Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণভবনে সংলাপ, আশা জাগিয়ে নিরাশায় শেষ

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সমস্যা কেটে যাবে : প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

০১/১১/১৮ তারিখ রাতে গণভবনে সংলাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই চলছে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে সকল শ্রেণি-পেশার রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা আর পর্যালোচনা হচ্ছে। যে যার মতো সংলাপের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতার নানা দিক খতিয়ে দেখছেন। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের এখানে-সেখানে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে গত ২৮ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের সংলাপের চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সরকারের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার এ সংলাপ ছিল দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই প্রত্যাশিত।
অবশেষে এই সংলাপের পর এর ফলাফল নিয়ে এক ধরনের হতাশার সুর বেরিয়ে আসছে। আগামীতে সুষ্ঠু অবাধ একটি নির্বাচনের পরিবেশসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের পথে আশার আলোর ঝলকানি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সংলাপ শেষে তা পুনরায় নিরাশার অন্ধকারের দিকেই যেন ধাবিত হতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আশা জাগিয়ে তা নিরাশায় শেষ হতে চলেছে। এ নিয়ে মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। সবার মুখে ঘুরেফিরে উঠে আসছে সেই একই কথা আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা কোথায়?
চাটগাঁর রাজনীতি সচেতন মানুষের মাঝে ঢাকার সংলাপের পুরো বিষয়টিকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে সংশয়-সন্দেহ আর ধোঁয়াশা। অনেকেই বলছেন, কী হতে কী হয়ে গেলো! তবে এই হতাশার মাঝেও অনেকে আশাটুকু জিইয়ে রেখে বলছেন আওয়ামী লীগ সরকার ‘না’-এর অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপে বসেছে সেটাই তো কম কথা নয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শিগগিরই আবারও সংলাপ হতে পারে। যদি উভয় পক্ষের সদিচ্ছা থাকে। এখনও আশার আলো নিভে যায়নি।
আবার অনেককেই বলতে শোনা গেছে, দেশের সাধারণ মানুষ এই সংলাপ থেকে অনেক কিছুই আশা করেছিল। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন সবার অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে এবং দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হবে এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু জনগণের সেই প্রত্যাশা উপেক্ষিত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া ৭ দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য সংলাপের টেবিলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ এবারের সংলাপটি অতীতের সেই তারানকো, নিনিয়ান, কার্টার মিশনের মতো মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে বসেনি।
ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলামসসহ সরাসরি শীর্ষ জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যকার এই সংলাপটি জনগণ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখতে চেয়েছেন। সংলাপের আহ্বান থেকে গণভবনে সংলাপ টেবিলে আলোচনার পরিবেশ আগাগোড়াই ছিল আন্তরিক, সৌহার্দপূর্ণ এবং খোলা মনের। এর ফলে সেখান থেকেই সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের ইতিবাচক মোড় ঘুরে দেওয়ার মতো একটি সন্তোষজনক সুরাহা-সমাধানের মহাসুযোগের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। যা দৃশ্যত আপাতত হাতছাড়া হয়ে গেছে। এমনটি সুযোগ বিশেষত রাজনীতির অঙ্গনে বারে বারে আসেনা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সংলাপের ফলাফল প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, প্রথম বৈঠকেই সমাধান তো আশা করা যায়না। সংলাপ শুরু হয়েছে তা চালু থাকুক এটাই সকলের প্রত্যাশা। সংলাপের মাধ্যমে আশা করি দেশে আগামীতে সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সমস্যার জট কেটে যাবে। তাই সংলাপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। সংলাপ আগামী নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। তিনি মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি-দাওয়া নিয়ে সামনে বৃহৎ পরিসরে না হলেও আরও ছোট পরিসরে সংলাপ বসতে পারে।
সংলাপের আলোচনা ও ফলাফল প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কলামিস্ট-লেখক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, এই সংলাপ কার্যত অর্থহীন হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির এক দফাও তো পূরণ করা হলো না। অথচ সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার নীতি হলো কিছু মানবো, আরও কিছু নিয়ে আলোচনা চলবে, সমাধানও বেরিয়ে আসবে। সংলাপের নামে জাতিকে শুধুই উৎকণ্ঠায় ফেলে রেখে, আশা দেখিয়ে হতাশ করা হলো। সময়ক্ষেপণের জন্যই অর্থহীন এই সংলাপ।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অভিমত ব্যক্ত করেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসনসহ সবকিছুই যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে নির্বাচন যদি অনুষ্ঠিত হয় তাহলে এ সরকারই অনন্তকাল ধরে ক্ষমতায় থাকবে। আর কেউ আসতে পারবে না। তবে কিছু সিট জিতবে যাদেরকে এখানে সেখানে কে কয়টা আসন পাবে তা ঠিকঠাক করে দেয়া হয়। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন এ সরকারের মেয়াদের শেষে এসে কেন হঠাৎ করে একে একে সংলাপের আমন্ত্রণ? জাতীয় পার্টিকেও নাকি সংলাপে ডাকা হয়েছে। তারা তো মন্ত্রী-উপদেষ্টা পদ নিয়ে সরকারের ভেতরে আছেই। গাছেরটাও খাচ্ছে তলারটাও কুড়াচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংলাপ

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ