দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
হারাম মাধ্যমে উপার্জন করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। অবৈধ পন্থায় সম্পদের মালিক হওয়ার ব্যাপারে ইসলাম সতর্ক করেছে এবং এমন পন্থা অবলম্বনকারীদের জন্য দুনিয়াতে ও আখেরাতে শাস্তির ধমক রয়েছে। এসব অবৈধপন্থা আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নামে দগ্ধ হওয়ার কারণ। তাই হারাম পথে উপার্জনকারীদের অতি তওবা করে মানুষের সম্পদ শরিয়তসম্মত পন্থায় তাদের ফেরত দেওয়া উচিত। অবৈধ উপার্জনের কিছু পন্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। যেন এসব বর্জন করা সহজ হয়।
প্রথমে উল্লেখ করছি সুদের কথা। এটি মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধ। নিকৃষ্ট পাপাচার। একমাত্র অবাধ্য, পাপিষ্ঠ ও আল্লাহদ্রোহী ব্যক্তিই সুদের সাথে জড়িত হতে পারে। পবিত্র কোরআনে এমন লোকদের কঠিন পরিণতির বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা (কিয়ামতের দিন) এমনভাবে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঔই ব্যক্তি, যাকে শয়তান তার স্পর্শের দ্বারা মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ হলো, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদ নেওয়ার মতোই! অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। সুদ পরিত্যাগ না করলে তার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে যুদ্ধের ঘোষণা। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যদি তোমরা (সুদ) পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৭৯)। সুদখোরকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো মহান আল্লাহর অধিকার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘চার শ্রেণির মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো এবং তাঁর নিয়ামতের স্বাদ উপভোগ করতে না দেওয়া আল্লাহ তায়ালার অধিকার। ১. মাদকাসক্ত, ২. সুদগ্রহীতা, ৩. অন্যায়ভাবে এতিমের সম্পদ ভক্ষণকারী ও ৪. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২৬০)। সুদ সংশ্লিষ্ট সবার ওপর রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সুদের সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৯৮)
দ্বিতীয়ত মজুতদারি ও গুদামজাত করা। অধিক লাভে বিক্রি করার আশায় পণ্য মজুদ রেখে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করাকে গুদামজাত বলে। এটি একটি ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট উপার্জনের পন্থা। ইসলাম যে সকল অপরাধ থেকে সতর্ক করেছে, সেগুলোর অন্যতম হলো মজুতদারি। ওমাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গুদামজাত করল, সে একজন পাপী।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬০৫) ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি চল্লিশদিন পর্যন্ত খাদ্য গুদামজাত করে রাখে, সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত, আল্লাহও তার জিম্মাদারি থেকে মুক্ত।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৮৮০) ইবনে মাজাহর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে মুসলমানদের খাদ্য জমা করে রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দারিদ্র ও কুষ্ঠরোগের মাধ্যমে শাস্তি দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ : ২১৫৫)
অবৈধ উপার্জনের আরও একটি মাধ্যম হলো জুয়া ও বাজি ধরা। জুয়া উপার্জনের নিকৃষ্ট পন্থা। এ নিকৃষ্ট পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরষ্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তোমরা কি এখনো নিবৃত্ত হবে না? (সুরা মায়িদা : ৯০-৯১)।
জুয়া ও বাজি ধরার বস্তুসমূহ দিয়ে খেলাধুলা করা হাদিসে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এরই একটি প্রকার হলো, পাশা খেলা। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে ইমাম আবু দাউদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে পাশা খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করল।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯৯)। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে পাশা দ্বারা খেলল, তার হাত যেন শুকরের গোশত ও রক্তে চুবে গেল।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৬০)
বর্তমান সময়ে অবৈধ যে পন্থা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তা হচ্ছে ঘুষ। এটিও উপার্জনের নোংরা একটি পদ্ধতি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ কর না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনেশুনে অবৈধ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)। ঘুষের ছড়াছড়ি হলে সমাজে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি- যখন কোনো জাতির মাঝে সুদের ব্যাপক প্রচলন হয়ে যায় তখন তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হয়। আর যখন তাদের মাঝে ঘুষের আধিক্য দেখা দেয়, তখন তারা শত্রুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৪/২০৫)
বিনা কারণে সম্পদ মজুদ করে পরবর্তী সময়ে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে যে মুনাফা অর্জিত হয় তাও অবৈধ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা সোনা ও রুপা জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাবের সসংবাদ দিন।’ (সুরা তওবা : ৩৪)। সম্পদ মজুদ করা দু’ অবস্থায় হারাম। এক. জাকাত না দিয়ে সম্পদ মজুদ করা। দুই. মুসলমানের দারিদ্র ও কঠিন মুহূর্তে সম্পদ জমা করা। (তাফসিরে কুরতুবি : ৮/১২৫)।
এজন্য আমাদের কর্তব্য হবে, এই মারাত্মক ব্যাধিগুলো থেকে বেঁচে থাকা। নিজের পরিবার-পরিজনকেও বাঁচিয়ে রাখা। রিজিকের প্রাচুর্যের দোয়া না করে বরং রিজিকে বরকত হওয়ার দোয়া করা। আল্লাহর ওপরই পূর্ণাঙ্গ ভরসা করে হালাল রিজিকের ওপর সন্তুষ্ট থাকা। যদি প্রয়োজন পুরা না হয়, তাহলে আল্লাহর কাছেই দোয়া করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হালাল রিজিক উপার্জনের এবং হারাম থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, দারুল উলূম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।