিষয়ে অনেক মতভেদ পরিলক্ষিত হয় যা এ স্বল্প পরিসরে আলোচনার সুযোগ নেই। তাই উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য উল্লেখিত গ্রন্থগুলো দেখা যেতে পারে। আর-রাজী আল মালিক, আল-মুনতাকা, বৈরূত: দারুল ফিকরিল আরাবী, ১৪০৪, খ. ৭, পৃ. ১৬৭।”
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৯ নং ধারা অনুযায়ী সাধারণ চুরির শাস্তি হলো তিন বছর কারাদণ্ড অথবা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবে। “গাজী শামছুর, রহমান, দণ্ড বিধির ভাষ্য, ধারা-৩৭৯।” আর বাসাবাড়ি থেকে চুরি করলে শাস্তি হলো সাত বছর কারাদন্ড অথবা অর্থ দন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। “প্রাগুক্ত, ধারা-৩৮২।”
রোমান আইনে আগে চুরিকে একটি দেওয়ানী ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো; কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটিকে ফৌজদারি ও দন্ডণীয় অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। কাজেই চুরির বিরুদ্ধে দ্বিবিধ প্রতিকার ছিল নিম্নরূপ: ১. চুরির ধরণ যাই হোক চোরাই মাল ফেরৎ দেয়া হচ্ছে চুরির প্রতিকারে প্রাথমিক ব্যবস্থা। ২. চুরির ক্ষেত্রে শান্তি জরিমানা। ক. হাতে নাতে ধরা পড়া চুরির ক্ষেত্রে চোরাই মালের মূল্যের চারগুণ এবং পরে ধরা পড়া চুরির ক্ষতিপূরণ চোরাই মালের মূল্যের দ্বিগুণ। “নির্মলেন্দু ধর, রোমান আইন, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭০।”
ডাকাতি ঃ ডাকাতি বড় ধরণের অপরাধ। ডাকাতি চুরির চেয়ে অধিকতর ভয়াবহ। পরকালীন শাস্তি ছাড়াও এ অপরাধের জন্য ইসলাম পার্থিব দন্ডবিধি দিয়েছে। মানব জীবনে অর্থ-সম্পদ থাকা অপরিহার্য। ইসলাম এ ধন-সম্পদ অর্জন ও ব্যয় ভোগের জন্য পূর্ণাঙ্গ বিধান পেশ করেছে। হলাল পথে উপার্জিত ধন-সম্পদকে হালাল ঘোষণা করেছে আর হারাম পথে অন্যায় ও জুলুমের মাধ্যমে আহরিত ধন-সম্পদকে হারাম করে দিয়েছে এবং পরকালে কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তিকে নিপতিত হওয়ার ভয় দেখিয়েছে।
ডাকাত শব্দের অর্থ দস্যু, লুণ্ঠনকারী, বলপূর্বক অপহরণকারী, অসম সাহসী ও নির্ভীক এবং ডাকাতি শব্দের অর্থ হল: দস্যুবৃত্তি, দস্যু দ্বারা লুণ্ঠন, অসম সাহসিক ও বিস্ময়কর দুষ্কর্ম ইত্যাদি। “ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৬।”
যে সব লোক সশস্ত্র হয়ে পথে-ঘাটে, ঘরে-বাড়িতে, নদীতে-মরুভূমিতে নিরন্ত্র মানুষের উপর হামলা চালায় এবং প্রকাশ্যভাবে জনগণের সম্মুখে জনগণের ধন-মাল হরণ করে নিয়ে যায়, তাদেরকেই বলা হয়েছে ডাকাত, লুণ্ঠনকারী বা মুহারিবুন। “আল মুগনি লি শাহহিল কাবির, তা.বি.খ. ১০, পৃ. ৩০৩।”
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘‘যদি চুরি করিবার উদ্দেশ্যে বা চুরি করিতে কিংবা চুরিতে লব্দ সম্পত্তি বহন বা বহনের উদ্যোগকালে অপরাধকারী তদুদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় বা আঘাত করে কিংবা আটক করে ভীতি প্রদর্শন করে তাহলে উক্ত চুরিকে দস্যুতা বলে।’’ “গাজী শামছুর, রহমান, দণ্ডবিধির ভাষ্য, ধারা-৩৯০।”
আর সেই ক্ষেত্রে ৫ বা ততোধিক ব্যক্তি মিলিত হইয়া কোন দস্যুতা অনুষ্ঠান করে বা করিবার উদ্যোগ করে তাহা হইলে তাকে ডাকাতি বলে। “প্রাগুক্ত, ধারা-৩৯১”
যারা ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ ছিনিয়ে নেয় এবং ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ও সম্ভ্রমহানী ঘটায় তাদের ক্ষেত্রে আল-কুরআনের সরাসরি শাস্তির ঘোষনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্জনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।’’ “আল-কুরআন, ৫:৩৩।”
ডাকাতি প্রতিরোধে মুমিনদের এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটলে মুমিন নির্বিচার থাকতে পারে না। কেননা এটা ঈমানের পরিপন্থী আচরণ। এ প্রসঙ্গে নবী স. বলেছেন: ‘‘যখন কোনো লোক কোন মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয় আর লোকেরা তা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে তখন সে আর মুমিন থাকে না।’’ “ইমাম মুসলিম, সহীত মুসলিম, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ৭৫, হাদীস নং-৮৬।”
অতএব ডাকাতি সুস্থ সমাজব্যবস্থার পক্ষে খবুই ক্ষতিকর ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। এ কারণে ইসলামী আইনে ডাকাতি জঘন্য অপরাধ। ইসলামী সমাজে ডাকাতির কোন সুযোগ থাকতে পারে না। ডাকাতির পথও কারণ সর্বতোভাবে বন্ধ করা একান্তই আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।