Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পলিথিনের তাঁবুতে জীবন!

মো. রেজাউল করিম, দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) থেকে: | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভিটে বাড়িতে পলিথিনের তাঁবু। দেখতে অনেকটা অস্থায়ী বিশ্রামাগার। অর্ধেকে শোবার জন্য চৌকি রাখা। পাশের অর্ধেকে একটি গরু রাখার জায়গা। বলা চলে সংযুক্ত গোয়াল ঘর। রোদের তাপ, শীতের উষ্ণতা আর বৃষ্টির ফোটা সহজেই ভেতরে ঢোকে। নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। এমন একটি ঝুঁপড়িতে গত চব্বিশ দিন ধরে বসবাস করছেন রেহেনা বেগম (কুলসুম) নামের ৬২ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা। পাশের আরেকটা চৌকিতে থাকছে ৩৫ বছরের ছেলে মোশারফ। ১০ বছর বয়সি নাতি আসলামও থাকে ওদের সাথে। শিশু আর নারিসহ তিনজনের থাকার জায়গা এই পলিথিনের একমাত্র ঝুঁপড়িটি।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কড়াইল-স্বল্পবড়টিয়া গ্রামে নজরে পড়ল বৃদ্ধার এমন এক আশ্রয়স্থল। উন্নয়নশীল এই দেশে যেখানে সরকার ঘরহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দিচ্ছে সেই দেশে আজকের দিনে এমন অমানবিক দৃশ্য অনেকেরই নজর কেড়েছে। নানা শ্রেণির মানুষ কুলসুমের ঘরটি দেখতে গেলেও কারও মানবিক নাড়া লক্ষ্য করা যায়নি।
সরজমিনে গিয়ে কথা হয় কুলসুম বেগমের সাথে। গ্রামের সহজ সরল নারি রেহেনা বেগম। বছর হলো বিধবা হয়েছেন। স্বামীর নাম স্ত্রীর মুখে আনা যাবেনা এমন বিশ^াস এযুগেও রেহেনার মধ্যে রয়েছে। অন্যকে দিয়ে স্বামীর নাম জানালেন ‘সোনা মিয়া’। গত বছরের এই দিনে মারা গেছেন সোনা মিয়া জানালেন রেহেনা বেগম। কথায় কথায় বেড়িয়ে এল কুলসুম বেগমের অনেক আক্ষেপের কথা।
দিনমুজুর আর মাটি কাটার কাজ করে উপার্জন করতেন সোনা মিয়া। তখন থেকেই কুলসুম আর সোনা মিয়ার পরিবারে অসচ্ছলতা। গত বছর অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি। এরপর তাদের ছেলে মোশারফও মাটি কেটে সংসার চালাতো। জোড়া তালির ছোট একটি ঘর থাকলেও তার অল্প আয়ে সংসার না চলায় ঘরটি বিক্রি করে দেয়। পরে মা, ছেলে, নাতি সবাই চলে যায় টাঙ্গাইল সদরের কাকুয়া চরে মোশারফের শশুর বাড়ি। মোশারফের স্ত্রী আছমা পরিবারের একমাত্র সম্বল দুটি গরু রেখে মা-ছেলেকে তাড়িয়ে দেয়। কুলসুম বেগমের নাতনী মরিয়ম মায়ের কাছে থেকে গেলেও বাবার সাথে চলে আসে শিশু আসলাম। এরপর থেকেই ওই ঝুপড়িতে ওরা তিনজন থাকছেন। এমন দৃশ্য দেখেও সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রকার সহযোগিতা মেলেনি কুলসুম বেগমের ভাগ্যে। সরকার ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিলেও তিনি পাইনি সরকারি ঘর। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি। না বয়স্ক ভাতা। না পেয়েছে ন্যায্যমূল্যের চাউলের কার্ড। না ভাগ্যে জুটেছে ভিজিডি কার্ড। যদিও মঙ্গলবার প্রতিবেশি আরজু মিয়া ধার স্বরুপ একটি ৫সিট টিনের একচালা ঘরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবুও ছেলে নাতি আর নিজের জন্য ওটাও যথেষ্ট হবেনা।
কুলসুম বেগমের পলিথিনের ঘরটি স্থানীয়দের নজরে আসলেও বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের। দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম সাচ্চু জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে কিছু জানাননি। উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিনামুল্যে ঘর বিতরণের তালিকা মুলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। দেলদুয়ারে প্রায় ৫শ’ ঘর বিনামূল্যে নির্মাণ হলেও এদের মতো মানুষ বাদ পড়াটা দুঃখজনক। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ^াস দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাদিরা আখতার জানান, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না, একটি মানুষ ঘরবিহীন থাকবেনা সেখান এমনটা কেন হবে অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ