Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কায়িক শ্রমে জীবিকা নির্বাহ

ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে এস. কে সাত্তার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:৫৪ এএম

নওকুচি ও ডেফলাই গ্রামের ময়না, আমেনা, রোকেয়া, রুবিসহ আরো অনেকে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করে। রুস্তম আলী-ছুটি মিয়া,ময়দান আলী-সিরাজুল ইসলাম। এদের সবারই বাড়ী পূর্ব বন্দভাট পাড়া গ্রামে। ওরা এক/দেড়শ’জন মিলে মাটি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে। এই মাটি কাটা দলের সর্দার রুস্তম আলী। সে জানায়, শুস্ক মৌসুম ছাড়া যখন কোন কাজই থাকেনা,তখন সে অটোরিক্সা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন। তবে
বিশেষ করে শুস্ক মৌসুমে এদের কদর বেড়ে যায়। শুধু যে এরাই তা কিন্তুু নয়। এ পেশায় নিয়োজিত গোটা উপজেলায় সহ¯্রাধিক লোক। তারা মাটি কাটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এরা কঠোর শরিরীক পরিশ্রমের মাধ্যমে মাটি কাটার কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে। এই শুস্ক মৌসুমে প্রচন্ড ব্যস্ততা বেড়ে যায় মাটি কাটা পেশার মানুষের।
এলজিইডি, এডিবি ও এবং বিভিন্ন বিভাগের রাস্তা তৈরি কাজসহ বাসা বাড়ি নির্মানের কাজ, বিভিন্ন পুকুর খনন,পনঃ খননের জন্য এসব মাটি কাটা শ্রমজীবী মানুষের ডাক পড়ে। মাটি কাটার পেশায় নিয়োজিত লোকদের রয়েছে পৃথক পৃথক মাটি কাটা দল। প্রতিটি দলে এলাকা ভেদে রয়েছে শতাধিক সদস্য। আবার প্রতি দলেরই রয়েছে আলাদা আলাদা সর্দার। মুলত. সর্দাররাই মাটি কাটার জন্য বিভিন্ন ঠিকাদার এবং সাধারণ মানুষদের সাথে চুক্তি করে মাটি কাটার জন্য রাস্তায় এবং জমিতে নেমে পড়ে। সর্দার পার্টির কাছ থেকে সাপ্তাহিক মাটি কাটার টাকা না আনতে পারলেও মাটি কাটায় নিয়োজিত দলের সদস্যদের সপ্তাহে স্থানীয় বড় হাটবার টাকা পরিশোধ করেন। মাটি কাটার কাজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম কানুন। সাধারণত ২ ধরনের নিয়মে মাটি কাটা হয় । একটি ফুট হিসেবে আরেকটি চুক্তি মোতাবেক (রোজ হিসেবে) মাটি কাটা। মাটি কাটার প্রত্যেক দলেরই রয়েছে ফুট প্রতি নির্ধারিত রেইট। আর চুক্তি ভিত্তিক হলো সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। তাতে বেতন জোটে ৪/৫ শ’ টাকা। আবার একই সময়ে মহিলা মাটি কাটার দলের শ্রমিকেরা সকালে ৮০ টাকা, বিকালে ৬০ টাকা চুক্তি ভিত্তিক মাটি কেটে থাকে। এ নিয়মের বাইরে কোন মাটি কাটার দল মাটি কাটে না ।
মাটি কাটার দলের সর্দার মো: রুস্তম আলীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখন আগের মতো মাটি কাটার প্রয়োজন পড়ে না । তার কারণ অনেক রাস্তাঘাট আগেই পাকা হয়ে গেছে। ৫/৭ বছর আগেও আমরা আশে পাশের বিভিন্ন উপজেলায় পর্যন্ত মাটি কাটতে যেতাম, এখন আর দূরে মাটি কাটতে যেতে হয়না।এখন যা কাজ হয় বিভিন্ন ছোট খাটো রাস্তা তৈরিতে। মূলত আমরা এখন নতুন পুকুর কাটা,পুরানো পুকুর আরো গভীর করে কাটা এবং বাসা--বাড়ির ভিটা বানাতে ডাক পড়ে। তার পরও বর্ষা মৌসুম ছাড়া সারা বছরই আমাদের টুকিটাকি কাজ করতে হয়। কিন্তুু মাটি কাটার কাজ, কঠোর পরিশ্রমের কাজ। তাই শরীর কুলায়না। কিন্তুু কি আর করমু কন? জীবনডাতো বাঁচান লাগবো। তাই নিরুপায় হয়েই এমন অমানুষিক পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। তাও রাস্তার কাজে বরাদ্দকৃত গম/টাকা আমাদের দেওয়া হয়না। যা বরাদ্দ থাকে, তা থেকে সামান্যই পাই আমরা। আমাদেরকে অল্প মূল্যে চুক্তিতে দেওয়া হয় রাস্তার কাজ। বাকী বেশীর ভাগ টাকা খায় ঠিকাদার-চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। আবার প্রতিবাদ ও করা যায় না। করলে কাজই জুটবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রম

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ