Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলমানদের ফাঁসানোর চেষ্টা যোগীর পুলিশের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে যোগী সরকারের অধীন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা। বুলন্দশহরে বজরং দলের নেতৃত্বে থানায় তান্ডব, পুলিশের গাড়ি জ্বালানো এবং পুলিশকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার যোগী পুলিশের তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘গো-হত্যা’-র ঘটনাটিই। যে বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ থানায় তান্ডব চালানোর ঘটনার অভিযুক্ত, তার অভিযোগের ভিত্তিতেই ‘গো-হত্যা’র তদন্ত শুরু করল পুলিশ। সেই তদন্তে দুই নাবালকসহ যে সাত গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, তারা প্রত্যেকেই মুসলমান। থানায় তান্ডব এবং পুলিশকর্মীকে খুনের ঘটনা ছেড়ে গো-হত্যার তদন্তকেই কেন বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম গুলোই।
সংবাদ মাধ্যম এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই নাবালক ছাড়া বাকিরা ঘটনার দিন গ্রামেই ছিলেন না। ওই দুই নাবালককে আটক করা হলেও নাবালক বিবেচনায় চার ঘন্টারও বেশি সময় পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে ২৫টি গবাদি পশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় বুলন্দশহরে। গো-হত্যার গুজব ছড়িয়ে পথে নামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ হাজির হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। তখনই বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে নিহত হন সুবোধকুমার সিংহ নামে এক পুলিশ ইনস্পেকটর। সুমিতকুমার সিংহ নামে এক যুবকেরও মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বুলন্দশহর জেলার বজরং দলের প্রধান যোগেশ রাজ। তাকে এখনও গ্রেফতার করেনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। উল্টো তিনি পুলিশের কাছে ওই মুসলমানদের বিরুদ্ধে গো-হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন। যোগেশের বয়ানের ভিত্তিতেই পুলিশ কর্মীকে হত্যার তদন্ত ছেড়ে ওই মুসলমানদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার নয়াবংশ গ্রামে সাত মুসলমানের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয় ঘরে ঘরে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ১১ ও ১২ বছর বয়সী দুই নাবালককে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে এক আত্মীয়কেও নিয়ে যায় তারা। যে আত্মীয়কে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘দু’টি বাচ্চার সঙ্গে আমাকেও বুলন্দশহর থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঘণ্টাচারেক ওখানে আটকে রাখা হয়েছিল আমাদের। ওদের নাম আর ফোন নম্বর লিখে দেওয়ার পর আমাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।’
দুই নাবালকের কাছে এই পরিস্থিতি ছিল ভীষণই আতঙ্কের। তারা সংবাদমাধ্যমে বলেছে, ‘আমরা কোনও দিন থানায় যাইনি। খুব ভয় লাগছিল। কোনও কথাই আমরা বলতে পারিনি। পুলিশকে কাকা জানায়, আমাদের বয়স কম। আধার কার্ড দেখিয়ে সেই প্রমাণ দেওয়ার পর পুলিশ আমাদের ছেড়ে দেয়।’
যোগেশ রাজের অভিযোগে বলা হয়েছিল, মহাও গ্রামের পাশে জঙ্গলের ধারে সাত মুসলমানকে তারা গরু কাটতে দেখেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই সাত জন পালিয়ে যান। সেই সাত জনের নামেই থানায় অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন যোগেশ রাজ। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, এই সাত জনই পার্শ্ববর্তী নয়াবংশ গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু সাতজনের যে তালিকা দিয়েছেন যোগেশ, সেই তালিকা নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। তালিকার প্রথম নামটিই সুদাইফের। তিনি কোনও দিনই ওই গ্রামে থাকতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তালিকায় দ্বিতীয় নাম ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তির। পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, ওই গ্রামে দু’জন ইলিয়াস থাকতেন। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই অন্তত ১৫ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তৃতীয় নাম শরাফতের। তিনিও বহু দিন আগে গ্রাম ছেড়ে হরিয়ানায় গিয়ে বসবাস করছেন। তালিকায় নাম ছিল সরফুদ্দিন আর পারভেজের। তারাও ঘটনার দিন নয়াবংশ গ্রাম থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বুলন্দশহরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ছিলেন। যোগেশ রাজের দেওয়া তালিকার মধ্যে মাত্র দু’জন ঘটনার দিন গ্রামে ছিলেন বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই দু’জনই আবার নাবালক!
এই প্রসঙ্গে, পুলিশের ডিজি পে সিং বলেছেন, ‘বুলন্দশহরের ঘটনা একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ। মৃত গরুর মাংস সেখানে কিভাবে এসেছে, কে এবং কেন এনেছে, কোন পরিস্থিতিতে আনা হয়েছে?’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের কিছুদিন আগে, রাজনৈতিকভাবে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে এই ঘটনা স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা কিনা, পুলিশের সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে, তাহলে কী যোগেশ রাজের অভিযোগের পিছনে লুকিয়ে আছে কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকায় আরও জোরাল হচ্ছে সেই প্রশ্ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ