Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারে সন্তুষ্টি ঢাকায় হতাশা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া প্রশ্নে দ্য স্টেটসম্যানের সম্পাদকীয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশে গাদাগাদি করে আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এতে সামগ্রিক অর্থে মিয়ানমারে একরকম কৃত্রিম সন্তুষ্টি কাজ করছে। খুব শিগগিরই তাদের প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারে যে পরিমাণে সন্তুষ্টি কাজ করছে, বিশেষত বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস আগে সেই একই পরিমাণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে থাকবে ঢাকা। এতে সন্দেহ খুব সামান্যই। এখনও ওই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হতে অনেক পথ যেতে হবে। 

অতএব, দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় ততদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একমত। তাদের পক্ষ থেকে এগুলো নিশ্চিতে চাপ বিদ্যমান থাকবে বলেই মনে হয়। বৃহস্পতিবার প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়।
একজনও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় তাদের আদি জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আবুল কালামের হতাশার সুর- ‘এখন স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি নন রোহিঙ্গারা’।
এই বক্তব্য প্রশাসন থেকে স্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকার তাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠাতে পারে না। তবে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করে যাবে সরকার। প্রত্যাবর্তন এখন যে ঘটবে তা মনে হয় না। এখানে এ সঙ্কটের দুটি কারণ তারা নিজেরাই। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় নীতি। একে জাতিসংঘ জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পুনর্বাসন বিষয়ে অবকাঠামোতে ঘাটতি রয়েছে। অং সান সু চির নীরবতাকেও অবজ্ঞা করা যায় না।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের স্বাস্থ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে উপকূল থেকে উপকূলে ছুটছেন। তারপরই তাদের সর্বশেষ সুস্পষ্ট বক্তব্য বেরিয়ে এসেছে। ‘দেশহীন এসব মানুষদের’ কাছ থেকে আসা সুস্পষ্ট এমন বার্তা অনুরণন তুলেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে। এটা হলো একজন মানুষের অন্য একজন মানুষের প্রতি মানবিকতার পরিমাপ। একটি দেশের নোংরামি ও বঞ্চনাকে দেখা হতে পারে এই নিষ্পেষণের কারণ হিসেবে। একটি দেশের গৃহহীন মানুষকে টানতে হচ্ছে আরেকটি দেশকে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিজেরাই যেন একটি আইন। তাই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকান্ড বন্ধে অং সান সু চি কিছুই করতে পারেন না।
শরণার্থীদের ভয়াবহ বাস্তবতা বেদনাদায়ক। শিশুসহ শত শত রোহিঙ্গা সমস্বরে স্লোগান দিয়েছেন ‘আমরা ফিরে যেতে চাই না’। তাদেরকে বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, ‘আমরা আপনাদের জন্য সব কিছু আয়োজন করেছি। এখানে আমাদের ৬টি বাস আছে। আমাদের ট্রাক আছে। আমাদের সঙ্গে খাবার আছে। আমরা আপনাদের জন্য সব কিছু করতে চাই। আপনারা যদি ফিরে যেতে চান তাহলে আপনাদেরকে সীমান্ত পর্যন্ত, ট্রানজিট ক্যাম্প পর্যন্ত নিয়ে যাব আমরা।’ সরকারের এই নিশ্চয়তা প্রতীকী, যা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো নিরাপদ অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয়নি। এমন বক্তব্যের বিষয়ে নেপিদো প্রশাসন বা ঢাকা অবহিত নয়- এমন হতে পারে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শরণার্থী অধিকার বিষয়ক পরিচালক বিল ফ্রেলিক বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে তারা নিরাপদে থাকবেন এমন কোনো কথা মিয়ানমার সরকার বলেনি অথবা এমন কিছু তারা করেওনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ