বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেটের ৬টি আসনে নির্বাচনী মাঠে ত্রিমুখী সংকটে রয়েছেন মহাজোটের এমপিরা। সংকট উত্তরণে বাস্তবিক অর্থে নেই কোন উপায় এমনটিই মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিক সচেতনরা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে হলে মহাজোটকে নতুন মুখে ভরসা করতে হবে। নচেৎ ভোটের আগেই পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে মহাজোট প্রার্থীদের। কারন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা সরকার বিরোধী জনমত, নিজ দলে বিরোধীতা সহ নিজদের বির্তকিত কর্মকান্ডে এখন কোনঠাসা।
সিলেটের মর্যাদাপূর্ণ (সদর-সিটি করপোরেশন)- ১ আসনে মহাজোট তথা আ্ওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি নিজে একাধিকবার ঘোষনা দিয়েছেন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিবেন না তিনি। তার সহোদর জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমনে এ আসনে নির্বাচন করবেন বলেও জনসম্মুখে প্রচারনা চালিয়েছেনও তিনি । তারর্পও মুহিতের নাম নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘুরেফিরে উঠে আসছে। বয়সের ভারে ন্যূজ্ব মুহিত নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি নিজ নির্বাচনী এলাকায়। দলের মধ্যে সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নিজ বলয় কেন্দ্রিক উপ-গ্রুপ নির্ভর ছিল তার দৌড়ঝাঁপ। বিগত সিটি নির্বাচনে তার উপর সন্তুষ্ট ছিল না স্থানীয় আওয়ামীলীগ। তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া তার বলয়ের একাধিক নেতাদের দাপুটে চরিত্র দলের বিরাট অংশের নেতাদের মধ্যে চাপা দুরত্ব সৃষ্টি করে রাখে তার সাথে। প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন না জ্বলল্ওে ভেতরে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছেন স্থানীয় র্শীষ নেতারা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আখের গুছিয়ে নিয়েছেন মুহিতের আশপাশের দলের কতিপয় নেতা। তাদের নিয়ন্ত্রণে মুহিতকে রাখতে গিয়ে, বঞ্চিত করে রেখেছেন অন্য নেতাদের। এর নেতিবাচক প্রভাবেও দলের নেতাকর্মীদের নিকট ম্লান হয়ে পড়েছেন মুহিতের সহোদর সম্ভাব্য প্রার্থী ড. একেএম আব্দুল মোমেনও। সেকারনে মুহিতে চরম ঝুঁকিতে থাকবে আগামী নির্বাচনে মহাজোট। এক্ষেত্রে নতুন গ্রহনযোগ্য মুখ নির্বাচনে প্রার্থী হলে, মহাজোটের জন্য ভোটের মাঠে অন্তত মঙ্গল হতে পারে।
সিলেট (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর)-২ আসনে আ্ওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাদের অভ্যন্তরীন দাপটে হাতছাড়া হয় বিগত সময়ে। ভাগ্যক্রমে জাপা প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি হ্ওয়ার গৌরব অর্জন করেন। জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী ও তৎকালীন এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে বঞ্চিত করে এ আসনে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় পাটির হাতে। ভোটের বাজারে লাঙ্গলের কোন অবস্থান না থাকলেও একতরফা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এহিয়া হয়ে যান মহাজোটের এমপি। এবার ফের শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন। অন্তÍত ৫০ভাগ সুষ্ট ও অবাধ নির্বাচন হলেও বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিখোঁজ ইলিয়াস পতিœ তাহসিনা রুশদি লুনাকে টক্কর দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে মহাজোটের যেকোন প্রার্থীর জন্য। এছাড়া মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের লড়াই এতোই তীব্র ও ভয়ানক যে, এদের কেউ একজন নির্বাচনের টিকিট নিশ্চিত করলে, তারা পারস্পরিক সহযোগিতার বদলে প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে বিরোধীতায় অবতীর্ণ হবেন-ই।
সিলেট (দক্ষিণসুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ)-৩ আসনে নৌকার অবস্থা ভালো হলেও বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সমাদ চৌধুরী কয়েছকে সহ্য করতে পারছে না দলের কোন সারির নেতারাই। প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা দিয়ে মাঠে অবস্থান নিয়েছেন তারা। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পাটির কোন অবস্থান নেই এই আসনে, এমনকি নেই কোন কোন যোগ্য প্রার্থীও। এছাড়া নৌকার ফসল এই আসনে এতোই ভালো যে, লাঙ্গলে কোন অবস্থায় উঠবে না নৌকা। আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সাবেক ছাত্রলীগের এক নেতার মায়ের একটি মামলাও আদালতে চলমান। নৌকার অবস্থান যতটা ভালো ঠিক তার বিপরীত অবস্থান এই সংসদ সদস্যের। দীর্ঘদিনের নানা ক্ষোভ নিয়ে বসে আছেন স্থানীয় আ্ওয়ামীলীগের নেতারা। স্থানীয় একাধিক নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান ন্ওেয়ার অভিযোগ রয়েছে এমপি কয়েছের বিরুদ্ধে। জাামাত-বিএনপি তোষন ও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই সংসদ সদস্যের উপর। তাই কোনভাবেই সুবিধা করতে পারবেন না তিনি। কেননা এমপি কয়েছের সাথে নেতাকর্মীদের বিরোধ ও দুরত্ব এতো বেশি যে কোনো নোটিশই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবে না দলের নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে এই আসনটিতে অন্তত ভোট যুদ্ধে ফাইট করতে হলে নৌকার জন্য নতুন মুখের প্রয়োজন। কর্মী বান্ধব নতুন জনপ্রিয় মুখ মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে ভালো করতে পারবে নৌকা এই আসনে।
সিলেট (কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তা-গোয়াইনঘাট)-৪ আসনে নৌকার ভাগ্যমান প্রার্থী ইমরান আহমদ। এবার প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। তার সমকক্ষ কোন প্রার্থী এই মুর্হুতে নেই আ্ওয়ামীলীগ তথা মহাজাটের। সরকার বিরোধী তাপ, দলের বঞ্চিত স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ তার বিরুদ্ধে থাকলেও বিকল্প প্রার্থী নেই দলে। সেকারনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মনোনয়নে বিচক্ষনতার পরিচয় দিলে ফলাফল তাদের পক্ষে যাবে। কারন ইমরান বিরোধী নৌকা সমর্থকরা এক্ষেত্রে ভরসা করবে বিএনপির প্রার্থীর উপর। পাথুরে সম্পদে ভরপুর এ আসনটিতে লুটপাটের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। দলমতের উর্ধ্বে উঠে এই লুটপাটের মহোৎসবে শরিক হয় তারা। ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিরংকুশ প্রভাব থাকে, বিগত সময় ধরে তাই চলমান। সেকারনে নৌকার সুবিধা বঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিকল্প সুযোগ নিশ্চিত করতে চাইবে বিএনপির প্রাথীকে কেন্দ্র করে।
সিলেট (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) ৫ আসনে জাতীয় পাটি নেতা সেলিম উদ্দিন মহাজোটর এমপি হওয়ার সুযোগ পান। কোন পারদেই তিনি উর্ত্তীণ হতে পারবে না আসন্ন নির্বাচনে। একতো এই আসনটি তার নিজের এলাকা নয়, দ্বিতীয়ত এই আসনে দলের কোন সাংগঠনিক ভিত্তিও নেই । অপরদিকে আ্ওয়ামীলীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রিয় একাধিক নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী এই আসনে। তাদের কেউ মনোনয়ন পেলে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সুযোগ পাবে দলের নেতাকর্মীরা। নয়তো এই আসনে মহোজোটের কপাল দু:খ থাকবে।
সিলেট (গোলাপগঞ্জ-বিায়নীবাজার) ৬ আসনে নৌকার সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এবার তাকে টেক্কা দিতে দলের অন্তত ১২জন মনোনয়ন দিয়েছেন। নাহিদ সফল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছেন গোলাগঞ্জ-বিয়ানীবাজারবাসীকে। গৌরবের এ পরিচয়ে পরও তার বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মান-অভিমান শুধু নয়, নাহিদের নিজস্ব বলয় নির্ভর চলাফেরায় এই অংশ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। তারপরও মহাজোটের পক্ষে তার চেয়ে শক্ত কোন প্রার্থী এই আসনে নেই। ধারনা করা হচ্ছে, নাহিদ মনোনয়ন পেলে অনেকাংশে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের নেতাকর্মীরা কাজ করবে। তারপরও নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া কঠিন হবে তার জন্য। বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, নাহিদের জন্য খারাপ কিছু হতে পারে। যদি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলীয় জোট থেকে কাউকে বিএনপি মনোনয়ন দেয় তাহলে শেষ হাসি নাহিদের থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।