Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ও কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান রুটিন ওয়ার্ক হিসেবেই পরিগণিত। বিগত প্রায় সব নির্বাচনের আগেই এ ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে। এমনকি বৈধ বা লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেয়ার নোটিশও জারি করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো এ ধরনের তৎপরতার ঘোষনা দেয়নি। তবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের তৎপরতা তেমন সফল হতে দেখা যায়নি। দেশের চলমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জননিরাপত্তার স্বার্থেই বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুম-খুনের ঘটনা সমাজে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করেছে। যত্রতত্র অজ্ঞাতনামা গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে ঢাকায় এসে নিখোঁজ হওয়ার পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে যশোরের এক বিএনপি নেতার। গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, গত কয়েকমাসে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে প্রায় অর্ধশত বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের বেশীরভাগই গুলিবিদ্ধ ও হত্যাকান্ডের শিকার। দেশের বিভিন্ন স্থানে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মজুদ, প্রদর্শন ও ব্যবহার বেড়ে চলেছে বলে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়।
গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের সীমান্তের অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে প্রবেশ করছে আগ্নেয়াস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, চোরাকারবারিরা সারাবছরই আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করছে। বর্তমানে দেশে কি পরিমান অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রমবর্ধমান ঝনঝনানি দেশে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এতে নিরাপত্তা ও অপরাধ বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তেমন গরজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিজিবির পাহাড়া ডিঙ্গিয়ে সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে কিভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক ও হাজার হাজার আগ্নেয়াস্ত্র দেশে ঢুকছে সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন মাদকবিরোধী র‌্যালী ও জনসচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালাচ্ছে অন্যদিকে মাদকের চোরাচালান ও কেনাবেচায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্যকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। মাদকের সাথে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং যুবসমাজে অপরাধ প্রবণতার বৃদ্ধির এক নিবিড় যোগসুত্র বিদ্যমান। জননিরাপত্তা, নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান, কেনাবেচা এবং ব্যবহারে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
জননিরাপত্তার সাধারণ হুমকির কথা বাদ দিলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে চাইলে অনতিবিলম্বে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশে চিরুনী অভিযান চালাতে হবে। সেই সাথে সীমান্তের যে সব পয়েন্ট দিয়ে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে সেখানে কঠোর নজরদারী ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে অবাধে মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করে চোরাচালানি ও ছিচকে অপরাধীরাও এখন মাফিয়া ডনে পরিনত হয়েছে। গতকাল প্রত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক রিপোর্টে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে চাপাই নবাবগঞ্জের এক অসচ্ছল দম্পতির অল্পদিনে শতকোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কাহিনী জানা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেনীর সদস্যের যোগসাজশে সারাদেশে এমন অসংখ্য পরিবার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে কোটিপতি হয়ে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। এদের রুখতে না পারলে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য পরিবেশ আরো কলুষিত হয়ে পড়বে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষনা দিয়ে অভিযান পরিচালনার পর দ্বিতীয় ধাপে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার কথা থাকলেও গত ৬ মাসেও তা দেখা যায়নি। জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র ১মাস বাকি। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পাওয়া ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংর্ঘষ ও অস্ত্রের মগড়া দেখা গেছে। গত দুতিন দিনে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। অবৈধ অস্ত্র ও পেশী শক্তির দ্বারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রাস্তা বন্ধ করতে চাইলে এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন