মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই’তে (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) মঙ্গলবার মধ্যরাতে দফায় দফায় তল্লাশির পর দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়ে যেভাবে নাগেশ্বর রাওকে দায়িত্বে নিয়ে আসা হলো সেটাকে এক ধরনের ‘অভ্যুত্থান’ বলছেন বিশ্লেষকরা। গত কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা ‘যুদ্ধে’ বিরতি টানতে শেষ পর্যন্ত বুধবার ছুটিতে পাঠানো হল সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা এবং সিবিআই উপপ্রধান রাকেশ আস্তানাকে। অন্তর্বর্তীকালীন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছেন এম নাগেশ্বর রাও। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটি মঙ্গলবার রাতেই জানিয়ে দেয়, “নাগেশ্বর রাও এখন থেকে সিবিআই ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করবেন।”
এছাড়া রাতেই ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং ডেপুটি ডিরেক্টর রাকেশ আস্তানার অফিস ‘সিল’করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তল্লাশি চালানো হচ্ছে তাদের অফিসেও। একই সঙ্গে, যে সব অফিসার এই দুই সিবিআই শীর্ষকর্তার সঙ্গে সরাসরি কাজে যুক্ত, ছুটিতে পাঠানো হয়েছে তাদেরকেও। জানা গিয়েছে, এই দুই শীর্ষকর্তার চলতে থাকা রেশারেশিতে লাগাম টানতে চিফ ভিজিল্যান্স কমিশনার দু’জনকেই সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরামর্শ দেন। সিবিআই প্রধান ও উপপ্রধানকে ডেকে নিজে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এর পরই জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে দেওয়া হল তাদেরকে।
দেশের অন্যতম তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর এই গৃহযুদ্ধের খবর প্রকাশ্যে আনায় বিড়ম্বনায় পড়েছে মোদী সরকার। দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখে বুধবার সরকারের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানে তিনি বলেন, “দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই শীর্ষকর্তাকে ছুটিতেই থাকতে হবে।”
উল্লেখ্য, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশি মামলার তদন্তকে কেন্দ্র করে প্রায় সমান দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল সিবিআই। মঙ্গলবার সিবিআই দফতরে সিবিআই অফিসাররাই আস্তানার ঘনিষ্ঠ অফিসার দেবেন্দ্র কুমারকে গ্রেফতার করেন। আস্তানার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে আগেই। অলোক তাকে সাসপেন্ড করার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় সম্ভাব্য গ্রেফতারি এড়াতে এ দিন আগাম দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আস্তানা। মঙ্গলবার মধ্যাহ্ন বিরতির পরে বিচারপতি নাজমি ওয়াজিরির বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। দু’পক্ষের শুনানির পরে বিচারপতি সাত দিন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। ওই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে না আস্তানাকে। তবে তদন্ত যেমন চলছে, চলবে। আস্তানাকে তার মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অন্য সমস্ত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আস্তানা বর্মার বিরুদ্ধে যে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন, সে বিষয়ে জবাব চেয়ে সিবিআই প্রধান, সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর ও পার্সোনেলকে নোটিস পাঠিয়েছে আদালত।
নাগেশ্বর রাও দায়িত্ব হাতে নিয়েই ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল মণীশ সিন্হা-সহ আস্তানার গোটা টিমকে সরিয়ে দেন। তদন্তকারী অফিসার অজয় বাসসিকে পোর্ট ব্লেয়ারে বদলি করে দেওয়া হয়েছে এ দিন। গত এক মাস ধরে সিবিআই শীর্ষকর্তাদের মধ্যে কার্যত গোষ্ঠী লড়াই চলছিল। ঘুষকান্ডে আস্তানার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। আস্তানাকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নোটিসও জারি করেন অলোক বর্মা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চে অলোক বর্মার দাখিল করা মামলাটির শুনানি হবে শুক্রবার। গতকাল বুধবার প্রশান্তভূষণ ও বর্মা এক নম্বর আদালতে দাবি করেন, অন্যায়ভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সূরজেওয়ালা দাবি করেন, গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে সিবিআই-এর স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সিবিআইকে- ‘বিবিআই’ বলে একটি টুইট করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বলে কটাক্ষ করেন তিনি। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টুইটারে কটাক্ষ করেন। তার উত্তরে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র জিভিএল নরসিংহ রাও বলেন, “রাহুল গান্ধী কদর্য রাজনীতি শুরু করেছেন। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই গণতন্ত্র রক্ষার্থে সচেষ্ট।” সিপিএম-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও অভিযোগ করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বেআইনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল টুইট করেন, মোদী সরকার কী লুকানোর চেষ্টা করছে? রাফালে চুক্তির সঙ্গে বর্মাকে সরানোর সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা, লালুপ্রসাদ যাদব পুত্র তেজস্বী যাদব কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিবিআই) কটাক্ষ করে টুইট করেছেন, “কেজড ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ ও ‘করাপ্ট ব্রোকার্স অব ইন্ডিয়া’ বলে। মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার কে ভি চৌধরি মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বর্মা ও আস্তানার ‘বাধ্যতামূলক ছুটি’ সংক্রান্ত বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, নাগেশ্বর রাওকে সেই জন্যই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান রাজনৈতিক মহলের। তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গেল জেলার বাসিন্দা নাগেশ্বর ১৯৮৬ সালের আইপিএস অফিসার। সূত্র : টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।