Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতঃপর চট্টগ্রামের মনিকা কাহিনী

একই অঙ্গে দুই রূপ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

অপহরণ নয়, প্রেমের টানেই ঘর ছাড়েন মনিকা রাধা (৪৫)। ভারতে গিয়ে বিয়েও করেন। স্বামী কলকাতার ব্যবসায়ী কমলেশ কুমার মল্লিক (৩৫)। নাম বদলে তিনি এখন অনামিকা মল্লিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় মনিকার। পরিচয় প্রেমে রূপ নিলে ২০ বছরের সংসার- স্বামী সন্তান ছেড়ে ভারত চলে যান তিনি। 

চট্টগ্রাম থেকে সাত মাসে আগে ‘নিখোঁজ’ গানের শিক্ষিকা মনিকা বড়ুয়া রাধাকে উদ্ধারের পর পুলিশ বলেছে, তিনি নিজের ইচ্ছায় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, মনিকা স্বেচ্ছায় ভারতে গিয়েছিলেন। শুরুতে আমরা মনে করেছিলাম তাকে অপহরণ বা পাচার করা হয়েছে। পরে জানতে পারি তিনি নিজ ইচ্ছায় গেছেন। যাওয়ার আগে দুই মেয়েকে বলেও গেছেন। যারা তার সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তারাও জানতেন মনিকা ভারতে আছেন। এটা আমাদের জানা থাকলে আরও আগেই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হত।
মনিকা বড়ুয়ার সন্ধান দাবিতে তার বোন ও পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় কয়েক দফা মানববন্ধন করেন। তারা সে সময় অভিযোগ করেন, মনিকাকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ‘সন্তোষজনক’ নয়। পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম বলেন, এটা একটা সেনসেটিভ ঘটনা। তাই ঘটনার পর থেকেই আমরা সর্বোচ্চ সক্রিয় ছিলাম। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত থেকে মঙ্গলবার মনিকাকে ‘উদ্ধার’ করার পর বুধবার রাতে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। কমলেশ কুমার মল্লিক নামে এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাওয়ার পর মনিকা সেখানে তাকে বিয়ে করেন।
গানের টিউশনিতে যাওয়ার কথা বলে গত ১২ এপ্রিল নগরীর লালখান বাজারের হাই লেভেল রোডের বাসা থেকে বের হয়ে মনিকা আর ফেরেননি বলে জানানো হয়েছিল তার পরিবারের পক্ষ থেকে। মনিকার স্বামী সাংবাদিক দেবাশীষ বড়ুয়া ১৩ এপ্রিল এ বিষয়ে নগরীর খুলশি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৮ এপ্রিল সেটি ‘অপহরণ’ মামলায় রূপান্তর করা হয়। দেবাশীষ শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন, তাদের মধ্যে কোনো দাম্পত্য সমস্যা নেই। কীভাবে, কেন মনিকা নিখোঁজ হয়েছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
দুই মেয়ের জননী মনিকা নগরীর কাতালগঞ্জের লিটল জুয়েলস স্কুলে গান শেখাতেন। তার বড় মেয়ে নগরীর একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বেগম বলেন, ব্যবসার কাজে ৩ নভেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন কমলেশ মল্লিক এমন খবর পায় পুলিশ। গত ৪ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কমলেশ জানান, তিনি নিজেই ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে মনিকাকে বেনাপোলে নিয়ে যান। পরে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তাকে নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।
পুলিশ বলছে, কলকাতায় স্বামী হিসেবে কমলেশ মল্লিকের নাম উল্লেখ করে সেখানে মনিকার জন্য পরিচয়পত্র ও অন্যান্যা কার্ডও তৈরি করা হয়। মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় রীতিতে তারা বিয়ে করলেও তা রেজিস্ট্রি করা হয়নি। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, মনিকা পুলিশকে জানিয়েছেন অপহরণ নয়, তিনি স্বেচ্ছায় ভারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু তার খোঁজে অপহরণ মামলা হয়েছে, সেহেতু মনিকা এখনো পুলিশের কাছে ভিকটিম। একইসঙ্গে তিনি আসামি। সে কারণেই তাকে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়নি।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, মনিকা কলকাতার একটি অ্যাপার্টমেন্টে আছেন জানতে পেরে ‘কৌশলে’ তাকে মঙ্গলবার ভোমরা সীমান্তে আনার ব্যবস্থা করা হয়। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা পুলিশ তাকে নিয়ে পরে চট্টগ্রামে আসে। সীমান্তে কমলেশকে নিয়ে যাওয়া হয়। কমলেশ তাকে পুলিশের কথামতে টেলিফোনে সীমান্তে আসতে বলে। সীমান্ত থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিখোঁজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ