Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে প্রতি তিন জনে একজন লিভার রোগী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশে প্রতি তিন জনে একজন লিভার (যকৃত সংক্রান্ত) রোগে ভুগছেন। পাঁচ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের লিভার জটিলতায় আক্রান্ত। এতো বেশি মানুষ লিভারের সমস্যায় ভুগলেও দেশে মাত্র একশো জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। একজন মাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঁচ লাখ লিভার সংক্রান্ত রোগীকে সেবা দিচ্ছেন। লিভার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে লিভার রোগে বেশ পরিবর্তন এসেছে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে যাচ্ছে। একই সাথে শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় এবং অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে মানুষ মুটিয়ে যাচ্ছেন। ফলে লিভারে অনেক চর্বি জমছে। এখন ফ্যাটি লিভারই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। লিভার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিস হলে প্রতিস্থাপনই শেষ ভরসা। বাংলাদেশে আগামী জানুয়ারি মাসের দিকে প্রতিস্থাপনের সুখবর আসতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে লিভার বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য দেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনে দেশী ও বিদেশীসহ মোট দুই হাজার ২০০ চিকিৎসক অংশ নেন। বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মবিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব) আব্দুল মালিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন হেপাটোলজি সোসাইটির সহ-সভাপতি প্রফেসর মো. আবু সাঈদ, রন হেপাটোলজি সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. শাহীনুল আলম, ডা. গোলাম আজম, ডা. মোতাহার হোসেন।
অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, জাপান, ভারত ও মিশরের বিশিষ্ট লিভার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন হেপাটোলজি সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. শাহীনুল আলম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রফেসর মবিন খান, হেপাটোলজি সোসাইটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু সাঈদ।
সম্মেলনে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ, শিশু ও গর্ভবতি মায়েদের লিভার রোগের চিকিৎসা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫ লাখ মানুষ, সি ভাইরাসে আক্রান্ত ১৫ লাখ। ১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশের ৭ শতাংশ মানুষ বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। বর্তমানে এটা কমে ৪ শতাংশে নেমেছে। হেপাটাইটিস ভাইরাস কর্মক্ষম মানুষকে বেশি আক্রান্ত করছে এবং তাদের দীর্ঘ মেয়াদে কর্মহীন করে দিচ্ছে। তারা জানান, বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বৃষ্টির সময় জন্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। কারণ এ সময় বৃষ্টির পানিতে উপচে স্যুয়ারেজের পানির সাথে মিশে গিয়ে খাবার পানিকে দূষিত করে। গত বর্ষা মওসুমে চট্টগ্রামের অনেক মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হয় একই কারণে। তারা বলেন, চট্টগ্রামে জন্ডিসের হুমকী এখনো রয়ে গেছে। একই সঙ্গে ঢাকায়ও জন্ডিস হয় তবে মোহাম্মদপুরে প্রতি বছরই হয়ে থাকে। কারণ এসব এলাকার সরবরাহ করা পানি বিশুদ্ধ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লিভার সিরোসিস হয়ে গেলে লিভার প্রতিস্থাপনই (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) সমাধান। কিন্তু বাংলাদেশে মাঝখানে চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সাফল্য আসেনি নানা কারণে। ভারতে ৯৬-৯৭ সালে চেষ্টা হয়েছিল লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য। কিন্তু প্রথম ৭টি প্রতিস্থাপনের রোগীই মারা গিয়েছিল। কিন্তু ভারত তাতে দমে যায়নি। এখনতো ভারতের ৯০টি সেন্টারে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হচ্ছে। বাংলাদেশেও চেষ্টা চলছে। আমাদের বিদ্যমান আইনে কিছু সমস্যা ছিল। তবে আইনটি বর্তমানে সহজ হওয়ায় লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের চেষ্টা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতে হয়তো এ ধরনের সুখবর পাওয়া যেতে পারে। লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. শাহীনুল আলম বলেন, ভারতে লিভার প্রতিস্থাপনে ২৫ লাখ ভারতীয় মুদ্রা লাগে। বাংলাদেশে আমরা ২০ লাখেই করতে পারব হয়তো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লিভার

৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ