মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ছত্তিশগড় বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে প্রথম দফার ভোট হয় সোমবার। সবক’টিই মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায়। অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্তে¡ও বিস্ফোরণ ও মাওবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াই এড়ানো যায়নি।
ছত্তিশগড় বিধানসভা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। তারপরও সোমবার রাজ্য বিধানসভার মোট ৯০টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনের ভোট হয় মাওবাদী উপদ্রুত এলাকাগুলিতে। উপজাতি প্রধান ঐ সব জঙ্গল এলাকা মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি বলে চিহ্নিত। ভোটের কয়েকদিন আগে কম করে আধ ডজন আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। তাতে মারা যায় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সাব-ইন্সপেক্টর, আহত হন আরেকজন নিরাপত্তা কর্মী। মাওবাদীরা জায়গায় জায়গায় পোস্টার সেঁটে হুঁশিয়ারি দেয় - যারা ভোট দিতে যাবে তাদের যে আঙুলে ভোট দেবার কালি চিহ্ন থাকবে, সেই আঙুল কেটে ফেলা হবে। ভোটের দিনও একটি ভোটকেন্দ্রের অদূরে বোমা বিস্ফোরণ হয়। অন্য একটি ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে তিনটি আইইডি বিস্ফোরক উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ। সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে বম্ব স্কোয়াড। ভোট চলাকালীন অন্য একটি কেন্দ্রে মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গুলির লড়াই চলে নিরাপত্তা বাহিনীর। নিকেশ হয় পাঁচ মাওবাদী। আর পালটা হামলায় গুরুতর জখম হয় কোবরা কমান্ডো বাহিনীর দুই জওয়ান।
আতঙ্ক ও উত্তেজনার আবহেও জীবন বাজি রেখে ভোট দেন ৭০ শতাংশের মতো ভোটার। এর আপাত কারণ ৩১ লাখ ভোটারের জন্য অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রায় সোয়া লাখ নিরাপত্তা জওয়ান মোতায়েন করা হয় এলাকায়। আকাশপথে মাওবাদীদের গতিবিধির দিকে নজর রাখতে ব্যবহার করা হয় ২০টি দ্রোন এবং সেনা হেলিকপ্টার। অনেকে ভোট দেবার বিপদ অগ্রাহ্য করতে পারেনি। তাঁরা মনে করেন, ভোট শেষ হলে চলে যাবে এইসব নিরাপত্তা জওয়ান। তখন মাওবাদীদের হাত থেকে বাঁচাবে কে? গণতন্ত্র? ওটা মাথায় থাক। ওটা খায় না মাখে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই এই আদিবাসী জনজাতি ভোটদাতাদের।
সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাওবাদীদের এই দাপটের কারণ কী? উগ্র বামপন্থিরা আধা সামরিক বাহিনীর চাপে আশ্রয় নেয় জঙ্গল এলাকার উপজাতি অঞ্চলে। উপজতিদের মগজ ধোলাই করে জনজাতিদের দলে ভেড়ায়। ট্রেনিং দেয় গেরিলা যুদ্ধে। পরিবর্তন আসে মাওবাদী নেতৃত্বেও। মাওবাদীদের বিভিন্ন শাখা এক হয়ে ২০০৪ সালে নাম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)। শুরু করে তথাকথিত বিপ্লবী রাজনৈতিক আন্দোলন। এই অবৈধ আন্দোলন ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয় ভারতের মধ্য ও উত্তর-মধ্য অঞ্চলে, যা ‘লাল করিডোর’ নামে পরিচিত।
অন্যদিকে, পাঁচটি রাজ্য বিধানসভা ভোটের জয়-পরাজয় নিয়ে আগাম জল্পনা শুরু হয়েছে পর্যবেক্ষক মহলে। তাঁদের মতে, এটা নাকি আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের সেমিফাইনাল। পাঁচটি রাজ্য ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামের মোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ৮৩টি। তেলেঙ্গানায় শাসকদল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি এবং মিজোরামে কংগ্রেস। বাকি তিনটি রাজ্যে শাসকদল বিজেপি। ছত্তিশগড়ে মায়াবতীর বিএসপি এবং জনজাতি নেতা অজিত যোগীর নব গঠিত জনতা কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে জোট বেঁধেছে। এই জোট উপজাতি ভোট টানবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাঁচটি রাজ্যের চলতি বিধানসভার ফলাফলকে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের সেমিফানাল বলা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলে বললেন যে তিনি তা মনে করেন না। কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। আলাদা। বিভিন্ন বিরোধী দলগুলির মহাজোটের কোনো ছাপ এখানে দেখা যাচ্ছে না। চলতি ভোটের ফলাফল বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে পারে। কিন্তু আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট কতটা জোরদার হবে, তার ওপরে নির্ভর করছে সব কিছু। বিরোধী দলগুলি যদি এককভাবে লড়ে, তাহলে বিজেপির অসুবিধা হবার কথা নয়।
ভারতীয় রাজনীতিতে অতি সরলীকরণ বা বিশ্লেষণ হলো, এই ভোটে বিজেপি এখানে হেরে গেল, তাতে বিজেপি পরেরবারেও হেরে যাবে সেটা আমার মনে হয় না। বড়জোর একটা ইঙ্গিত হলেও হতে পারে। ভারতের রাজনীতি অনেক বদলে গেছে। অ্যান্টি-বিজেপি জোট কতটা জোরদার হবে সেটাই আসল কথা। সেটার ওপরই নির্ভর করছে আগামী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল। রাজ্য বিধানসভার ফলাফল যদি বিজেপির পক্ষে নেতিবাচক হয়, তাহলে কোথায় তারা কমজোর সেটা শুধরে নেবার একটা সুযোগ পাবে বিজেপি, ডয়চে ভেলেকে বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানি প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি এটাও সত্যি যে কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল নিজের জোরে বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না। যদি ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করে, তাহলে ছবিটা হয়ত বদলে যেতে পারে। কাজেই চলতি বিধানসভা নির্বাচনি ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের সেমিফাইনাল নয়। বরং জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির কর্ম-কৌশলের সেমিফাইনাল। ছত্তিশগড়ে বাকি ৭২টি আসনের ভোট ২০ নভেম্বর। অন্য চারটি রাজ্য বিধানসভার ভোট ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ফলাফল ১১ ডিসেম্বর। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।