পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণভবনের ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা স্বাগত জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ। আমরা আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করছি। নির্বাচনকে অবাধ-মুক্ত-গ্রহণযোগ্য-অংশগ্রহণমূলক করতে আরো খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেছেন, সংলাপ সব সময় স্বাগত জানাই। বিদ্যমান টেনশনের অবসানে সংলাপ অন্যতম অবলম্বন। জার্মানি আগেই সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে। আর বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাট বঙ্গভবনে ‘দুই জায়ান্ট জোটের সংলাপ’ খবর নিয়েই বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন-চীন-ভারতসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোও সংলাপের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মতোই বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ-সংস্থাগুলোর দৃষ্টি যখন সংলাপের দিকে, সবার প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ সমাধান; তখন সংলাপ প্রক্রিয়াকে কী হালকা করা হচ্ছে?
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২ নভেম্বর সংলাপে যান পুত্র মাহী বি চৌধুরী যাতে আগামীতে মুন্সিগঞ্জ থেকে এমপি হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সে নিশ্চয়তা নিতে। এজন্য তিনি শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ বলেছেন ৫ নভেম্বর বঙ্গভবনে তিনি সংলাপে যাবেন পর্যাপ্ত আসন চাইতে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ভাগাভাগিতে যে আসন পেয়েছেন এবার তার দ্বিগুন প্রত্যাশা করছেন। এসব দেখে ১৪ দলীয় জোট বনাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপকে ‘হালকা’ করতেই ক্ষমতাসীনরা ‘অনুগত জোটগুলোর’ সঙ্গে এভাবে সংলাপের আয়োজন করছে অভিযোগ তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বুদ্ধিজীবী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা-ড.কামাল হোসেন বৈঠকের পর অন্যদের সঙ্গে সংলাপ তামাশা চলছে। আর সংলাপে নৈশভোজের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা।
পহেলা নভেম্বর সংলাপ থেকে বের হয়ে বিএনপির মহাসচিক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসন্তুুষ্টির আভাস দিলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্ট চাইলে ৮ নভেম্বরের পর আবারও সংলাপ হতে পারে। সংলাপ চলার সময়ই ‘সংবিধানের মধ্যে থেকেই সংকট সমাধান সম্ভব’ জানিয়ে ড. কামাল হোসেন আবার স্বল্প পরিসরে সংলাপের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে দেন। তিনি ইতিবাচক সাড়াও দেন। ঐক্যফ্রন্ট আবার সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেবেও বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৭ নভেম্বরের পর কোনো সংলাপ হবে না’। জবাবে জাসদের আ স ম রব বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে, নিরপেক্ষ সরকার সৃষ্টি না হলে, তার জন্য নির্বাচন না হলে এর দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর সরকারকে বহন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করে আসার পরও আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকার যদি ফাঁসির আসামিকে বিদেশে পাঠাতে পারে, তাহলে কেন রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে পারবে না? ৭ দফার আন্দোলন চলবে’। যুক্তফ্রন্টের নেতার এমন বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যখন সংলাপ চলছে, তখনই আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। একদিকে আলোচনা করবেন, আবার অন্যদিকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া এটা কী ধরনের সংলাপ? আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংলাপে বসেছি। দেশের মানুষ পছন্দ মতো ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার বেছে নিক; সে জন্যই আমি ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সংলাপে যেসব দাবি দাওয়া দিয়েছে, আমাদের পক্ষে যা মানা সম্ভব তা মানবো’। এদিকে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গণভবনে আবারও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হবে। দ্বিতীয় দফা সংলাপের তারিখ চূড়ান্ত না হলেও দুই পক্ষ্যের অনুর্ধ্ব ৫ থেকে ৬ জন করে সদস্য অংশ নেবেন। ঐক্যফ্রন্ট অন্তত আরো দুটি সংলাপ করতে চায়।
‘মানুষের জন্য সংবিধান; সংবিধানের জন্য মানুষ নয়’ প্রচলিত এই প্রবাদ দেশের রাজনীতিতে বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ চলছে। গণভবনে বি চৌধুরীর সংলাপ ও এইচ এম এরশাদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সংলাপের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ খুবই তৎপর্যপূর্ণ। দেশ-বিদেশের মানুষ ওই সংলাপের দিকে তাকিয়ে ছিল; এখন আছে ফলাফলের প্রত্যাশায়। সংলাপ থেকে বের হয়ে ফ্রন্টের নেতাদের বডি লেঙ্গুয়েজ ও বক্তব্যে সংলাপ ফলোপ্রসু হয়নি স্পষ্ট হলেও অর্জন কিছুই নেই এমন নয়। বিএনপি থেকে ‘দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সংলাপে বসার প্রস্তাব’ অপরদিনে আওয়ামী লীগের ‘সংলাপের প্রয়োজন নেই’ এই অবস্থা থেকে দুটি জোটের মধ্যে সংলাপ হয়েছে। মানুষ এটাকে অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করছেন। সংলাপ সুন্দর পরিবেশে হয়েছে এটা কম অর্জন নয়।
সংলাপের পর এখন প্রশ্ন হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবী আদায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা স্পষ্টই জানিয়েছেন আলোচনা যাই হোক সংবিধানের বাইরে যাবেন না। সংবিধানের ভিতরে থেকেই নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিবসহ ঐক্যফ্রন্টর ৭ দফায় অনঢ়। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ধীরস্থির ভাবে সংবিধানের ভিতরে থেকে কিভাবে ৭ দফার কিছু দাবী পূরণ করে অংশগ্রহণমূল নির্বাচন করা যায় তা তুলে ধরেন। ১৪ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতারা নিজেদের মতো বক্তব্য দিলেও ড. কামাল হোসেন দলমতে উর্ধ্বে উঠে বলেন, ‘ঐক্যমত হলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সমাধান সম্ভব। খোলা মনে বসে আলোচনা করে সব সমাধান হবে। সংবিধানে যে লক্ষ্যগুলো আছে সেগুলো সামনে আনতে হবে। দু’পক্ষকে ছাড়া দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠীর স্বার্থ নয়; জনগণের স্বার্থেই, জাতীয় স্বার্থেই এগিয়ে যেতে হবে। যে দাবিগুলো সংলাপে দিয়েছি সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। গেলাম আর সব নিয়ে এলাম বিষয়টা এমন নয়’। অতএব সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে ক্ষমতাসীনদের সংবিধানের ভিতরে থেকেই ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবী মেনে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি কঠিন নয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকেও তফসিল পেছানোর দাবী জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ করা হয়েছে।
সংলাপের হিড়িক
দেশের দ্ইু জায়ান্ট রাজনৈতিক শক্তির সংলাপ নিয়ে যখন সর্বস্তরে আলোচনা বিতর্কের ঝড়; তখনই শুরু হয় সংলাপের হিড়িক। সব দলই যেন সংলাপ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সংলাপ করেছে। এরশাদের জাতীয় পার্টি, বাম দলগুলোসহ আরো কিছু জোটের সংলাপের প্রক্রিয়া চলছে। গণভবনে বি চৌধুরীর নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেতা নেতাদের ‘রাজনৈতিক অবস্থান ও পরিচিতি’ দেখে বোঝা যায় সংলাপ পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেছে। বি চৌধুরীর নেতৃত্বে সংলাপে বেশ কিছু দাবী তুলে ধরা হলেও তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের মতের দূরত্ব তেমন নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, শেখ হাসিনা ও ড. কামাল হোসেনের সংলাপকে হালকা করতেই পরিকল্পিতভাবে সংলাপের এই অপ্রয়োজনীয় হিড়িক সাজানো হয়। ৫ নভেম্বর এইচ এম এরশাদের সঙ্গে সংলাপ। এরশাদ বলেছেন, আমি চা খেতে যাব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সংলাপে আমার দাবি হবে একটাই, কত আসন দেবেন? যদি পর্যাপ্ত আসন দেয়, তবে আমরা মানবো। আমার মনে হয়, তারা আমাদের দাবি মানবেন’। প্রতিদ্ব›িদ্ব দলের সঙ্গে সংলাপ হয় কিন্তু শরীক দলের সঙ্গে এ ধরণের সংলাপের কী প্রয়োজন আছে? এরশাদ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করবেন। তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ গৃহপালিত বিরোধী দল নেতা। দলের তিনজন নেতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। গত ৫ বছর দলকে কার্যত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে পরিণত করেছেন। যার সঙ্গে নিত্য দেখা এক সঙ্গে সরকারে; এক সঙ্গে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন; তার সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন পড়লো কেন? এই প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সমর্থক বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, ‘আগেই এরশাদ বলেছেন ১৪ দল বমান ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ ব্যর্থ হবে। সংলাপ সফল হলে বেশি লুজার হবে জাতীয় পার্টি। তাই এরশাদের এ বক্তব্য। আবার যাতে সংলাপ ব্যর্থ হয় সেই প্রচেষ্টাও তিনি চালাবেন তার অতীত কর্মকান্ড থেকে বোঝা যায়। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত না নেয়ায় জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হতে পেরেছে। আবার বিরোধী দলের হয়েও মন্ত্রিসভায় আছে তিনজন নেতা। মূলত এরশাদকে সংলাপে ডাকা কিছুটা ললিপপ দেয়ার মতো। আপনি ঐক্যফ্রন্টের সাথে কথা বলবেন আর বিরোধী দলের সাথে কথা বলবেন না এটা হয় না। এটা আনেকটা খেলা।’ নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এরশাদ হলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তার সঙ্গে দিনে তিন থেকে চারবার দেখা হয়, তার সঙ্গে সংলাপ কিসের? আপনারই বিরোধী দলের নেতা, সংসদে দেখা হয়। তার সঙ্গে সংলাপ কী? আপনার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী, তার সঙ্গে সংলাপ কিসের? ঐক্যফ্রন্টের সংলাপকে ছোট করার জন্য, ফালতু করার জন্য অনেককেই ডাকা হচ্ছে। ক্ষমতায় বসে এসব রং তামাশা হচ্ছে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।