Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এত আবেগ লইয়া আমরা কি করিব!

স্পোর্টস রিপোর্টার, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

যখন প্রয়োজন টিকে থাকার, সময় যখন হাতে অফুরন্ত, এসব পরিস্থিতিতেও স্ট্রোক খেলার নেশায় পেয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছেন একজন। পরের ব্যাটসম্যানও উইকেট গিয়ে বেছে নিচ্ছেন একই পথ। অন্যের ভুল দেখে শিক্ষা নেয়নি কেউ। শোধরায়নি নিজের ভুলও। প্রথম ইনিংসের মতোই উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। সিলেট টেস্টে এটিই ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র। প্রতি ইনিংসের পরই নিজেদের ভুলটা ধরতে পারেন তারা। কিন্তু পরের ইনিংসই দেখা যায় একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। এই চক্রে পড়ার কারণ হিসেবে নিজেদের আবেগকে দায়ি করলেন ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

১৪৩ ও ১৬৯, সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের দুই ইনিংসের স্কোর বলবে, উইকেট ছিল প্রাণবন্ত কিংবা প্রতিপক্ষের বোলিং ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু বাস্তবতা ছিল উল্টো। সিলেটের উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না খুব সহায়তা। জিম্বাবুয়ের বোলিংয়ে ছিল না ব্যবধান গড়ার মতো কেউ। ম্যাচে খুব ভালো বোলিংও তারা করেনি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একের পর এক বাজে শটে হারিয়েছেন উইকেট।

গত ৮ ইনিংসে দুইশ’ স্পর্শ করা যায়নি। দেড়শোই পেরুনো গেছে মাত্র দুবার। এসব ইনিংসে মাহমুদউল্লাহকে সবচেয়ে হতাশ করেছে অতিরিক্ত শট খেলার প্রবনতা, ‘আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রোক মেকিংটা মাত্রাতিরিক্ত। এই জিনিসটা আমরা হয়তো আবেগী হয়ে করছি। এখানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরেকটু চুজি হতে হবে। আমরা কোন বোলারকে কখন কিভাবে খেলতে পারি এটা দেখতে হবে।’

টেস্টে ইনিংস বড় করতে দরকার লম্বা জুটি। সেটি হচ্ছে না বাংলাদেশের। সিলেট টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র একটা পঞ্চাশ রানের জুটি গড়তে পেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল-লিটনের ৫৬ রানের সঙ্গে বাকিরা মিলে করেছেন ১১৩ রান। এসব কাটিয়ে ঢাকা টেস্টে নিজেদের ভিন্নভাবে দেখানোর পণ মাহমুদউল্লাহর, ‘সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, আমরা ছোট ছোট জুটিও তৈরি করতে পারছি না। আগাগোড়া সবাই ফেইল করছি। এই জিনিসটা ঠিক করতে পারলে ঢাকা টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবেন।’

সিলেটের উইকেট কিংবা নিজেদের বোলিং, কোথাও কোন খামতি দেখছেন না অধিনায়ক। তার চোখে ব্যর্থতার দায়ভার পুরোপুরি দলের ব্যাটসম্যানদের, ‘আমি শুধু ব্যাটিংটা নিয়ে বলতে পারি। আপনি উইকেটের দোষ দিতে পারবেন না। বোলারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করতে পারবেন না। কারণ তাঁরা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছে।’

গ্লানির হারে যেখানে বাংলাদেশ শিবিরে বিষাদের অন্ধকার, জিম্বাবুয়ে শিবির উচ্ছ¡সিত ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের হতাশা কাটিয়ে টেস্টে দুর্দান্ত ঘুরে দাঁড়ানোয়। সিলেট টেস্টে দু’দলের ব্যবধানটা আসলে কোথায়, স্কিল নাকি মানসিকতা? কোচ লালচাঁদ রাজপুত বেছে নিলেন দ্বিতীয়টিকে।

নিজ দেশের চেনা পরিবেশে ভাঙাগড়ার মধ্যে থাকা দলের সঙ্গে হারলে প্রশ্ন উঠবে অনেক। সেসব উত্তরের খোঁজও চলছে। তবে আপাতত একটা উত্তর পাওয়া যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে কোচের কাছ থেকে। চেনা কন্ডিশনে বাংলাদেশ যেখানে পারেনি, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে দিয়েছে নাকি মনের জোরই, ‘মানসিক দিক ব্যবধান গড়েছে। প্রথম দুদিন আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি, যেভাবে নিজেদের চিনিয়েছে আমাদের ক্রিকেটাররা, সেটা মুখ্য ছিল।’

টস জিতে আগে ব্যাট করতে গিয়েই উইকেটের ভাষা পড়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। পরিকল্পনা ঠিক করে স্থির থাকাতেই তারা পেয়েছে সাফল্য, ‘প্রথম দিনই উইকেটে কিছু টার্ন ছিল, মন্থর ছিল। ব্যাটসম্যানরা কিছুটা ভয় পেয়েছিল যে খেলা চার, পাঁচদিনে যায় কিনা। আমি শুধু বলেছি শান্ত থাক, নিজেদের রক্ষণের উপর আস্থা রাখ। নিজেদের দৃঢ়তার পরিচয় দাও। এবং আমাদের খেলোয়াড়রা সেটাই করে দেখিয়েছে।’

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে (১ম টেস্ট)
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম
টস : জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২৮২
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৪৩
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস : ১৮১
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ৩২১) রান বল ৪ ৬
লিটন এলবিডব্লিউ ব রাজা ২৩ ৭৫ ৩ ০
ইমরুল ব রাজা ৪৩ ১০৩ ৬ ০
মুমিনুল ব জার্ভিস ৯ ১৩ ২ ০
মাহমুদউল্লাহ ক বদলি (আরভিন) ব রাজা ১৬ ৪৫ ০ ০
শান্ত ক রাজা ব মাভুতা ১৩ ৩২ ১ ০
মুশফিক ক ডব্লিউ মাসাকাদজা ব মাভুতা ১৩ ৪৪ ০ ০
আরিফুল ক চাকাভা ব ডব্লিউ মাসাকাদজা ৩৮ ৩৭ ৪ ২
মিরাজ ক চাকাভা ব মাভুতা ৭ ১৫ ০ ০
তাইজুল ক টেলর ব ডব্লিউ মাসাকাদজা ০ ৩ ০ ০
নাজমুল এলবিডব্লিউ ব মাভুতা ০ ১ ০ ০
আবু জায়েদ অপরাজিত ০ ১১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৫, লে বা ২) ৭
মোট (৬৩.১ ওভার, অল আউট) ১৬৯
উইকেট পতন : ১-৫৬ (লিটন), ২-৬৭ (মুমিনুল), ৩-৮৩(ইমরুল), ৪-১০২ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-১১১ (শান্ত), ৬-১৩২ (মুশফিক), ৭-১৫০ (মিরাজ), ৮-১৫১ (তাইজুল), ৯-১৫৫ (নাজমুল), ১০-১৬৯ (আরিফুল)।
বোলিং : জার্ভিস ১৪-৫-২৯-১, চাতারা ৯-২-২৫-০, রাজা ১৭-১-৪১-৩, উইলিয়ামস ৮-২-১৩-০, মাভুতা ১০-২-২১-৪, ডবিøউ মাসাকাদজা ৫.১-০-৩৩-২।
ফল : জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : শেন উইলিয়ামস।
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়ে ১-০তে এগিয়ে।

 

সংখ্যায় সংখ্যায় লজ্জার হার
২০০১
সিলেটে এই ১৫১ রানের ঘুরে দাঁড়ানোর জয়ের আগে জিম্বাবুয়ে শেষবারের মতো টেস্ট থেকে জিতেছিল। ২০০১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জয়টিও ছিলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে বিদেশের মাটিতে এটি তাদের তৃতীয় টেস্ট জয়, আর টানা ৫ বছর হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার স্বস্তি।
৬৮৫
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ২০ উইকেট নিতে জিম্বাবুয়ে দলের বল সংখ্যা। টেস্ট ইতিহাসে এটা তাদের দ্বিতীয় সেরা সাফল্য। এর আগে ২০১৩ সালে এই বাংলাদেশকে হারাতে তাদের বোলারা বল ঘুরিয়েছিলেন ৬২১ বার।

এই টেস্টে ব্রেন্ডন মাভুতা ২১ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে অভিষেকে কোন বোলারের একটি দ্বিতীয় সেরা বোলিং। এর আগে ২০০১ সালে বুলাওয়েতে এই বাংলাদেশের বিপেক্ষ অভিষিক্ত অ্যান্ডি ব্লিগনটের ৭৩ রানে ৫ উইকেটটি এখনও সেরা।

সিলেট টেস্টে জয়ী দলটির কেউই এর আগে টেস্ট জয়ের সাক্ষী হয়নি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা একমাত্র যিনি ২০০১ সালের সেই জয়েল আগে জুলাই মাসে অভিষেক করেছিলেন।

টেস্টে বাংলাদেশের টানা ইনিংসে ২০০’র কম সংগ্রহ। যার মধ্যে দেড়শ’ পেরিয়েছে কেবল দু’বার। ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮, ১৪৩ এবং ১৬৯। ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে যার শুরু।
১৯.৬৭
চলতি বছর টেস্টে বাংলাদেশের উইকেটপ্রতি গড় রান, কমপক্ষে একটি টেস্ট খেলেছে এমন সব দলের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। সর্বশেষ হারা চার টেস্টে তাদের গড় মাত্র ১৩.১১!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ