Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই

| প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ওয়াসার পানির মান যাচাই করে রিপোর্ট জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা একজন আইনজীবীর রিট পিটিশনের শুনানী শেষে গত মঙ্গলবার এই রুল জারি করেন বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং বিচারপতি মোহাম্মদ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওয়াসার পানির মান যাচাইয়ের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটির সদস্য হিসেবে কারা থাকবেন তা ও নির্দিষ্ট করে দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা পানির মান যাচাই করে আগামী দু’ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।পানির অপর নাম জীবন। এ কথা আমরা সকলেই জানি। পক্ষান্তরে দূষিত পানির অপর নাম রোগ-ব্যাধি ও মরণ। এ বিষয়টি আমাদের জানা থাকলেও আমরা নিজেদের অজান্তে এবং অসচেতনভাবে প্রতিনিয়ত দূষিত পানির শিকার হচ্ছি। আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্বও বটে।
ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পানিবাহিত রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে খোদ ঢাকা শহরে প্রতিদিন শত শত মানুষ ডায়রিয়াসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমাস্যা নিয়ে হাসাপাতালে ও ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চললেও ওয়াসার পানির মান ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সরকারী ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে নিস্ক্রীয় থাকলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যথারীতি ঢাকার কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে জরিপ চালাচ্ছে।সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশে পরিশোধিত ও সরবরাহকৃত পানির ৪১ শতাংশেই ই-কোলাই’র মত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াযুক্ত। এটি হচ্ছে ওয়াসার পরিশোধিত ও সরবরাহকৃত পানির একটি খন্ডিত চিত্র। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের আলোকেই হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন বাদী আইনজীবী। পানির মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়-দায়িত্বের বরখেলাফ করছে। এ ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অমনোযোগ ও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। এহেন বাস্তবতায় এমন একটি সার্বজনীন ইস্যুতে জনস্বার্থে করা রিট পিটিশনের রুল ও নির্দেশনা অনুসারে ওয়াসার পানির মানোন্নয়নসহ দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চায় দেশের মানুষ।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পানি একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুসঙ্গ। খোদ ঢাকা শহরেই ওয়াসা প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেনা। একদিকে প্রতিদিন কোটি কোটি গ্যালন পানির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে অন্যদিকে সরবরাহকৃত পানিতে ঘটছে প্রাণঘাতি ব্যাকটেরিয়ার দূষণ। নিরাপদ পানির সরবরাহ পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলেও শহরের বস্তিতে ও প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ ন্যুনতম ব্যবহারযোগ্য পানির সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওয়াসার পানিতে দূষণের কারণে শহরের অধিকাংশ পরিবার সরবরাহকৃত পানি ফুটিয়ে এবং ফিল্টারিং করে পান করছে। অনেকে বাধ্য হয়েই বাণিজ্যিকভাবে বোতলজাত পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ওয়াসার পানির বিল পরিশোধের পাশাপাশি নিরাপদ বিবেচনায় বোতলজাত পানি ক্রয় করেও প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহকরা। বিশেষত প্লাস্টিক জারে সরবরাহকৃত পানির ৯০ শতাংশই ই-কোলাইসহ নানাবিধ ব্যাকটেরিয়া, টক্সিন ও প্লাস্টিক দূষণে দূষিত বলে জানা যায়। এমনকি নানা নামে, রকমারী বিজ্ঞাপনে শতভাগ নিরাপদ পানি বলে দাবীকৃত বোতলজাত ব্রান্ডেড পানিও শতভাগ দূষণমুক্ত নয়। এসব বোতলজাত পানির প্লাস্টিক বোতলের বেশীরভাগই ফুডগ্রেড বা টক্সিন মুক্ত নয়। ঢাকায় নাগরিকদের নিরাপদ পানি সরবরাহের দায়িত্ব মূলত ঢাকা ওয়াসার। তার ব্যর্থতার কারণেই মানুষ নানাবিধ বিকল্প উৎসের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে। সরবরাহকৃত পানি দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্য খাতে প্রতিদিন কত কোটি টাকা বেশী খরচ হচ্ছে তার হিসাব আমাদের জানা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও সংস্থাগুলো দেশের নদনদী, খাল-বিলসহ পানির কোন প্রাকৃতিক উৎসই দূষণমুক্ত রাখতে পারেনি। এমনকি ভূ-গর্ভস্থ পানিও ভয়াবহ আর্সেনিক দূষণের শিকার হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় দেশে একটি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি। ওয়াসার পানি পরিশোধন ও সরবরাহ লাইনকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে অবহেলা বা ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন