Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ছোট সেতুর বড় খরচ !

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নরসিংদীতে দুই প্রধান সরকারি প্রকৌশল সংস্থার বৃহৎ আকারের দুটি সেতু নির্মাণ ব্যয়ের তারতম্য নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে । আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সেতু নির্মাণের স্বচ্ছতা নিয়ে। মেঘনার ওপর ৬৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৩ মিটার প্রস্থ সেতু নির্মাণে এলজিইডি ব্যয় করেছে ৯৮ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে শীতলক্ষার ওপর ৫১০ মিটার দীর্ঘ ১০ মিটার প্রস্থ একটি সেতু নির্মাণে সড়ক বিভাগ ব্যয় করেছে ১২৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। মিটার পরিমাপে শীতলক্ষা সেতু, মেঘনা সেতুর চেয়ে ১২০ মিটার কম এবং ফুটের পরিমাপে কম হচ্ছে ৮১৬৯ স্কয়ার ফিট ।
মেঘনা সেতুর চেয়ে শীতলক্ষা সেতুর দৈর্ঘ্য ও স্কয়ার ফিট কম হওয়া সত্তে¡ও সড়ক বিভাগ টাকার অংকে ব্যয় দেখিয়েছে ২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি । যা দিয়ে আরও একটি ছোটখাটো সেতু নির্মাণ করা যেত বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা। একই দেশে নির্মাণ সামগ্রীর একই বাজারে দুই প্রকৌশল সংস্থার দুই ধরনের দর নির্ধারণকে দূর্ণীতির খোলামেলা সুযোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন উন্নয়ন সচেতন মহল। স্থানীয় উন্নয়ন পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা সেতুর ডিজাইন বা নকশা মূলত: একই ধরনের। দুই সেতুর দুই দিকে রেলিংয়ের সাথে রয়েছে ফুটপাত। মেঘনা সেতুর রেলিং দুটি হচ্ছে প্রিকাস্ট আর সি সি এবং শীতলক্ষ্যা সেতুর রেলিং হচ্ছে প্লেন আরসিসি ধরনের। মেঘনা সেতুর গার্ডার বা ছাদখড়ির সংখ্যা ১৪ টি পক্ষান্তরে শীতলক্ষ্যা সেতুর গার্ডার ১১টি। মেঘনা সেতুর অ্যাপ্রোচ হচ্ছে দুই পারে তিন কিলোমিটার। পক্ষান্তরে শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ হচ্ছে দেড় কিলোমিটার। এতসব বৈপরীত্য থাকা সত্তে¡ও মেঘনা সেতুর চেয়ে ছোট শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে ২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি লাগার কারণ স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নরসিংদী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান অনেকটা বিরক্তির স্বরে বলেন, স্কয়ার ফুট বুঝি না আমি বুঝি ডিজাইন এক কেজি সরিষার মূল্য ও দুই কেজির মূলার মূল্য এক নয়। তবে তিনি বলেন, এলজিইডির চেয়ে সড়ক বিভাগের নির্মাণ কাজের রেট বেশি। কিন্তু কেন বেশি তা তিনি বলেননি।
এদিকে এলজিইডির একজন সিনিয়র প্রকৌশলী জানান, এলজিইডির জবাবদিহিতা আছে বলেই আমাদের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যা সড়ক বিভাগে আছে বলে আমাদের জানা নেই। দরপত্র তৈরি, আহ্বান,কাজ বরাদ্দ দেয়া থেকে শুরু করে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যন্ত সকল কাজেই স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এলজিইডিতে স্বচ্ছতার কোন প্রশ্ন নেই। গুপসি টেন্ডারের কোনো সুযোগ নেই। সড়ক বিভাগের ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্টরা গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন । পক্ষান্তরে এলজিইডির ওয়ার্ক এসিস্ট্যান্টরা পায়েহেঁটে, রিকশায় চলাচল করেন। অভিজ্ঞ উন্নয়ন পর্যবেক্ষকগণ বলেছেন একটি সেতু নির্মাণে যদি ২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হয় তবে সারাদেশে সেতু নির্মাণে সড়ক বিভাগ কত টাকা বেশি ব্যয় দেখাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকার অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছে অথচ সড়ক বিভাগ সেতু কালভার্টও সড়ক নির্মাণে যদি ডিজাইনের নামে অর্থ অপচয় না করত, ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করত তবে, বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু নির্মাণে সরকারকে অর্থের জন্য টানাপড়েন সইতে হতো না।



 

Show all comments
  • Ashraf Hossain ৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:১৮ এএম says : 0
    এটাই তো মূল সমস্যা । লুটতরাজ বন্ধ হলো না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেতু

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ