পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীসহ এর আশপাশের এলাকার যাত্রীদের চলাচল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা কাছাকাছি এলাকা থেকে রাজধানীতে এসে চাকরি বা ব্যবসা করেন, তারা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। তারা ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব যেমন হারাচ্ছেন, তেমনি অনেকে হতাহতে ও হচ্ছেন। বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড থেকে ডাকাতদল মাইক্রোবাসে ভাড়ায় যাওয়ার কথা বলে যাত্রী তুলে নিয়ে তাদের মারধর করে অর্থকড়ি নিয়ে ফেলে চলে যাচ্ছে। গত এক বছরে ৬০ জনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে সব কেড়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকালও আশুলিয়ায় এক ব্যক্তিকে মারধর করে সব কেড়ে নিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয় এবং তার মেয়েকে হত্যা করে বাইপাল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কের আশুলিয়ার মরাগাঙ এলাকায় ফেলে দেয়া হয়। পুলিশ বলেছে, গাড়িতে তুলে ডাকাতি করে এমন ২০টি দল রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। ডাকাতদলের মধ্যে গাবতলী থেকে সাভার ও মানিকগঞ্জ সড়কপথে একটি, উত্তরার অবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি এবং মতিঝিল ও মাওয়া ফেরিঘাটে একটি ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে। গত এক বছরে গাড়ি-ডাকাত চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ত থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে এদিকটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এর ফলে ডাকাত দলসহ ছিনতাইকারী, মলম পার্টিসহ অন্যান্য দুর্বৃত্তচক্রেক আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এমনিতেই জনসাধারণকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। অনেকে যথাসম্ভব কর্মস্থল থেকে দ্রুত বাসস্থানে ফিরে যেতে চান। দুর্বৃত্ত চক্র ও ডাকাত দল এ সুযোগে মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেট কার নিয়ে ওঁত পেতে থাকে। ঢাকার আশপাশের যাত্রীরা একদিকে বাসায় ফেরার তাড়া, অন্যদিকে যানবাহন সংকটের কারণে এসব তথাকথিত ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে চড়ে বসেন। তখনই তারা ফাঁদে পড়েন। ডাকাত দলের এ ধরনের ফাঁদ এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে এখন প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। অনেকে রাজধানীতে না থেকে আশপাশের এলাকাগুলোতে বাসা নিয়ে সেখান থেকে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ লোক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এভাবে যাতায়াত করেন। এসব যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহনের সংকট রয়েছে। তাদের জন্য আলাদা রুট বা বাড়তি যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ সুযোগটিই নিচ্ছে দুর্বৃত্তচক্র ও ডাকাত দল। ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্য তারা কোনোকিছু না ভেবেই উঠে পড়েন। যখন বুঝতে পারেন, তখন কিছুই করার থাকে না। শুধু ঢাকার বাইরের যাত্রী ক্ষেত্রেই নয়, ঢাকার ভেতরের যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। সব ঘটনা পত্র-পত্রিকায় আসে না। শুধু যে ডাকাত দল মাইক্রোবাস নিয়ে মানুষকে তুলে নিচ্ছে তা নয়, অপহরণকারী চক্রও রাস্তা থেকে মানুষকে তুলে নিচ্ছে। অপহরণকারী এসব চক্র কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি র্যাব পরিচয়ে তুলে নেয়া চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য ধরাও পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক।
রাজধানীর ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের ফলে মানুষের কর্মস্থলেরও বিস্তৃতি ঘটেছে। ঢাকার আশপাশের এলাকায় শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মস্থল গড়ে উঠেছে। এসব এলাকা রাজধানীর অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, এসব এলাকায় যাতায়াতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ দিকটি বিবেচনা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এতে ডাকাত দল ও দুর্বৃত্তচক্র দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। অথচ রাজধানীর সম্প্রসারণের বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও উচিত তাদের নিরাপত্তার পরিধি বিস্তৃত করা। যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন রুটে সক্রিয় ডাকাত দলকে শনাক্ত করতে পেরেছে, তাই অবিলম্বে এদের গ্রেফতারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ডাকাত দল শনাক্ত হলো, তাদের গ্রেফতার করা গেল না-এ পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে চিহ্নিত ডাকাত দল ও দুর্বৃত্ত চক্র গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।