Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এমপি প্রার্থীর ‘একক তালিকা’ পাঠাতে নানা সমীকরণ তৃণমূলে

শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু আ.লীগে

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠন থেকে একক প্রার্থী হিসেবে নামের তালিকা পাঠাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তিন জন করে নামের তালিকা পাঠানোর নিয়ম থাকলেও মনোনয়ন নিশ্চিত করতে একক প্রার্থীর তালিকা পাঠানোর চেষ্টা করছেন তারা। যেন কেন্দ্রীয় সংগঠন মনে করে সেই আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল সংগঠনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও অপ্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী একজনই। এ নিয়ে চলছে তৃণমূল ও কেন্দ্রে নানান জটিল সমীকরণ।
আগামীকাল ৮ নভেম্বর একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এর একদিন পর ৯ নভেম্বর থকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার মনোনয়ন ফরমের দাম ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। দলের নিয়ম অনুযায়ী তৃণমূল সংগঠন থেকে এমপি প্রার্থীর নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে হয় এবং এই তালিকার ভিত্তিতে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকে। তফসিলের পরপরই এই তালিকা সবাই কেন্দ্রে পাঠাবেন। সেজন্য তৃণমূল থেকে নামের এই তালিকা পাঠানো নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে।
বর্তমান এমপি এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে নিজ এলাকা ও ঢাকাতে বৈঠক করছেন। এমপিরা চাচ্ছেন যেন একক প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আর অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চাচ্ছেন তৃণমূল থেকে যেন কমপক্ষে তিনজন প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠানো হয়। এর মধ্যে কেউ চাচ্ছেন, তার নাম দলীয় বা শরিক দলের এমপির নামের থাকে, আবার কেউ চাচ্ছেন, এমপির পরের নামটাই যেন তার থাকে, আবার কেউ চাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সবার শেষে হলেও তার নামটা যেন যুক্ত থাকে। এছাড়া কোন প্রার্থীর নাম বাদ দেবার জন্যও চলছে নানা জটিল হিসেব নিকেশ।
গত রোববার মাদারীপুরের কালকিনিতে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এমপি প্রার্থী হিসেবে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের একক নাম প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত গৃহীত নেয়া হয়।
বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ তৃণমূল অঙ্গসংগঠনের সকল নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই আসনে প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন ও দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ থাকলেও বাহাউদ্দিন নাছিমের নাম ছাড়া অন্য কোন নাম প্রস্তাবনায় ওঠেনি।
এছাড়া জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের নির্বাচিত এমপিদের আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে নানা চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও নীতি-নির্ধারকরাও সংযুক্ত হচ্ছেন।
লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির (জাপা) মোহাম্মদ নোমান। এ আসন পুনরুদ্ধারে ঢাকা ও এলাতে দফায় দফায় বৈঠক করছে নেতারা। বিএনপির দূর্গ বলে খাত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আনতে কেন্দ্রে নানা প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কুয়েত আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক, কুয়েত বঙ্গবন্ধু স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের নাম ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে কেন্দ্রে পাঠাতে গুলশান ও লক্ষীপুরে চলছে দফায় দফায় বৈঠক।
রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খোকন বলেন, শহিদ ইসলাম পাপুলের কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত। তিনি প্রত্যেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অফিস করে দিয়েছেন। মসজিদ, মাদরাসা, ইমামদের কল্যানে ৭০ লক্ষ টাকা, লক্ষীপুর প্রেস ক্লাব, রায়পুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের কল্যাণে ২০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া রায়পুর পৌরসভায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছেন। এমপি না হয়েও নিজের টাকা খরচ করে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আমরা চাই দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। কেন্দ্রে এই প্রস্তাব পাঠানো হবে। কাজী শহিদ ইসলাম বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল আস্থা রেখে রায়পুর আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য নিজের অর্থ ব্যয় করে কাজ করছি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে ইনশাল্লাহ আসনটি পুনরুদ্ধার করবো। রায়পুর উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য সরকারের বরাদ্দের দিকে চেয়ে থাকবো না।
নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের এমপি রিয়াকত হোসেন খোকা। এ আসনটিও পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রে একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এর নাম প্রস্তাব পাঠাতে ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে।
নেত্রকোনা-২ সদর আসনের এমপি আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। জেলা সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ ও নানা বিতর্কিত কাজের কারণে জেলা থেকে এই আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপির নাম না পাঠাতে ইতোমধ্যে কয়েখবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।
নেত্রকোনা-৫ আসনে এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের নামের আগে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের নাম দেয়ার বিষয়ে চলছে নানা প্রচেষ্টা। আর আলোচিত প্রার্থী হিসেবে তৃণমুলের আস্থা চাচ্ছেন লন্ডন যুবলীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জি. তুহিন আহমদ খান।
কেন্দ্রে নাম প্রস্তাবের জটিল হিসেব নিকেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ইনকিলাবকে বলেন, কারো নাম প্রস্তাব না করা হলে সে আলোচনায় থাকবে না এটা স্বাভাবিক। ৩০০ আসনের তালিকা আসলে কোন নির্দিষ্ট আসনে কোন জনপ্রিয় প্রার্থীর নাম বাদ গেলে তা নির্ণয় করা একটু জটিল। এছাড়া কারো নাম না আসা মানে তার সঙ্গে তৃণমূল সংগঠনের যোগাযোগ কম এবং তার প্রভাবও কম।
এ বিষয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রর্থী না থাকলে একক প্রার্থী পাঠাতে পারে তৃণমূল। এতে সমস্যা নেই। তবে সকল বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দলের মনোনয়ন দেয়া হবে। কার কেমন অবস্থান, কোন প্রার্থী নিজের টাকা দিয়ে কাজ করছেন আর কে টাকা নিচ্ছেন সব খবরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়মিত যাচ্ছে। যাদের জনপ্রিয়তা নেই তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না।
সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, মনোনয়ন দেবার ক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে কেন্দ্রীয় সংগঠন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ